ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩ মে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী আল সাবাহ আসছেন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ এপ্রিল ২০১৬

৩ মে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী আল সাবাহ আসছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে জনশক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে ঢাকা সফরে আসছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। তিনি আগামী ৩-৫ মে তিন দিন ঢাকা সফর করবেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সূত্র জানায়, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এশিয়ার পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশের পর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এ সফর করছেন। সফরের বিস্তারিত কর্মসূচী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশে নিযুক্ত কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ হায়াত তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচী চূড়ান্ত করতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বাংলাদেশ কুয়েত থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। আমদানি করা অপরিশোধিত তেল শোধন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার গড়ে তোলার জন্য কুয়েতের সহায়তা চাওয়া হতে পারে। এদিকে বিশ্বে তেলের দাম কমতে থাকায় কুয়েতের অর্থনীতি এ মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হয় সে বিষয়ে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ, কুয়েতের অর্থায়নে তেল শোধনাগার স্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাজ করছে। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতেই আজ বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির লক্ষ্যে ১৯টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাব তুলে ধরতে বলা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেসব প্রস্তাবনা থেকে চূড়ান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে কুয়েতের অর্থায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কুয়েত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শ্রমবাজার। তবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়ার হার কমে গেছে। ১৯৭৬ থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিকের কুয়েতে কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৬৫৮ জন নারী। ২০০৬ সালেও দেশটিতে ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশ করে। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধীরে ধীরে শ্রমিক পাঠানো কমে যায়। এ সংখ্যা এখন বাড়াতে চায় সরকার। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭৩ সালে কুয়েত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর এই দুই মুসলিম দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার দৃঢ় ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেই আস্থা এখনও অটুট রয়েছে। এর আগে দুই দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। রাশিয়া ও ইরান অব্যাহতভাবে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন-চার বছর বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের এই পতন অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী। কম মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়া কুয়েতের অর্থনীতির জন্য অগ্রাধিকার হওয়ায় এমন কর্মী পাওয়ার জন্য বাংলাদেশই সবচেয়ে ভাল স্থান বলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি মনে করে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহর এ সফর বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। প্রাথমিক কর্মসূচী অনুযায়ী, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে পারেন। তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ রাষ্ট্রীয় অপরাপর আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করতে পারেন। কুয়েতে বর্তমানে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। দেশটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×