স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগিয়ে গেল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মধ্য দিয়ে। ‘ইস্টার্ন রিফাইনারির ইউনিট-২’ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। বাংলাদেশের বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ভারতের পেট্রোলিয়াম ও ন্যাচারাল গ্যাস প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের উপস্থিতিতে ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট’ নামে এই প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় এ প্রতিষ্ঠানের তদারকিতে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্প। ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হলে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৭৬ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত এই স্থাপনাটি দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল শোধন করেছে। একটি ইউনিট দিয়ে দেশের জ্বালানি চাহিদার এক-চতুর্থাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়। জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ বাস্তবায়িত হলে দেশের জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আর এ পরিমাণ জ্বালানি দেশে পরিশোধিত হলে বাৎসরিক ৩শ’ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
মঙ্গলবার সকালে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড কার্যালয়ে স্বাক্ষরিত হয় এ চুক্তি। এতে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইআইএল-এর নির্বাহী পরিচালক (মার্কেটিং) উপেন্দ্র মহেশ্বরী ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (প্রশাসন) মোসলেম উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা, বিপিসি চেয়ারম্যান মাহমুদ রেজা খান এবং সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিদেশী মুদ্রায় ১ দশমিক ৭ মার্কিন ডলার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভারতের ইআইএল পাবে ১০০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজ শুরু হলে তিন বছরের মধ্যেই তা শেষ হবে। প্রকল্পটি কারা বাস্তবায়ন করবে এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখনও চূড়ান্ত না হলেও ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ফরাসী এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। দরপত্রের ভিত্তিতে ভারতের ইআইএলকে সবচেয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বেছে নিয়ে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির এ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি জানান, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইআইএল বিশ্বখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুষ্ঠু, সুন্দর ও মানসম্পন্নভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
ভারতের পেট্রোলিয়াম ও ন্যাচারাল গ্যাস প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও বাংলাদেশের বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। প্রথমে তারা পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বন্দর। তারা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ এবং বন্দরের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বন্দরের সক্ষমতা ও বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন ।