ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমবে বাজেটে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২০ এপ্রিল ২০১৬

ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমবে বাজেটে

এম শাহজাহান ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। জ্বালানি তেল আমদানিতে আর কোন ভর্তুকি নয়, আর বিদ্যুত খাতের সক্ষমতা বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানো হবে। কৃষিতে দুই হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কমানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সেখানে বরাদ্দ কমানো হবে। বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন এবং সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহারের লক্ষ্যে ভর্তুতি ও প্রণোদনা প্রদান খাতে আর অতিরিক্ত বরাদ্দ না দিতেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চলতি বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ১৬ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ভর্তুকির পরিমাণ আরও কমানো হচ্ছে। বহির্বিশ্বে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এ খাতে এমনিতে আর অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুত খাতের সক্ষমতা বাড়িয়ে এ খাতেও ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। যদিও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগাম ঘোষণা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় আগামী বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। চলতি বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এদিকে, কৃষিতে বরাবরই বড় অঙ্কের ভর্তুকি প্রদান প্রদান করা হলেও আগামী বাজেটে তা কাটছাঁট করে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। জনপ্রশাসন খাতে চলতি বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে চার হাজার ৯০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আসছে বাজেটেও এ খাতে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতে আর ভর্তুকির প্রয়োজন নেই। এছাড়া কৃষিতে চলতি বাজেটে বরাদ্দকৃত পুরো টাকা খরচ করা যায়নি। তাই এ খাতেও বরাদ্দ আর না বাড়িয়ে কমানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাট শিল্পের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু চিনির ভবিষ্যত দেশে খুব ভাল নয়। মিল মালিকরা এখানে রিফাইন্ড করে চিনি উৎপাদন করে কম দামে দিতে পারছেন। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন করতে গেলে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। তাই চিনি শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তবে দেশে পাটের ভবিষ্যত খুব ভাল। আগামী বাজেটে তাই পাট শিল্প উন্নয়নে তাগিদ দেয়া হবে। জানা গেছে, ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলো গত কয়েক বছর ধরে পরামর্শ দিয়ে আসছে। ফলে অতিপ্রয়োজনীয় খাত ছাড়া আগামী বাজেটে ভর্তুকি নিরুৎসাহিত করা হবে। বাজেট প্রণয়নে অর্থ মন্ত্রণালয় এবার ভর্তুকির বিষয়টি নিয়ে কড়া হিসাব-নিকাশ করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া কৃষির পাশাপাশি রফতানি উৎসাহিত করতে ও গরিব জনগণের কাছে কম দামে খোলা বাজারে খাদ্যপণ্য (চাল, আটা) বিক্রি করতে এ দুটি খাতে আগামীতেও ভর্তুকি অব্যাহত থাকছে। তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য খাতে ভর্তুকি নিরুৎসাহিত করা হবে। এছাড়া বাজেট ঘাটতি মাথায় রেখে ভর্তুকি কমানোর বিষয়টি আসতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি অর্থমমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা ভর্তুকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো বা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
×