ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে জমে উঠেছে বোম্বাই মরিচের হাট

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২০ এপ্রিল ২০১৬

বরিশালে জমে উঠেছে বোম্বাই মরিচের হাট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বোম্বাই মরিচ। রসনাবিলাসী বাঙালীমাত্রই ভর্তা কিংবা ডালসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারে স্বাদ ও সুঘ্রাণ বাড়িয়ে দেয়া এ মরিচ পছন্দ করেন। দেশী-বিদেশী অনেকের কাছে ঝাল ও গন্ধে অনন্য এ মরিচের চাহিদা বহুকাল ধরেই। বর্তমানে বিপুল চাহিদা থাকা এ মরিচ বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে। বর্তমানে বৃহত্তর বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বেশকিছু গ্রামে এ মরিচের চাষ হচ্ছে। এসব এলাকায় এ মরিচের ফলনও হয় বাম্পার। এদিকে বোম্বাই মরিচ বিক্রির জন্য বিখ্যাত ঝালকাঠির নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নে আদমকাঠি ভাসমান ও স্থল বাজার। পেয়ারা ও সবজির ভাসমান পাইকারি বাজার হিসেবেখ্যাত হলেও বর্তমানে বোম্বাই মরিচের বাজার হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ ভাসমান বাজার। বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকে এ বাজারে নিজেদের ক্ষেতের মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকরা। প্রতি সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার বসে এ বোম্বাই মরিচের হাট। হাটবারে পুরো হাটজুড়ে নানা আকৃতির ঝাকা ও ঝুড়িতে গাঢ় সবুজ ও লাল রঙা বোম্বাই মরিচ বিকিকিনি হয়। হাটে আনা মরিচের স্থানীয়ভাবে বিচিত্র নামও রয়েছে। এসব নামের মধ্যে কামরাঙা, লকোট মরিচের ঘ্রাণ ও ঝাঁজ তুলনামূলক বেশি। হাটে ওঠানো বোম্বাই মরিচ কিনে নিয়ে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এমনকি এ হাটের মরিচ এখন দেশের বাইরেও পাঠানো হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে বোম্বাই মরিচের দাম ভাল হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের অনেকে কম দামেই বিক্রি করেন এ মরিচ। কুড়িয়ানার আদমকাঠি হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা ঝালকাঠির ১নং গাবাচন্দ্রপুর শাওরাকাঠী গ্রামের দিলীপ সরকার জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা মাঘ মাসের শেষ দিকে ক্ষেত থেকে মরিচের ফলন পেতে শুরু করেন। মৌসুমের শুরু হওয়ায় সে সময় দাম কিছুটা চড়া থাকে। টানা কয়েক মাস চলে মরিচের ফলন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে মরিচের মৌসুম শেষ হয়ে আসে। তখনও দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে ঝের সময়টাতে মরিচের দাম স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কমই থাকে। স্থানীয় এ মরিচ চাষি আরও জানান, যখন মরিচের উৎপাদন বেড়ে যায় তখন বাজারে দাম পড়ে যায়। মৌসুমের শুরুতে ১০০ বোম্বাই মরিচ এক থেকে দুই’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে তা নেমে যায় ২৫ থেকে ৬০ টাকায়। বরিশালের বানারীপাড়ার গাবা এলাকা থেকে হাটে মরিচ নিয়ে আসা সুব্রত বিশ্বাস জানান, তিনি এবার ১ একর জমিতে ৩ হাজার মরিচ গাছের চারা রোপণ করেছেন। মৌসুমের শুরু থেকেই ফলন ভাল পাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এখনও ভাল ফলন অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, প্রতি ১৫ দিন পর পর ক্ষেত থেকে মরিচ তুলছেন। এ হাটে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ হাজার পিস বড় সাইজের বোম্বাই মরিচ নিয়ে আসেন তিনি। এর দর শ’প্রতি ৮০ টাকা আশা করলেও বাজারে আমদানি বেশি থাকায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন। আটঘর এলাকার চাষী পুলীন দেওরী জানান, তিনি এবার ৫০০ মরিচ গাছের চারা রোপণ করেছেন। তার মরিচ উন্নতমানের। এর বীজ নিজ ক্ষেত থেকেই সংগ্রহ করেন তিনি। হাটে মরিচ কিনতে আসা বেপারি আব্দুল হক জানান, দক্ষিণবঙ্গের আর কোথাও মরিচের এতো বড় হাট বসে না। তাছাড়া এখানে দামে কম ও ভালমানের মরিচ পাওয়া যায়। এখান থেকে মরিচ ক্রয়ের পর সেগুলো ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, গত ২৫ বছর ধরে এ হাট থেকে নিয়মিত তিনি মরিচ ক্রয় করছেন।
×