ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ভবিষ্যত অন্ধকার

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২০ এপ্রিল ২০১৬

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ভবিষ্যত অন্ধকার

শ. আ. ম হায়দার, পার্বতীপুর ॥ দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে প্রায় এক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ। খনি রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) খনি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেন। খনি সচল করতে খনি কর্র্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার মূল্যমানের ৩৬টি এলসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির অনুকূলে স্থাপন করেছে। আমদানিকৃত ভারি যন্ত্রপাতিসমূহ আসছে চীন, রাশিয়া ও অস্ট্রিলিয়া থেকে। খনি সূত্রমতে এলসির মালামাল আমদানির জন্য ৬ মাস সময় নির্ধারণ ছিল। তবে জিটিসি এ সময়ের মধ্যে একটি ইনভয়েসের মালামাল সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে এসেছে স্টোপ উন্নয়নের প্রধান খনন যন্ত্র রেইজ বোরিং মেসিন। কিছু মালামাল রয়েছে সমুদ্র পথে। খনির অচল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, চুক্তির আওতায় মালামাল ক্রয়ের জন্য জিটিসি সর্বমোট ৭৯টি প্রোফরমা ইনভয়েস ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দাখিল করে। তার মধ্যে ৪৩টি প্রোফরমা ইনভয়েসের মালামাল স্থানীয়ভাবে ক্রয় করে। অবশিষ্ট ৩৬টি প্রোফরমা ইনভয়েসে উল্লিখিত যন্ত্রপাতি ও তথ্যগত ত্রুটিজনিত কারণে সংশোধনে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। জিটিসি চলতি সালের ৪ জানুয়ারি ও ১৭ মার্চ পর্যায়ক্রমে খনির মালামাল আমদানি ও অপারেশন কাজ শুরুর সময়সূচী প্রদান করে। তবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কতদিনে সমুদয় মালামাল পৌঁছে খনির উৎপাদন শুরু হবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি বিপুল আয় থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে খনির কাজে নিয়োজিত প্রায় ৮০০ কর্মহীন শ্রমিকের মানবেতর অবস্থা। পক্ষান্তরে জিটিসি বলেছে খনি কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত তথ্য সঠিক নয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হতে ১ সিফটে শিলা উত্তোলন শুরু হয়। প্রয়োজনীয় নতুন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের অভাব থাকা সত্ত্বেও পূর্বের স্থাপনকৃত পুরনো ও ব্যবহার অযোগ্য যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যে তারা ৩ সিফটে সাড়ে ৪ হাজার মে. টন কঠিন শিলা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে খনির উন্নয়ন কার্যক্রম এবং নতুন স্টোপ নির্মাণে বিদেশী ভারি খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনুমোদনের জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা হয়। ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিতব্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের অনুমোদন দেয়ার নিয়ম থাকলেও খনি কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের নবেম্বরে প্রায় এক বছর পর অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণপত্র খুলে দেয়। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এবং পেট্রোবাংলার সর্বোচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের লিখিত চিঠির মাধ্যমে জানানো হয় যে, খনির সার্বিক অবস্থানের উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশের অনুমোদন এবং ঋণপত্র খোলার কাজ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা না হলে খনি কার্যক্রম যে কোন মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন সতর্কবার্তা দেয়ার এর পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েন। যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আসতে ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। সে কারণে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মৌখিক ও লিখিতভাবে খনি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় । তবে দুর্ভাগ্য যে তারা এতেও কর্ণপাত করেননি। উৎপাদন বন্ধ থাকায় খনি রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদেশী মাইনরদের বেতন ভাতা চালিয়ে যেতে প্রতিমাসে জিটিসিকে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির দু’রকম বক্তব্যে যে চিত্র ফুটে ওঠে তা খনির জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়। প্রশ্ন উঠেছে অবস্থা যাই হোক মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি তথা পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাস্তব অবস্থার নিরিখে খনির উৎপাদন চালু রাখতে আগাম ব্যবস্থা নিলেন না কেন?
×