ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় উঠছে ডাটা সেন্টার কেনার প্রস্তাব

ই-জিপি বাস্তবায়নে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২০ এপ্রিল ২০১৬

ই-জিপি বাস্তবায়নে সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশে ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) বাস্তবায়নে শুরু থেকেই সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী সহযোগিতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আরও সহায়তা বাড়াচ্ছে সংস্থাটি। ফলে ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেশের সব সরকারী কেনাকাটা ই-জিপির আওতায় নিয়ে আসতে ডাটা সেন্টার ক্রয়ে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। নতুন এই ডাটা সেন্টার স্থাপন হলে সব সরকারী কেনাকাটা যুক্ত হবে ই-টেন্ডারিংয়ে। অন্যদিকে ডাটা সেন্টার কেনার প্রস্তাব আজ বুধবার উঠছে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। ডাটা সেন্টার ক্রয় বিষয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক ফারুক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ডাটা সেন্টার ইনস্টেলেশন এবং ডাটা মাইগ্রেশনের কাজ শেষ করা হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, নতুন এই ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হলে পুরাতনটি আর থাকবে না। সবগুলো তথ্য এই ডাটা সেন্টারেই থাকবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস সূত্র জানায়, ই-জিপি কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই ৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৮০ টাকা প্রতি ডলার ধরে প্রায় ৪৬৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের ঋণের মেয়াদ রয়েছে। আবার ই-জিপি কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে পুরো ই-জিপি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে আরও ছয় মাস অর্থাৎ আগামী বছর জুন পর্যন্ত ঋণের মেয়াদ এবং এই সময়ে অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এই অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে ডাটা সেন্টারসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরীন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ই-জিপি কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলায় শেষ পর্যন্ত সহযোগিতা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অতিরিক্ত ঋণের বিষয়ে নেগোসিয়েশনের কাজ চলছে চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে নেগোসিয়েশন হতে পারে। এরপরই বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদন হলেই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র জানায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করতে ৫০ কোটি টাকার বেশি কাজও যুক্ত হচ্ছে ই-টেন্ডারিংয়ে, যা বর্তমানে ৫০ কোটি টাকা নিচের কাজের ক্ষেত্রে চালু রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) এটি বাস্তবায়নের কাজ করছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ১০ কোটি টাকার বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পেশাগত সেবা ক্রয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, বড় সরকারী কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনও অনলাইনে করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ৫০ কোটি টাকার উর্ধে কেনাকাটা অনুমোদনে সরকারী ক্রয় কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। সরকারী ক্রয় কমিটি বৈঠকে কেনাকাটার প্রস্তাব স্ক্রিনে উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাটনে ক্লিক করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী লগ ইন করে সরকারী ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনলাইনে অনুমোদন দেয়ার সুযোগও রাখা হচ্ছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতি ও সব সদস্য কেনাকাটার প্রস্তাব লগ ইন করতে পারবেন। তারা প্রত্যেকে অনলাইনে ক্রয় প্রস্তাবটি দেখে তাদের সিদ্ধান্ত অনলাইনে জানাবেন। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি সেটি সমন্বয় করে নির্দিষ্ট বাটনে ক্লিক করে জানাবেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী লগ ইন করে অনলাইনে তা অনুমোদন করবেন। ২০১১ সালে চারটি সংস্থা স্বল্প পরিসরে ই-টেন্ডার কার্যক্রম শুরু করে। গত পাঁচ বছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ সংস্থায়। বাকি সংস্থাগুলোকে ই-টেন্ডারে আনতে রোডম্যাপ করেছে সিপিটিইউ। সেখানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ১ হাজার ২০০ সংস্থা পুরোপুরি এ পদ্ধতির আওতায় আনছে। সারাদেশে দরপত্র দাতার সংখ্যা বর্তমানে ১৮ হাজার। ইতিমধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা ই-টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয়েছে। কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে ৪০টি সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জানায়, অনলাইনে সরকারী দরপত্র আহ্বান থেকে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারবেন। এতে কেনাকাটায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা পুরোপুরি বন্ধ হবে। এসব দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারী সব কেনাকাটা ই-টেন্ডারের আওতায় আনা হচ্ছে। ই-টেন্ডার উন্নত বিশ্বের গাইড লাইন অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় কেনাকাটায় এ পদ্ধতি চালু হবে। সূত্র জানায়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় দেশে ই-জিপি বাস্তবায়ন করছে। তবে ই-জিপিতে এখনও ৫০ কোটি টাকার উর্ধে পূর্তকাজ ও পণ্য ক্রয় এবং ১০ কোটি টাকার উর্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা ক্রয় চালু হয়নি। সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) ৫০ কোটি টাকার উর্ধে ক্রয় কার্যক্রমের সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ। সিসিজিপির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত সিসিজিপির এ প্রক্রিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন যাতে অনলাইনে করা যায় সে লক্ষ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এই চিঠি লিখেছিলেন।
×