ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গণঅভ্যুত্থানে বড় বড় জোটে ভাঙ্গনের আশঙ্কা

বিশ্ব অর্থনীতি ॥ বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২০ এপ্রিল ২০১৬

বিশ্ব অর্থনীতি ॥ বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে

আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা, বিশ্ব অর্থনীতি বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গণঅভ্যুত্থান কয়েক দশকের পুরনো জোটে ভাঙ্গন ধরাতে যাচ্ছে; অথচ এসব জোটই অবাধ বাণিজ্যের বিকাশ ঘটায় এবং অর্থনৈতিক বন্ধন গভীরতর করে। এ উত্তেজনা ব্রিটেনে চরমে পৌঁছেছে। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করবে কিনা, তা নিয়ে দু’মাসের মধ্যেই ভোট দেবে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ওয়াশিংটনে গত সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত এর বার্ষিক বৈঠকে তথাকথিত ব্রেক্সিট (ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ) এক বাস্তব সম্ভাবনা বলে সতর্ক করে দিয়েছে। ব্রেক্সিট অনিশ্চিয়তার নতুন কাল বয়ে আনতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পথ ব্যাহত করতে পারে। কিন্তু অসন্তোষ কেবল যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেই সীমাবন্ধ নয়। ইইউ-বিরোধী দলগুলো ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে বিশেষত ফ্রান্স ও জার্মানিতে শক্তি অর্জন করছে, আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বার্নি স্যান্ডারস আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিগুলোর বিরোধিতা করছেন। আটলান্টিকের উভয়পাশের শিল্প শ্রমিকরা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছেন। তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন। তাদের হতাশা, বিশ্বায়নের নীতি যথা অবাধ বাণিজ্য ও উন্মুক্ত সীমান্তের নিন্দা করে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে; অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এসব নীতিকে সমৃদ্ধির পথ বলে স্বাগত জানানো হয়। বিশ্ব ব্যাংকের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার বলেন, যদি দেশগুলো বিশ্বায়নের পথ থেকে সরে যায় তা হলে আমরা খুবই নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব। অন্তত দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুটিয়ে ফেলা হলে প্রায় নিশ্চিতভাবে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। ব্রিটেনের ৪৩ বছরের ইইউ সদস্যপদের অবসান ঘটানো হলে দেশটিকে ইউরোপের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে বাণিজ্য, আর্থিক ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক চুক্তি করার জন্য নতুন করে আলোচনা করতে হবে। কেবল ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা দেখা দেয়াতেই পাউন্ডের মূল্যমান সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ইইউ ত্যাগের প্রশ্নে ব্রিটিশরা মোটামুটি দ্বিধাবিভক্ত এবং এক উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। চলতি মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সতর্ক করে দিয়েছে যে, ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের ফলে পাউন্ডের মূল্যমান আরও এক ধাপ পড়ে যেতে পারে, ঋণ সঙ্কোচন ঘটতে পারে এবং ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সুদের হার বাড়তে পারে। গবেষণা সংস্থা ওপেন ইউরোপের এক সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থার কথা বলতে গেলে, ইইউ থেকে বিদায় নেয়ার ফলে যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির হার ২০৩০ সালে শতকরা ২ দশমিক ২ ভাগ নেমে যেতে পারে। তবে এ বিদায় সুশৃঙ্খলভাবে কার্যকর করা হলে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে ব্রেক্সিট ইউরোপ জুড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলোর ওপর এভাবে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব ফেলতে পারে, তাও বিবেচনা করা হয়নি। ফ্রান্সে কড়া ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট আগামী বছর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে ইইউ সদস্য পদ প্রশ্নে গণভোট দেবে বলে সংকল্প ব্যক্ত করেছে। জার্মানিতে একটি উপদল দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে। মুডিস ইনভেস্টর্স সার্ভিসের বিশ্লেষক কলিন এলিস বলেন, আমরা মূলত খুবই দীর্ঘস্থায়ী এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, যেখানে বিশ্ব কী রূপ নিচ্ছে তা আমরা জানি না। আইএমএফের ম্যানেজিং জিরেক্টর ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এবং দরিদ্ররা আসলেই পেছনে পড়ে থাকছে বলে ঝুঁকি রয়েছে। এটি সংরক্ষণবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষের যুক্তিকে শক্তিশালী করবে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অনেক সমর্থকই শিল্প শ্রমিক। তাদের অর্থনৈতিক শ্রেণী কাঠামোর একেবারে নিম্নস্তরে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে তারা মনে করেন। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) মতে, ২০০০সাল থেকে যুক্তরাজ্যে শিল্প কর্মসংস্থানের হার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ শতকরা প্রায় ২০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×