ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করার আহ্বান

বিবর্ণ হচ্ছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ॥ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২০ এপ্রিল ২০১৬

বিবর্ণ হচ্ছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ॥ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন

বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের তালিকায় পৃথিবীর বৃহত্তম জীবন্ত বস্তু হলো অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল কলোনি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের উপকূল ঘেঁষে কোরাল সাগরে এর অবস্থান। কিন্তু এল নিনোর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রবাল প্রাচীরগুলো তাদের আসল রং হারিয়ে সাদা ও বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবালের বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার মাত্রায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অত্যন্ত স্থিরচিত্ত বিজ্ঞানীরাও। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে জাতিসংঘের ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ নানা রঙের শৈবালের জন্য বৈচিত্র্যময়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় শৈবালের মৃত্যু ঘটছে। ফলে প্রবালগুলো বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। দুই হাজার ৯০০ রিফ আর ৯০০ দ্বীপের সমন্বয়ে এটি গঠিত। তিন লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ রিফটি মহাশূন্য থেকেও দেখা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিযার ন্যাশনাল কোরাল ব্লিচিং টাস্কফোর্সের দাবি, উত্তর কুইন্সল্যান্ডের কেয়ার্নস থেকে পাপুয়া নিউগিনি পর্যন্ত অংশের ৯৫ শতাংশ জায়গাই ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অঞ্চলের ৫২০টি রিফের মধ্যে চারটি বাদে বাকিগুলোতে ক্ষয় শুরু হয়েছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী ও সংরক্ষণবাদীরা হুঁশিয়ার করে আসছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ও বিশ্বের অন্যান্য প্রবাল প্রাচীরেরও অস্তিত্ব রক্ষার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ব্যাপক বিবর্ণের মূল কারণ হলো এল নিনো। এটি উষ্ণ পানি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এল নিনো পরিস্থিতি আরও খারাপ ও আরও বার বার হবে। কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল চেঞ্জ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অভি হোয়েগ-গাল্ডবার্গ বলেন, বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রবাল প্রাচীরের যে ব্লিচিং শুরু হবে তাতে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতি হবে। এর আগে ১৯৯৮ সালে এল নিনোর প্রভাবে প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে প্রবাল প্রাচীরের ব্লিচিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তখন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অর্ধেকের বেশি প্রবাল আক্রান্ত হয় এবং শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ প্রবাল মরে যায়। গাল্ডবার্গ বলেন, ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার ব্লিচিংয়ের সময় ভাগ্যক্রমে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। কারণ ঝড়ের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা সে সময় কিছুটা কম ছিল। তবে এবার অর্থাৎ ২০১৬ সালে সেটা সম্ভব হবে না। এবারের এল নিনো আরও শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো কোরাল রিফ সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ান কোরাল রিফ সোসাইটির প্রধান প্রফেসর ডেভিড বুথ বলেছেন, তিনি এর আগে কখনও বিজ্ঞানীদের এত উদ্বিগ্ন দেখেননি। অস্ট্রেলিয়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মাদক চোরাকারবারিদের মতো আচরণ করছে। সরকার সব কয়লা বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি কী ক্ষতি হচ্ছে। পানি একবার ঠা-া হওয়া শুরু হলে এ বিশেষ ব্লিচিংয়ের ঘটনার অবসান হবে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না, কত প্রবাল মারা যাবে। -গার্ডিয়ান
×