ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যালয়ে ছাত্র নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২০ এপ্রিল ২০১৬

বিদ্যালয়ে ছাত্র নির্যাতন

বিদ্যালয়ে শিক্ষকের হাতে শিক্ষার্থীর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। পাঁচ বছর আগের একটি জরিপের উল্লেখ করা যাক। শিশু সংগঠন চাইল্ড পার্লামেন্ট একটি জরিপ পরিচালনা করে। ওই সংগঠনটিকে আর্থিক ও নানাবিধ সহায়তা দেয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়া। চাইল্ড পার্লামেন্ট শিক্ষা ও সুশাসন বিষয়ে ৬৪টি জেলার ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২৮০ জন শিক্ষার্থীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়। শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী। জরিপে ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে পাঁচ বছরে পরিস্থিতির উন্নতি কি হয়েছে? হয়নি। যদি হতো তাহলে খবরের কাগজে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ভয়াল চিত্র উঠে আসত না। তাছাড়া সব নির্যাতনের খবর সংবাদপত্রে আসেও না। শুধু ভয়ঙ্কর নির্যাতনের ঘটনাই মানুষ জানতে পারে মিডিয়ার কল্যাণে। যেমন গত কয়েকদিনে জেনেছে ফেনীতে ফ্যানে ঝুলিয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্র এবং রাজধানীর বিখ্যাত স্কুল উদয়ন বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রের ওপর নির্যাতনের খবর। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে শিশুর ওপর নির্যাতন বা নৃশংস, অমানবিক, মর্যাদাহানিকর আচরণ বা নির্যাতন না করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী আদেশ প্রদান করে। এ বিজ্ঞপ্তির ৩নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে দেশের প্রচলিত নারী নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ আইন অনুযায়ী শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশ্বের সব দেশেই এ আইন কঠোরভাবে মানা হয়। মূলত শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এ শব্দগুলোর সঙ্গে নির্যাতন নামক কোন শব্দই জড়িত থাকা উচিত নয়। সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করার পরও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন বন্ধের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায় না। শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেশি হলে অধিকাংশ অভিভাবককে প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায়। তবে কারও কারও কাছে বিস্ময়কর ঠেকলেও, এটাও সত্যের অপর পিঠ যে আপন সন্তানকে শাস্তি প্রদানের জন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন এমন লোক আমাদের সমাজের ভেতরেই বিদ্যমান। বাংলাদেশে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষককে পাঠদান করতে হয় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে। তাদের মাঝে কিছু শিক্ষার্থী খারাপ আচরণ করতেই পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীর এ আচরণ শিক্ষককে বিব্রত করে। তবে শিশুদের ওপর শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন অত্যন্ত নিম্ন রুচির কাজ। অনেক শিক্ষক, মা-বাবা মনে করেন শিশুর ভালোর জন্য কিছুটা শাসন জরুরী। কিন্তু শাসনের মাত্রা বেশি হলে তা শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। শিশুদের কোন আঘাত করা কিংবা চড় দেয়া এক ধরনের নির্যাতন। এটা শিশু অধিকার পরিপন্থী। সরকার শিক্ষাঙ্গনে শিশুদের নির্যাতন বন্ধে যথেষ্ট আন্তরিক এবং শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগে আগ্রহী। এখন শুধু প্রয়োজন সকলের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা। শিক্ষক যাতে শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারেন, এজন্য তাদের ট্রেনিং দেয়া যেতে পারে। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে রাখতে পারে বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা। জুনিয়র শিক্ষকদের ভেতর এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োগে বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় শিক্ষকরা রাখতে পারেন অনবদ্য ভূমিকা। শিশুরা বিদ্যালয়ে নির্ভয়ে যাক, আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার্জন করুক- শিক্ষকরা তাদের পাশে থাকুক মমতাময় অভিভাবকের স্নেহ নিয়ে, এটাই প্রত্যাশিত।
×