ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর শেষ চিহ্ন ॥ বহু টাকার রাজস্ব ফাঁকি

নওয়াব বাড়ি বিক্রি

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

নওয়াব বাড়ি বিক্রি

সমুদ্র হক ॥ অত্যন্ত গোপনে দলিলে কম মূল্য দেখিয়ে (আন্ডার ভেলুয়েশন) রেজিস্ট্রি করে সরকারকে বহু কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি হয়ে গেল বগুড়ার দেড় শ’ বছরের ঐতিহ্য তদানিন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর শেষ চিহ্ন বসতভিটা নওয়াব প্যালেস। বগুড়া রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়োগ করা কমিশন শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকায় গিয়ে দলিলে দাতার একাংশ ও ক্রেতার স্বাক্ষর গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন টেলিফোনে জানান, এই বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। প্রাচীন এই ঐতিহ্য বিক্রি হলেও সরকার ইচ্ছা করলে সংরক্ষণ করতে পারে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে প্রায় এক শ’ মিটার পূর্বে মূল সড়কের ধারে নওয়াবের টিকে থাকা অবকাঠামো, দুর্লভ জয়তুন ও কর্পূর বৃক্ষসহ ১ দশমিক ৫৫ একর ভূমি দলিলে ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকা মূল্য উল্লেখ করে বিক্রি দেখানো হয়। বগুড়া শহরের মূল কেন্দ্রে জমির বিক্রির যে দর সাদা চোখেই তার মূল্য অন্তত এক শ’ কোটি টাকা। অতি কম মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে সরকারকে কত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হলো হিসাব করে নিন। নওয়াবের এই বসতভিটা কিনেছেন বগুড়ার প্রথম সারির তিন ধনী। তারা হলেন বগুড়া চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাসুদার রহমান মিলন, সহসভাপতি শফিকুল হাসান জুয়েল ও সাবেক সহসভাপতি আব্দুল গফুর। বগুড়া রেজিস্ট্রি অফিস সূত্র জানায়, দলিলে স্বাক্ষর হয়েছে শুক্রবার তবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে রবিবার ১৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে। দলিলে দাতা স্বাক্ষর আছে মোহাম্মদ আলীর ৩ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ২ ছেলে সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও সৈয়দ হামদে আলীর। তারা মোহাম্মদ আলীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী হামিদা বানুর ছেলে। মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী লেবাননী মহিলা আলিয়ার এক ছেলে এক মেয়ে যথাক্রমে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও মাহমুদাকে না জানিয়েই গোপনে এই সম্পত্তি বিক্রি করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছর ১৪ জানুয়ারি সৈয়দ মাহমুদ আলী কানাডা থেকে বগুড়া এসে প্রেস কনফারেন্স করে তাদের বংশের শেষ বসতভিটা রক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। তারা আশা করেছিলেন প্রাচীন এই ঐতিহ্য প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরকে দিলে শেষ চিহ্নটুকু রক্ষা পাবে। নওয়াব প্যালেসের সম্পত্তি বেচা কেনার পালা শুরু হয়েছে অনেক আগে। এই প্যালেসের উত্তর ধারে কয়েক একর ওয়াকফ ভূমি বিক্রি করা হয়। যা কিনে নেয় বিড়ি ফ্যাক্টরির দুইজন মালিক ও একটি বেসরকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। সরকারী নিয়মে ওয়াকফ সম্পত্তি বেচা কেনা নিষেধ। তারপরও এই ভূমি বিক্রি হয়েছে। সেখানে তিনটি বহুতল মার্কেট গড়ে উঠেছে। প্যালেসের সামনের একাংশ বছর তিনেক আগে বগুড়ায় সৃষ্টিশীল শিল্পী আমিনুল করিম দুলালের (প্রয়াত) গড়া শিল্পের ভুবন কারুপল্লীসহ ৫০ শতাংশ ভূমি বিক্রি করা হয় বড় ব্যবসায়ী রানার গ্রুপের কাছে। সেই দলিলেও আন্ডার ভেলুয়েশনে মাত্র ৬ কোটি টাকা লিখা হয়। তখন ভূমিসহ ওই স্থাপনার দাম ছিল অন্তত ৪০ কোটি টাকা। সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল স্থাপনা। এখানেও রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সর্বশেষ টিকে থাকা ঐতিহ্যের স্থাপনাটি রক্ষার জন্য বগুড়ার সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ব্যক্তিত্ব ও সুধীজন আন্দোলন শুরু করে। তারা সরকারের কাছে ওয়াকফ সম্পত্তির এই স্থাপনা প্রাচীন ঐতিহ্য ও পূরাকীর্তি ঘোষণা করে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরে কাছে হস্তান্তরের দাবি জানায়। এই আন্দোলনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়। এই বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, প্রাচীন এই স্থাপনা সংরক্ষিত ও পূরাকীর্তি ঘোষণার একটি প্রস্তাবনা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
×