ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ নিতেই মুখিয়ে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক

কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহস হারান না ‘লড়াকু’ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহস হারান না ‘লড়াকু’ মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বর্তমান বিশ্বের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম তিনি। গত বছরের শুরুতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাস তিনেক আগে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকেই আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সবকিছুর। মাশরাফি বিন মর্তুজা যেন পরশ পাথর। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সাফল্যম-িত একটি বছর কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। সুসংবদ্ধ এবং শক্তিধর একটি দলে পরিণত হয়েছে টাইগাররা। নেতৃত্ব গুণে দেশের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক তিনি, সেটা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে। একজন উপযুক্ত নেতাকে কখনও সাহস হারালে চলে না। সেই সাহসটাই অনেক তার মধ্যে। সেই মাশরাফিকেই এবার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় ক্রিকেট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) দল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কলাবাগান ক্রীড়া চক্র নিয়েছে তাকে। প্লেয়ার্স বাই চয়েস ড্রাফটে ‘আইকন’ তালিকায় থাকলেও কোন ক্লাবই তাকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি, সেটা নিয়ে আক্ষেপ নেই জাতীয় দলের সফলতম অধিনায়কের। কারণ তিনি ভাল করেই জানেন কেন ক্লাবগুলো তার বিষয়ে নিরুৎসাহী। আর এমন ব্যাকফুটে থেকে লড়াই করে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জটাই পছন্দনীয় ‘লড়াকু’ মাশরাফির। চরম আত্মশক্তি, বিশ্বাস, নিজের ওপর আস্থা ও সাহস রেখে সব পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বুক চিতিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেজন্যই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের যোগ্যতম ও সেরা নেতা। ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিজের প্রতিভা দেখিয়ে মন জয় করে নিয়েছিলেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। নিজের ভদ্র আচরণ, কথা বলার ভাবভঙ্গিমা, আত্মবিশ্বাসী মনোভাব এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত ও নিয়ন্ত্রণ করবার দারুণ ক্ষমতা সবার কাছে বিশেষ গুরুত্ব আদায় করে নিয়েছেন ক্রিকেটাঙ্গনেও। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলের অপরিহার্য হয়ে ওঠা মাশরাফির একমাত্র শত্রু ছিল ইনজুরি। সবমিলিয়ে প্রায় ৭/৮ বার পায়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। অনেকবারই ইনজুরির কারণে শঙ্কা জানানো হয়েছে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ মাশরাফির। এত ইনজুরি নিয়ে কোন পেসারই টিকতে পারেন না। কিন্তু ইনজুরি নিয়েও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলের অপরিহার্য এ পেসার খেলেছেন, ইনজুরি নিয়ে খেলে সেটাকে আরও বড় করেছেন। বারেবারেই ইনজুরি থেকে ফিরে আবারও একই ছন্দে, একই ধার নিয়ে বোলিং করেছেন। দমিয়ে রাখা যায়নি আত্মপ্রত্যয়ী মাশরাফিকে। আর এই ইনজুরির সঙ্গে লড়তে লড়তেই আরও দুঃসাহসী যোদ্ধা হয়ে উঠেছেন তিনি। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক তাকে টলাতে পারে না, ব্যাকফুটে থাকলেও সেখান থেকে কিয়দংশ ইতিবাচক দিক নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য এসব ব্যক্তিগত যুদ্ধ তাকে মানুষ হিসেবে পোড় খাওয়া, অভিজ্ঞ এবং ভাল নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে বর্তমানে। সে কারণেই বাংলাদেশ দল এখন এই দলনেতার অধীনে দারুণ গুছিয়ে উঠেছে। যে দলটির নেতাই সবচেয়ে বড় যোদ্ধা এবং এত খারাপ পরিস্থিতি থেকেও লড়াই করে অতঃপর অপরিহার্য হিসেবেই টিকে আছেন তিনি অনুসরণীয় সবার কাছে। সেই মাশরাফি এবার দল প্রিমিয়ার লীগের প্লেয়ার বাই চয়েস আইকন ও এ+ ক্যাটাগরিতে থাকাদের মধ্যে দল পেয়েছেন সবার পরে। কারণ ইনজুরির কারণে এখনও পুরনো মাশরাফি হয়ে উঠতে পারেননি। প্রতি ম্যাচেই পূর্ণ কোটা বোলিং করতে পারবেন এমন নিশ্চয়তাও নেই। সেটাই অনাগ্রহের কারণ। কিন্তু এসব নিয়ে আক্ষেপ নেই মাশরাফির। ১৫ বছর ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে অবস্থান করা মাশরাফির চেয়ে পরিণত, অভিজ্ঞ এবং সাহসী ক্রিকেটার আর নেই বাংলাদেশে। আর কোন দেশের কাউকে এতবার ইনজুরির কারণে অস্ত্রোপচার করার পর টিকে থাকতে দেখা যায়নি। তবু ২০১২ সালে প্রথম ও গত বছর অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরেও মাশরাফিকে শুরুতে কেনেনি কেউ। শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তাকে দলে ভেড়ায়। কাগজ-কলমের হিসেবে শক্তিমত্তায় অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা সেই দলটিকে শুধু নেতৃত্ব গুণেই শিরোপা জেতান তিনি। তাই হতাশা গ্রাস করে না, সাহসও হারান না। বরং যে কোন পরিস্থিতিতে লড়াই করে দারুণ কিছু করার চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমাকে সবসময়ই অনুপ্রাণিত করে। আমি বিপিএলের প্রথম নিলামে অবিক্রীত ছিলাম। পরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স আমাকে নেয়। আমরাই চ্যাম্পিয়ন হই সেবার। গত বিপিএলেও ভিক্টোরিয়ান্স শেষ মুহূর্তে আমাকে দলে নেয়, তারপরও সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমি কখনও সেসব নিয়ে রাগিনি। উল্টো আমি সবসময় নিজেকে মাঠে প্রমাণ করতে চেয়েছি।’ গত প্রিমিয়ার লীগে মাশরাফি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের হয়ে ১৮ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ২৩৫ রান করেছিলেন। এবার মুশফিকুর রহীমকে নিয়েছে মোহামেডান। এটাই কলাবাগানের হয়ে ভাল করার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আবাহনী-মোহামেডান ছাড়া অন্য কোন ক্লাবে খেলা বাড়তি উত্তেজনার। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারাটা দারুণ উপভোগ্য। আর এসবের জন্যই আমি সবসময় প্রস্তুত থাকি।’
×