ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজাইন ভুলে গচ্চা যাচ্ছে ৩০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

ডিজাইন ভুলে গচ্চা যাচ্ছে ৩০ কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ প্রাথমিক ডিজাইনের ভুলে দীর্ঘ প্রায় সাত বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি মাল্টি চ্যানেল সিøপওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। ফলে দুই দফায় ব্যয় বাড়ছে ৩০ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং সময় বাড়ছে ছয় বছর। বর্তমানে তৃতীয় দফায় বাড়ছে ব্যয় ও সময়। এ পর্যায়ে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং সময় বাড়ছে দুই বছর। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা, প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এ সময় বাড়ানো হয় সে সময়ও। দ্বিতীয়বার ব্যয় না বাড়িয়ে দুই বছর সময় বাড়ানো হয়। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী একনেকের কার্যপত্রে উল্লেখ করেন, প্রকল্পটি উচ্চ কারিগরি প্রকৃতির হওয়ায় এবং এরূপ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রকল্পটির প্রাথমিক ডিজাইন যথাযথভাবে করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ করে ডিজাইন-ড্রইং তৈরি এবং কর্ণফুলি নদীর ভেতরে চ্যানেল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন যথাসময়ে আরম্ভ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে এ প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এটি সমাপ্ত ঘোষণা করা যেতে পারে বলে সুপারিশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে দ্বিতীয় সংশোধন অনুযায়ী মেয়াদ ২০১৫ সালের জুনে অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা যায়। তবে এ অবস্থায় সমাপ্ত ঘোষণা করলে সরকারের কাছ থেকে গৃহীত ঋণে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটির মূল কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। ফলে সিøপওয়ে নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় পরিকল্পিত উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না এবং ইতোমধ্যেই ব্যয়িত ২১ কোটি ১০ লাখ টাকা হতে বিএফডিসি কোন সুফল পাবে না। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাল্টি চ্যানেল সিøপওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে অধিক ওজন সম্পন্ন ট্রলার, জাহাজ, বার্জ ও অন্যান্য জলযান ডকিং, আনডকিং ও মেরামত করা, পন্টুন, টাগ, বার্জ, ট্রলার ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে মৎস্য বন্দরের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সালের জুলাই হতে ২০১১ সালের জুন মেয়াদে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাল্টি চ্যানেল সিøপওয়ে নির্মাণের মূল প্রকল্পটি ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুলাই হতে ২০১৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন করেন। প্রকল্পটি ২য় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ব্যয় না বাড়িয়ে জুলাই ২০০৯ থেকে ২০১৫ জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী অনুমোদন দেন। বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় গ্যান্ট্রি ক্রেন নির্মাণ, সিএনসি প্লেট কাটিং মেশিন ক্রয়, প্লেট বেন্ডিং মেশিন ক্রয়, হেভি কার্ট টাওয়ার নির্মাণ, ডলফিন জেটি নির্মাণ, সিøপওয়ে এবং গ্যান্ট্রি ক্রেন রেলওয়ে স্থাপনার মধ্যকার নির্মাণ কাজ, সিøপওয়ে এবং নদীর তীর সংলগ্ন রিটেইনিং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ইত্যাদি নতুন অঙ্গ (কার্যক্রম) অন্তর্ভুক্ত করে এবং ব্যয় ১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৪৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুলাই হতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৩য় সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। প্রকল্পটি ৩য় সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হলে বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমডি) পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আইএমইডির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকল্পটির ৩য় সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী সম্মতি দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির ওপর ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সুপারিশে প্রকল্পটির ব্যয় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা কমিয়ে মোট ৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
×