ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন কোম্পানি তুলবে ৭২১ কোটি টাকা

দরপতনের মাসেও টাকা তোলার মহোৎসব

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

দরপতনের মাসেও টাকা তোলার মহোৎসব

অপূর্ব কুমার ॥ চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই পুঁজিবাজারে টানা পতন চলছে। এই বছরের প্রথম কার্যদিবস থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের সূচক কমেছে ২২৬.৩০ পয়েন্ট। এই ধারাবাহিক পতনের মাঝেও পুঁজিবাজারে রাইট শেয়ার ছেড়ে এবং আইপিওর মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। শুধু তাই নয় এপ্রিল মাসকেই আখ্যায়িত করা হচ্ছে টাকা উত্তোলনের মাস হিসেবে। কারণ চলতি এপ্রিল মাসেই বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ৭২১ কোটি টাকা। তারল্য সঙ্কটে ভোগা এই বাজার থেকে এক মাসে ৭২১ কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়াকে রীতিমতো বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন রাইট শেয়ার এবং আইপিও অনুমোদন বাজারে নতুন করে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। অনেকেই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে একমির আইপিওয়ের চাঁদা এবং জিপিএইচ ও সামিট পোর্টের রাইটের চাঁদা দিচ্ছেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং সেকেন্ডারি মার্কেটের কথা মাথায় রাখা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে নতুন ফান্ড না আসায় তারল্য সঙ্কট বাড়ছে। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো আইপিও ছেড়ে টাকা তুলছে এবং এক মাসেই দুটি কোম্পানি রাইট শেয়ার ছেড়ে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোম্পানির ঋণ শোধ এবং নতুন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এটি পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদে জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে এত টাকা উত্তোলনকে কোনভাবেই বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজার থেকে কোম্পানি টাকা তুলবেই। কিন্তু তাদের সময়োপযুক্ত হতে হবে। যেখানে নতুন ফান্ডের অভাব এবং মার্জিন ঋণে আটকে পড়া বিনিয়োগকারীদের রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এতগুলো আইপিও অনুমোদনের কোন যুক্তি নেই। অধিকন্তু জিপিএইচ ইস্পাত এবং সামিট পোর্টের রাইট শেয়ারের টাকা উত্তোলন কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দিচ্ছে না। একইভাবে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশ করে কোম্পানিগুলো রাইট ও আইপিও অনুমোদন বন্ধের দাবিও জানানো হচ্ছে। একমি ল্যাবরেটরিজ ॥ অতি মূল্যায়িত দরে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করছে একমি ল্যাবরেটরিজ। প্রতিটি শেয়ারে ৮৫.২০ টাকা ধরে কোম্পানিটি ৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে তুলবে ৪০৯ কোটি টাকা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটি কাট অব প্রাইস হিসেবে ৭৭ টাকায় শেয়ারটি ছাড়বে কোম্পানিটি। আাইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড পরিপালনও করেনি। তাই প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া কোম্পানির বিডিংয়ের দর নিয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট মহলের কিছুটা সংশয় রয়েছে। শুধু তাই পুরো বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়াতে তারা কিছুটা গলদ দেখছেন। গত ১১ এপ্রিল থেকে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে পাঁচ গুণ আবেদন জমা পড়লেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এক মাসের জন্য ব্লকড হয়ে যাবে। আর আইপিওয়ের চাঁদা গ্রহণের পরে ৪০৯ কোটি টাকা কোম্পানির এ্যাকাউন্টে জমা হবে। ফলে এত বড় টাকার চাহিদায় পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে দরপতন ঘটছে। জিপিএইচ ইস্পাত ॥ ঋণের সুদজনিত ব্যয় থেকে নিজেদের দূরে রাখতে জিপিএইচ ইস্পাত নতুন করে রাইট শেয়ার ছাড়ছে। রবিবার থেকে কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু হয়েছে। চাঁদা গ্রহণ চলবে ১২ মে পর্যন্ত। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ৩আর:২ রাইট শেয়ার ছেড়ে ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলতে যাচ্ছে। ৪ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা। কোম্পানিটির রাইট শেয়ারের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে বেনকো ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট। এদিকে কোম্পানিটি রাইট শেয়ারের অনুমোদন পেতে নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত দুই ধরে হিসাব ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই হিসাবের খাতগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেই কিছুটা ব্যবধান ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। এ কোম্পানির রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণও পুঁজিবাজারকে বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কা দিচ্ছে। সামিট পোর্ট এ্যালায়েন্স ॥ সেবা খাতের কোম্পানি সামিট এ্যালায়েন্স পোর্টের ফি-বছর মূলধন বাড়ালেও বিনিয়োগকারীদের কোন সুফল নেই। উল্টো মূলধন বাড়ার বিপরীতে কোম্পানিটিতে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার পরিমাণ কমেছে। এর মাঝেই এ্যালায়েন্স পোর্ট প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৬টি শেয়ার ছেড়ে মোট ৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা উত্তোলন করছে। এখনও কোম্পানিটির চাঁদা গ্রহণ চলছে। উত্তোলন করতে যাওয়া টাকার মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ দিয়ে জমি ও ১৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে রাইট শেয়ারের চাঁদা গ্রহণ শুরু করে চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। কোম্পানিটির রাইট আবেদনের ইস্যু মানেজার হিসেবে কাজ করছে লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এছাড়া আন্ডার রাইটার হিসেবে রয়েছে লঙ্কা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কসমোপলিটন ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ব্যানকো ফিন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
×