ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ চিরতরে রুখতে হবে বাংলাস্তানের পথ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ চিরতরে রুখতে হবে বাংলাস্তানের পথ

একটা বিষয় জলের মতো পরিষ্কার- সামলানোর কাজ ঠিকমতো করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ যখন দেশ শাসনে আসে তখন সুশীল ও প্রগতিশীল নামধারীদের মুখোশও খুলতে থাকে। ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা একটাই। ভারত, হিন্দু ও সাম্প্রদায়িকতা। ভয়ের বিষয়, এদের জাল বা নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। এদেশের বদলে যাওয়া মানুষের পচা মগজ গোবর পেলেই খুশি হয়ে যায়। তর তর করে গুজবের গাছ গজায় তাতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মিডিয়ায়ও এর নমুনা ছড়িয়ে যায়। এ কথা বলি না সরকার ঠিকমতো সব করতে পারছে। কিন্তু বেঠিক যেগুলো সেগুলোও কি কেউ আসলে ধরিয়ে দিতে চাইছে, না পারছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের এত বড় ঘটনার পর কোন ধরনের গাইডলাইন পাওয়া গেল না। বরং বোঝা গেল সত্যিকারের জানাশোনা মানুষ আসলে নেই। ডলার বা লোকসানকৃত টাকাটার চেয়ে বড় হয়ে উঠল কে বড় আর কে ছোটর খেলা। আতিউর রহমানকে বিদায় করার পর ঝাল মিটে যাওয়া মুহিত সাহেব আর এ নিয়ে কথা বলেন না। অথচ তার উচিত ছিল জাতিকে সাবধান করা, ঘটনা জানিয়ে নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগের এ আরেকটি নেগেটিভ দিক। তারা ধরে নেয় পাবলিক সব জানে। জানুক আর না জানুক রাজনীতির কাজ হলো নিজেদের দিকটা সাফ করে রাখা। তা করার শক্তি থাকার পরও সরকারী দল করে না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটে, বকওয়াজি দিয়ে তাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করার পর তা তলিয়ে যায়। আসলে তলায় না। জনগণের মনে পুঞ্জীভূত হতে থাকে। এর কোন সঠিক ব্যাখ্যাও দেয়ার কোন রেওয়াজ নেই। ফলে যে যার মতো বানিয়ে নেয়। আমি সরকারের মোসাহেব নই। তাদের অনেক কিছু ভাল লাগবে এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। না লাগলে সেটা বলতেও দেরি করি না। কিন্তু শেখ হাসিনা না থাকলে এদেশের কি হবে ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠি। বিএনপি আমলে এদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর কঠিন নির্যাতন ও অপমান কায়েম করা হয়েছিল। বিএনপি-পুলিশ-জামায়াত মিলে তাদের জীবন দুর্বিষহ করেছে। লুট, ধর্ষণ, খুন করার পরও মুখে কুলুপ এঁটেছিল সুশীল সমাজ। খালেদা জিয়ার প্রতি দারুণ টান আর তারেকের আগমন চাওয়া দেশের কিছু মিডিয়া তখন সবকিছু চেপে গেলেও আওয়ামী লীগের আমলে সজাগ। এবারে কতজনের মুখোশ খুলেছে সেটাই দেখুন। আবারও বলছি, সামাল দেয়ার কাজ হচ্ছে না। ছাত্রলীগ অথবা ছাত্রলীগ নামধারীদের কে সামলাবে? এরা কাদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া? দলে মানে লীগে এখন নাকি গডফাদারের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু আধুনিক নয়, সেহেতু এখানে টাকা আর গদিই সব। সাবধানের মার নেই। কারা তা করতে পারেন? এককালে যারা নেতা ছিলেন, গাইড দিতেন তারা এখন বয়সের ভারে নত। তাদের কথাও কেউ শোনে না। নতুন নেতৃত্ব বলতে বলতে মুখে ফেনা তুললেও তার দিকে কারও খেয়াল নেই। কোথা থেকে আসবে নতুন মুখ? যেদিকে তাকাই মারামারি আর লুটপাট। ছাত্রলীগের যারা এসব করে তারা কানেকশনহীন নয়। সে জায়গাটায় কেউ হাত দেয় না। দেশে যত খুন, অঘটন, ধর্ষণ বা অনাচার সব কি সরকার করায়? সবাই জানে বেশিরভাগ ঘটনায় মানুষের হিংসা কাম টাকা পয়সা বা শত্রুতাই মুখ্য। তারপরও যাবতীয় দায় এসে পড়ে সরকারের ওপর। একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় ঢোকে না, যা কিছু ঘটে সব তাতেই নিজেদের জড়িত ভাবার হেতু কি? কোন্ দেশের সরকার তা করে? আইন বিচার আদালত প্রশাসন এসব আছে কি জন্য? ‘চোরা নাহি শুনে কভু উপদেশ’। সরকারে এমন কিছু মন্ত্রী ও নেতা আছেন যারা কথা বলা ছাড়া থাকতে পারেন না। বলতে বলতে বাচালতা এমন জায়গায় চলে গেছে আদালত অবধি গড়িয়ে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। তারপরও থামাথামি নেই। এ সরকারের যা কিছু সুনাম ও প্রাপ্য এরা তা নষ্ট করতে যথেষ্ট। কেন বার বার সুযোগ দেয়া? কেন শাসনের সুফল, কেন ভাল বিষয় বা অর্জনগুলো জলাঞ্জলি দেয়া? এখনও যে অতীত আর সুনাম তাকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিলে সময় মাফ করবে না। আমার কেন জানি মনে হয় রাজনীতিহীনতাই এর মূল কারণ। এখনও শেখ হাসিনা আছেন বলেই হয়ত চলছে। এরপর কি হবে কেউ জানে না। এটা কোন আশাজাগানিয়া কথা নয়। এমন অনেক কাজ হয়েছে যা কোনদিন আশা করা যায়নি। এমন সব কা- ঘটেছে যা চেতনাকে আবার রাঙিয়ে দিয়ে গেছে। দুশমনরাও বসে নেই। ফলে আমরা চাই সব দায়ভার মাথায় না নিয়ে যেটুকু যার সেটুকু তার হোক। সবাই সব বিষয়ে নাক না গলাক। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবার আগেই সমাধানের মুখ দেখুক। তা না হলে যারা ওঁৎ পেতে আছে তারাই ফায়দা লুটবে। বাংলাস্তান বানানোর পথটা এখনও খোলা। সেটুকু চিরতরে সিলগালা করার আগে কাজ শেষ হবে না। এটা যেন ভুলে না যাই আমরা। [email protected]
×