ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান

নারী নির্যাতন রোধসহ ১৩ দফা আহ্বান মহিলা পরিষদের

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

নারী নির্যাতন রোধসহ ১৩ দফা আহ্বান মহিলা পরিষদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্পদ-সম্পত্তিতে সমান অধিকারকে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের পূর্বশর্ত মনে করে নারী অধিকার কর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই ধারণা সামনে রেখে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, ২০১১ সালের নারী উন্নয়ন নীতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, বৈষম্যমূলক আইনের বিলোপ, প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করাসহ সরকারের প্রতি ১৩ দফা আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। মহিলা পরিষদের অন্য দাবিগুলো হলো- গণমাধ্যমে নারীর ইতিবাচক অবস্থান যথাযথভাবে প্রতিফলিত করা, সংবিধানে বর্ণিত নারীর সমান অধিকারের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন বাতিল ও সংশোধন করা, আদিবাসী, দলিত, হরিজনসহ সকল প্রান্তিক নারীদের উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর করা এবং পেশাজীবী নারীদের জন্য যানবাহন, আবাসনের ব্যবস্থা ও শিশুদের জন্য দিবাযতœ তৈরি করা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা, সংগঠনের পতাকা ও ৪৬টি বেলুন উড্ডয়ন, ৪৬টি মোমবাতি প্রজ্বলন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের গানের মধ্য দিয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেতো লুনডেমো। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি তপতী সাহা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক চৈতালী ত্রিপুরা এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সহ-সমন্বয়কারী নাজমা আরা পপি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষণা পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিলা পরিষদের ভূমিকার প্রশংসা করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ব্যক্তি জীবনে ৪৬ বছর অনেক সময়, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবশ্য তা নয়। তারপরও এই সময়ে মহিলা পরিষদ শুধু তাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখেনি, নিজেদের সংগঠিত করেছে, কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়েছে দেশজুড়ে। নিজ দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেতো লুনডেমো বলেন, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি ও সমাজে নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় নরওয়ের অধিকার কর্মীদের প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নরওয়ের নারীরা পুরুষের তুলনায় এখনও পিছিয়ে আছেন। কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীরা এখনও কম বেতন পান। নারীর প্রতি সহিংসতাকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি করেছেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে হয় সম্মাননা প্রদান। মহিলা পরিষদ ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নারীদের সম্মাননা দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ২৮ জন নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে চলচ্চিত্রকার ২ জন, সেনা ও পুলিশের ৭ জন, তথ্য ও প্রযুক্তিতে ২ জন, সাংবাদিকতা পেশায় ৯ জন, নারী উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী ২ জন, খেলাধুলায় ২ জন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ২ জন এবং চারুশিল্পতে ২ নারীকে সম্মাননা দেয়া হয়।
×