স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের পর জ্বালানি খাতেও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের (আইওসিএল) মধ্যে একটি এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকু-ে এলপিজি প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হবে। বৃহৎ এই প্ল্যান্টে সমান অংশীদারিত্ব থাকবে দুই দেশের। বাংলাদেশের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ভারত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এখান থেকে এলপিজি সরবরাহ করবে।
রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত প্রকল্প শুরু হয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটি এখন নির্মাণ চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট এবং কুমিল্লা দিয়ে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রফতানি করছে ভারত। ভারতের বেসরকারী খাত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরেও ভারতের বেসরকারী খাতের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে জ্বালানি খাতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লক এসএস ৪ ও এসএস ৯ ইজারা পেয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ওএনজিসি এবং ইন্ডিয়ান অয়েল। আগামী শুকনা মৌসুম থেকে অনুসন্ধান কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) চুক্তি সই হবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ পেয়েছে।
ভারতের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে ভারতের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বৈঠক করেন। আজ মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলের চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা রয়েছে।
ওই বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের জ্বালানি খাতের সহায়তা সম্প্রসারণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় বলা হয়, ভারত থেকে ডিজেল আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে নুমালিগড়ের তেল পরিশোধনাগার থেকে ডিজেল আমদানি উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও ভারত থেকে এলএনজি আমদানি করে খুলনায় একটি ৭৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি আমদানির আলোচনা চূড়ান্ত করেছে। ভবিষ্যতে এলএনজি রংপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গে নেয়ার আগ্রহ রয়েছে ভারতের। এজন্য পৃথক পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, জ্বালানি খাতে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা উভয় দেশ সম্মত হয়েছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একটি এলপিজি কারখানা স্থাপনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এখান থেকে পাইপলাইনে এলপিজি ভারতের ত্রিপুরাসহ অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যাবে। তিনি বলেন, পাইপলাইনে আসামের শিলিগুড়ির নুমালিগড় শোধনাগার থেকে ডিজেল আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন দামের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমীক্ষার পরই বলা যাবে এলপিজি প্ল্যান্টের আকার কত বড় হবে। শীঘ্রই ওই সমীক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ওডিশা রাজ্যের ধামরায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে ভারত। এখান থেকে পাইপলাইনে গ্যাস এনে খুলনায় বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো হবে। এই গ্যাস খুলনা হয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা চলছে। খুলনা থেকে এ গ্যাস রংপুরেও নেয়া সম্ভব। ওখান পর্যন্ত আমাদের গ্যাস পাইপলাইন সম্প্রসারণ হচ্ছে। ভারত চাইলে রংপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের অন্য অংশে গ্যাস নিতে পারবে।