ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুন সুরকির গাঁথুনিতে সংরক্ষিত হবে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

চুন সুরকির গাঁথুনিতে সংরক্ষিত হবে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈত্রিক বাড়িকে আগের অবয়বে ফিরিয়ে নিয়ে সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়। স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এটি উপস্থাপন করেন। এছাড়া গবেষণা ও পারমাণবিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শস্যের নতুন জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) গবেষণা আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জনকণ্ঠকে বলেন, বছর পাঁচেক আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈত্রিক বাড়ি সংস্কার করা হয়। কিন্তু উনাকে (শেখ হাসিনা) তখন ব্রিফ করা হয়নি। পুরনো ভবন সংস্কারের যে পদ্ধতি ও নিয়ম আছে, সেটি অনুসরণ করা হয়নি। পুরনো বাড়িগুলো সাধারণ চুন সুরকির হয়, ইটের আকারও ভিন্ন হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বাড়ি সংস্কারে সিমেন্টের ব্যবহার হয়েছে। রং করা হয়েছে। ভবনটা নতুন বানিয়ে দিয়েছে, কিন্তু পুরনো ভবন তো নতুন না বানিয়ে আগের অবয়বে ফিরিয়ে আনা হবে। পুরনো ভবনের নিজস্ব বৈশিষ্ট বজায় রেখেই এটাকে টেকসই করা হবে। এখন চুন-সুরকি দিয়ে এটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য আমরা মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছি। বাড়ির চেহারা কেমন হতে পারে, সে বিষয়গুলো প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু ভালভাবে দেখে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, যেকোন ভবন একশ বছরের বেশি পুরনো হলে সেটি প্রতœতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে পরিণত করা যায়। আমরা এমন ভবন সংরক্ষণ করতেই পারি। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন তো ঐতিহ্যের অংশ। তারপরও সব কিছু প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছেন। তারা (বঙ্গবন্ধুর বংশধর) যেভাবে চান সেভাবেই হবে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সংস্কারের জন্য তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো (১৮৫৪ সালে নির্মিত)। এটা আদিতে এক রকম ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সে সব বিবেচনা করে তিনটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তবে তিনটি প্রস্তাবই পুরনো আদল কেন্দ্র করে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছে তাদেরই বংশধরের কারও আরেকটা বাড়ি আছে, সেটাও আমরা সংস্কার করব। উনি (প্রধানমন্ত্রী) পুরনো বাড়ি ছেড়ে পাশেই একটি নতুন ছোট বাড়ি করেছেন। তাতে ওই এলাকার পরিবেশটি ভিন্নরকম হয়ে গেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, আমাদের চিন্তা ওনাকে যদি রাজি করাতে পারি, তবে ওই বাড়িটা অন্যত্র সরিয়ে পুরনো বাড়িটা নতুনের মতো করে দিতাম। এটা বাসযোগ্য করা সম্ভব। তবে আগের পরিবেশটা ফিরে পাব। সোনারগাঁয়ের সরদার বাড়ি ‘রেস্টোরেশন’-এর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন আমরা সঠিক আকারের ইটও বানিয়েছি। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদই সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে একটি দল কাজ করে। ওই দলে রাজশাহী অঞ্চলের কুমার রয়েছে, যারা ওই ধরনের ইট তৈরিতে পারদর্শী। পুরনো জেলখানার জমির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা ॥ মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের জমির ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে বলে মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করেছেন। পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল বন্দীকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। ওই সদস্য বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনায় কোন কোন সদস্য জেলখানার জায়গায় মার্কেট, শপিংমলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনার কথা বলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাণিজ্যিক স্থাপনার পরিবর্তে স্থানীয় জনগণের জন্য পার্ক জাতীয় কিছু করার পক্ষে মত দেন। অপর এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, নাজিমউদ্দিন রোডের জেলখানার চার নেতা স্মৃতিসহ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো রেখে বাকি জমি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মন্ত্রিসভায় বেশিরভাগ সদস্য মত দেন। সেখানে পার্ক বা বিনোদনমূলক কিছু করা হতে পারে বলে তিনি জানান। বিনা ॥ গবেষণা ও পারমাণবিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শস্যের নতুন জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) গবেষণা আইন, ২০১৬’-এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা ।
×