ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম

জেগে উঠি বৈশাখী প্রেরণায়

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

জেগে উঠি  বৈশাখী প্রেরণায়

আমাদের স্বপ্নের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে যোগ হলো আরও একটি বছর। আমরা পেলাম বর্ষ পরিক্রমার আরেকটি ধাপ। আমাদের চেতনা আর সম্ভাবনা ব্যাপ্তিতে, আমাদের জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্যে বাংলা নববর্ষ এক অনাবিল সংযোজন যা উঠে আসে আত্মার গভীর থেকে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলা নতুন বছর মানেই আনন্দঘন পার্বণ, যাতে অংশগ্রহণ থাকে সর্বস্তরের। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি আর জীবনধারায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও পরিবর্তিত হয়নি বাংলা বছরের প্রথম দিনের সেই আনন্দমুখর কোলাহলের। নাগরিক কিংবা আটপৌরে সব কিছুতেই উৎসবের সেই পুরনো রূপ খানিকটা নতুন আদলে। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যে নববর্ষ মানেই হালখাতার শুরু। পুরনো বছরের হিসাব গুটিয়ে আবার নতুন করে নতুন ধারায় যাত্রা। আসলে জীবনটাও তো তাই। প্রতিনিয়ত পুরনোকে ঠিক করে নতুন আবহে নিজেকে গড়ে তোলা; এই তো সার্থক জীবনের পরিতৃপ্তি। মোগল আমলে যে বাংলা নববর্ষের শুরু তার পরিচয় বঙ্গাব্দ নামে। সময়ের পরিক্রমায় বঙ্গাব্দ শব্দটি হারিয়ে গেলেও মাতৃভাষা বাংলা আর নিজেদের বর্ষপরিক্রমার স্মৃতি এখনও আমাদের কাছে অনেক পরিণত। তাই সর্বস্তরে এর ব্যাপ্তি নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আর সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের সামগ্রিক চেতনা ভবিষ্যত রচনায় অবদান রাখবে। নতুন বছর মানেই নতুন জীবন। যে জীবনে চাই একপশলা আনন্দ, যার গভীরে থাকবে কিছু গতি, আবেগ-অনুভূতি আর উপলব্ধির মিশ্রণ। আমাদের নতুন বছরটি নতুন উদ্দীপনায় সাজাতে ব্যস্ত সবাই। আমরা দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থতার গ্লানি না পাওয়ার ক্ষোভ-হতাশা ভুলে জীবনের জয়গান গেয়ে এগিয়ে যেতে বর্ণাঢ্য উৎসবে শামিল সবাই। ঋতুর পালাবদলে গ্রীষ্মের আগমন হয়ত নতুন কিছু নয়। তবে এই গ্রীষ্মের আগমনের মধ্য দিয়েই যখন সূচনা হয় আরও একটি নতুন বর্ষের তখন তা উৎসবমুখর প্রতিটি মানুষের হৃদয়কেই যেন রাঙিয়ে যায় তার আপন রঙে। সময়ের পালাবদলে বছরের পরিবর্তনের স্বাভাবিকতাও তখন রঙিন হয়ে ওঠে উৎসবের রঙে। একথা হয়ত সত্য যে, আমাদের দেশের মানুষের কাছে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব নিয়েই হাজির হয় ধর্মীয় উৎসবগুলো। কিন্তু জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে একই কাতারে দাঁড়িয়ে যখন কোন উৎসব উদযাপনের প্রসঙ্গ হাজির হয় তখন সেসব উৎসবের প্রথমেই থাকে পহেলা বৈশাখের কথা। বাঙালী আর বাঙালিয়ানার এই উৎসবে প্রাণের টানেই নিজেকে শামিল করেন প্রতিটি বাঙালী। আর তাদের সাধ ও সাধ্যের মাঝেই রচিত হয় অনন্য এক মিলনমেলা। বাঙালী জাতিসত্তার সমগ্রতাকে ধারণ করে পহেলা বৈশাখ। এটি শুধু বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন নয়। বাঙালী বলে যে গৌরব আমরা অনুভব করি সেই গৌরবের সংস্কৃতির অন্যতম দিক এদিন। শুধু একটি দিনে উৎসবটি সীমাবদ্ধ থাকেনা। পুরো বৈশাখক জুড়েই চলে সাজ সাজ উৎসব। বর্ষবরণের এই উৎসব আমাদের শত-সহস্র বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি তথা পেশাদারিত্বের একটি তাৎপর্যময় দিন এটি। ছেলেবেলায় আমরা এ উৎসব পালন করেছি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পাট-পূজা, চড়ক পূজা, অষ্টক গান, সঙ সাজা, মেলার পসরা সাজিয়ে তোলা এসবের প্রভাব বা ভাষার ওপর এত বেশি যে আমরা যেখানে, যতদূরেই যাই না কেন আমাদের তা ছুঁয়ে থাকে। এখনও যে উৎসবের জাঁকজমক কমে গেছে তা নয়। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম, চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদিতে তরুণ বয়সী ছেলেমেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কারও ভাল না লেগে যায় না। তবে এটাও সত্যি যে, আজকের বিশ্বায়নের যুগে সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তারপরও কিন্তু বাঙালীুুুুুুুু তার শেকড় খোঁজার চেষ্টা করে একটা জায়গায়। আর সেটা হয় আমরা বাঙালী বলেই। জাতি হিসেবে আমরা সাংস্কৃতিক উৎসব মুখরতায় বিশ্বাসী। বাংলা নতুন বছরে তাই আমাদের চেতনা থাকে নিজেদের ঐতিহ্য আর প্রকাশভঙ্গিকে তুলে ধরার। বৈশাখ আমাদের জীবনে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার। তাই প্রাণের উপলব্ধিতে বাঙালীর পরিবর্তন বৈশাখী স্টাইলে প্রতিবছর সংযোজন করছে নতুন নতুন ধারা। বৈশাখ মানেই খানিকটা উত্তাপ। উত্তাপ মানেই লাল রঙের আকুতি। পরনে সুতি তবুও রঙের উত্তাপে আমাদের মাঝে যে মোহ সঞ্চারিত হয় তার কারণে আগামী বছরেও হয়ত বৈশাখ নতুন স্টাইলে সংযোজিত হবে। আমরা নিজেদের খুঁজে পাব নতুন রূপে। শুধু এই দেশ আর এই শহরে নয় বৈশাখ ছড়িয়ে পড়বে নিউইয়র্ক, মন্ট্রিল, লন্ডন, সিডনি, আবুধাবী, কুয়ালালামপুরের মতো আধুনিক শহরেও। তখন হয়ত সত্যিকার অর্থে বাঙালী নতুন জীবন পাবে বৈশাখী স্টাইলে। আমরা চাই বাঙালিত্বের মাটিতে যেন বিশ্বের আকাশ ছুঁতে পারি। পহেলা বৈশাখ মানেই সাদা পাঞ্জাবি, লালপাড়ের সাদা শাড়ি; এ ধারা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। লাল-সাদার পাশাপাশি পোশাকে এখন ব্যবহার করা হয় অন্যান্য রঙও। শুধু পহেলা বৈশাখ নয় পুরো বৈশাখী উৎসবকে মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, জামা ইত্যাদি নিয়ে আসছে। তাদের তৈরি নতুন ডিজাইনের পোশাকগুলো আর বছরের একটি দিনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। সমকালীন ফ্যাশনে দেশীয় পোশাকের অবস্থানটি যেন অনেক বেশি উঠে আসছে এসব বৈশাখী পোশাকের মধ্য দিয়েই। নতুন বছর মানেই নতুন জীবনের সূচনা, নতুন উপলব্ধি আর চেতনার বহির্প্রকাশ। আমরা যে নতুন জীবনের সূচনা করতে চাই সেই জীবনে চাই একপশলা আনন্দ যার গভীরে থাকবে কিছু গতি, আবেগ, অনুভূতি আর চমৎকার উপলব্ধির মিশ্রণ। আমাদের নতুন বছর হোক সর্বাত্মক শান্তির। পরিকল্পনার ছোঁয়া থাকুক আমাদের প্রতিদিনের জীবনধারায়। মডেল : শাওন, রানা, ঈশিতা
×