ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় উদ্্যাপিত মতলুব আলীর জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় উদ্্যাপিত মতলুব  আলীর জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যানভাসের সঙ্গে গড়েছেন সখ্য। চিত্রপটে সাজিয়েছেন শিল্পের সংসার। রং ও রেখার মাঝেই খুঁজে নিয়েছেন জীবনের আনন্দ উপকরণ। নিরন্তর ছবি এঁকে যাওয়া এই চিত্রশিল্পী মতলুব আলী। আর শুধু ছবি আঁকা নয় গান ও নাটক রচনায়ও সিদ্ধহস্ত তিনি। এমনকি গানের নিজের গানে সুর বসাতেও পছন্দ করেন। রবিবার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন এই আপাদমস্তক শিল্পীর ৭০তম জন্মবার্ষিকী ও ৭১তম জন্মদিন। জন্মদিনে শুভানুধ্যায়ীদের ভালবাসায় সিক্ত হলেন শিল্পী। জানানো হলো পুষ্পাঞ্জলি নিবেদিত অকৃত্রিম শুভেচ্ছা। গাওয়া হলো তাঁর রচিত গান। বৈশাখী সন্ধ্যায় জন্মদিন উদ্্যাপন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল মানব শিল্প-সাহিত্য গোষ্ঠী ও ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী। উদ্বোধনী সঙ্গীতের সুরে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ভেসে আসে মতলুব আলী সুরারোপিত গানের বাণীÑ এসো বন্ধু এসো...। গানের সঙ্গে নাচ করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী অদৃকা। জন্মদিন উদ্্যাপনের অনুষ্ঠানে মতলুব আলীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানসহ বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আবদুস শাকুর শাহ্, আব্দুল মান্নান ও রেজাউল করিম। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বক্তারা বলেন, নিজের শিল্পসত্তাকে নানাভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন মতলুব আলী। ছবি আঁকাআঁকি তাঁর মূল ভাললাগার জায়গা হলেও নাটক কিংবা গান রচনার মতো শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেকে। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখিও। ইতোমধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে রচিত তাঁর গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আগামীতে প্রকাশিত হবে মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে তাঁর রচিত আরেকটি বই। আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় মতলুব আলী রচিত সঙ্গীত পরিবেশনা। পরিবেশন করেন পুষ্পিতা, দীনা, মুনমুন, অনন্যা, শতাব্দী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম। ফোকলোর সামার স্কুল কর্মশালার সমাপ্তি ॥ রবিবার বিকেলে ‘তৃতীয় ফোকলোর সামার স্কুল’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ফোকলোর কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী কর্র্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাপনী ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আন্তর্জাতিক ফোকলোর বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি হিসেবে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্বখ্যাত ফোকলোরবিদ অধ্যাপক জওহরলাল হা-ু এবং ভারতের বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ অধ্যাপক টি. এস. সত্যনাথ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তৃতীয় ফোকলোর সামার স্কুলের সমন্বয়কারী ড. ফিরোজ মাহমুদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ফোকলোর ইন দ্য আরবান কনটেক্সট শিরোনামের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা ফোকলোরের ফসল ভোগ করি কিন্তু এ বিষয়ে খুব একটা গভীর চিন্তা করি না। তবে এ ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব ফোকলোর এমন এক জ্ঞানকা- যা প্রতিনিয়ত রূপান্তরিত হয়; রূপান্তরণের অব্যাহত প্রক্রিয়ায় লাভ করে নতুন তাৎপর্য। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে ছায়ানটের বর্ষবরণ, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক তৎপরতায় যে গতিমান ফোকলোর লক্ষ্য করি তা প্রমাণ করে এ অঞ্চলের ফোকলোর কতটা জনসম্পৃক্ত এবং প্রাণপূর্ণ। বিশেষ অতিথিদ্বয় বিশ্বখ্যাত ফোকলোরবিদ অধ্যাপক জওহরলাল হা-ু ও অধ্যাপক টি. এস. সত্যনাথ বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্ব-ফোকলোরের নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াজুড়ে ফোকলোরের যে বিপুল সংগ্রহক্ষেত্র বাংলাদেশ তা আত্মীকৃত করে এদেশের নিজস্ব ফোকলোর-ভা-ারের সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে ব্যবহার করতে পারে। তাঁরা বলেন, বাংলা একাডেমি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে এদেশের ফোকলোরকে পরিচিতি দানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসেছে। এখন প্রয়োজন একাডেমির নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ ফোকলোর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা। প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষে ড. হোসেন আল মামুন বলেন, এই সামার স্কুল আমাদের ফোকলোর-চর্চায় বিশেষ অবদান রাখবে। ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, পরিবর্তিত ফোকলোর-জ্ঞানকা- সম্পর্কে বাংলা একাডেমির ফোকলোর সামার স্কুল এ বিষয়ে নতুন অন্বেষা জাগ্রত করবে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সামার স্কুলের মতো নিয়মিত ফোকলোর কর্মশালার মধ্য দিয়ে ফোকলোর গবেষকবৃন্দ এ বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভের পাশাপাশি বাংলা একাডেমির বিপুল ফোকলোর সংগ্রহমালা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের ফোকলোর-চর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবেন। অনুষ্ঠানে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ১০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সভাপতি ও একাডেমির মহাপরিচালক। আলোকচিত্র প্রদর্শনী প্রান্তের জাতিসত্তা ॥ সবার মাথায় একটি করে বস্তা। বস্তাগুলোর ভেতরে রয়েছে চা বাগান থেকে তোলা চা পাতা। সেই বস্তাভর্তি চা পাতা মাথায় নিয়ে সবুজ ধান খেতের মাঝ দিয়ে সারি বেঁধে হেঁটে চলে চা শ্রমিকের দল। কোন এক দুপুরে বাগান থেকে নিবিষ্ট মনে চা পাতা সংগ্রহ করছেন এক নারী শ্রমিক। বৃক্ষছায়ায় গোল হয়ে বসে ভাগাভাগি করে খাবার খাচ্ছে চা শ্রমিকরা। এভাবেই আলোকচিত্রে ধরা দিয়েছে চা জনগোষ্ঠী ও স্বল্প পরিচিত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। ফিলিপ গাইনের তোলা এসব ছবি নিয়ে ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে শুরু আলোকচিত্র প্রদর্শনী শিরোনাম বাংলাদেশের প্রান্তের জাতিসত্তা। প্রদর্শনীর আয়োজক সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)। গত ৩ বছর ধরে সারাদেশের ১৫৬টি চা বাগান ঘুরে বিভিন্ন চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের ওপর গবেষণা করেছে সেড। পাশাপাশি তোলা হয়েছে এসব আদিবাসী চা শ্রমিক জানগোষ্ঠীর ছবি। বাংলাদেশে চা-শ্রমিক ও স্বল্প-পরিচিত জাতিসত্তাসমূহের মানচিত্রায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পে গবেষণার ভিত্তিতে খোঁজ মিলেছে ৮০টি স্বল্প-পরিচিত জনগোষ্ঠীর। সেই সব স্বল্প পরিচিত জাতিসত্তার জীবনভিত্তিক ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীটির সূচনা রবিবার বিকেলে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৃতাত্ত্বিক রাহনুমা আহমেদ, প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির মহাপরিচালক শহীদুল আলম, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্ত সাহা প্রমুখ। প্রদর্শনীর আলোকচিত্রগুলোয় উঠে এসেছে বিভিন্ন চা বাগানের ৮০টি জনগোষ্ঠীর নানা অভিব্যক্তি মুখচ্ছবি। উপস্থাপিত হয়েছে তাঁদের জীবনাচরণের খ- খ- মুহূর্ত। যেমনÑ কাজের ক্ষেত্রে অমর্যাদাকর শর্ত প্রতিপালন; কাজের সময় চা শ্রমিকরা কেমন খাবার খায়; রোদে পোড়া আর বৃষ্টিতে শ্রান্ত পরিশ্রমী মুখÑ এমন আলোকচিত্রগুলো এই বার্তায় দেয় যে, চা-শ্রমিকরাই এদেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ। গ্যালারির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে জোড়া আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মুখের পাশাপাশি তাদের যাপিত জীবন, সংস্কৃতি, পরিবেশসহ নানা বিষয় ঠাঁই কয়েক শতাধিক ছবিতে। পাঁচ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২১ এপ্রিল। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কলাবাগান মাঠে বৈশাখী মেলার সমাপ্তি ॥ কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে বাংলামা গ্রুপ আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বিপুলসংখ্যক দর্শণার্থীর অংশগ্রহণের আনন্দঘন পরিবেশে শেষ হয় শনিবার। সমাপনী দিবসে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা এবং খ্যাতিমান শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সমাপনী রাতে লায়লা হাসান নির্দেশিত ও নটরাজ নিবেদিত ‘হে রুদ্র বৈশাখ’ নৃত্যানুষ্ঠান, সৈয়দ হাসান ইমাম, মাহিদুল ইসলাম, শিপ্রা রহমান প্রমুখের আবৃত্তি ও সংবর্ধিত কণ্ঠযোদ্ধাদের সঙ্গীত পরিবেশনাসহ চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থিত শ্রোতাম-লীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে।
×