ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিও স্বাস্থ্য সেবায় নকল ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

এনজিও স্বাস্থ্য সেবায়  নকল ভ্যাকসিন

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৪১টি ওয়ার্ডে সেবার নামে কাজ করছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে চিকিৎসাসেবা এমনকি পরিবেশ রক্ষায় স্যানিটেশনকে পুঁজি করে এনজিও কর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মসূচী পালন করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো শিশু-কিশোর ও যে কোন বয়সীদের টিকাদান কর্মসূচী। কিন্তু এ টিকাদানের পেছনে রয়েছে আসল ভ্যাকসিনের পরিবর্তে নকল ভ্যাকসিন প্রদান, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হলেও কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মনিটরিং নেই। ফলে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে চিকিৎসার নামে এনজিও সংস্থাগুলোর হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে নগরবাসী জোর দাবি জানালেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় নকল হেপাটাইটিস ‘বি’ ভ্যাকসিন মানবদেহের বেড়ে ওঠার পেছনে চরম হুমকিতে ফেলছে। তবে এদের দেখভাল করার কেউ নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এ ধরনের এনজিওকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কর্তৃক যেসব হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকাদান কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে, তাদের ভ্যাকসিনগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তবে সেবা ও উন্নয়নের নামে ‘আর্ত-চেতনা মানবিক উন্নয়ন সংস্থা’ প্রতারণা করছে তা হাতেনাতে ধরা পড়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। এসব টিকাদান কর্মসূচী চলাকালে নির্র্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন বেনামী ও নকল হেপাটাইটিস ‘বি’ ভ্যাকসিন জব্দ করাসহ সেবাদানকারীদের আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করার ঘটনাও ঘটেছে গত সোমবার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আরডিসি মোহাম্মদ রুহুল আমিন অভিযান চালান সিভিল সার্জন অফিস থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরে। কোতোয়ালি থানাধীন নন্দন কাননের হরিষ দত্ত লেনের একটি কোচিং সেন্টারের নিচতলায় দেয়া হচ্ছিল চিকিৎসাসেবার নামে সাড়া জাগানো আয়োজন। ‘আর্ত-চেতনা মানবিক উন্নয়ন সংস্থা’ নামক একটি এনজিও হেপাটাইটিস ‘বি’ প্রতিরোধক টিকাদান কর্মসূচী শুরু করে ওই দিন সকাল ৯টা থেকেই। সেবাদান কার্যক্রমে এনজিও কর্মীদের সঙ্গে থাকা পিচ্চি কোল্ড বক্স থেকে ‘সেনভ্যাক্স-বি’ নামের নকল ভ্যাকসিন উদ্ধার করা হয়। নকল ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছিল মানবদেহে। অথচ তাদের হাতব্যাগ থেকে ইনসেপ্টা কোম্পানির আসল ‘হেপা-বি’ পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকদের মতে ভ্যাকসিন সব সময় তাপনিয়ন্ত্রিত স্থানে রাখতে হয়। এছাড়াও বেনামী এবং মিসব্রান্ড হেপাটাইটিস ‘বি’ ভ্যাকসিন ‘সেনভ্যাক্স-বি’ জব্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত নকল ভ্যাকসিনসমূহের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্টটাইম এনজিও কর্মীরা এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে। এমনকি তারা আরও অভিযোগ করে বলেছেন, এনজিও কর্তৃপক্ষ তাদের এ বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি। ওই আদালতে ৪ এনজিও কর্মীর প্রত্যেককে অভিযুক্ত করে নগদ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন জানান, যে কোন টিকাদান কর্মসূচী চলাকালে একজন মেডিক্যাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করার কথা। তবে অভিযানকালে কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায় না। এছাড়াও অভিযানকালে ভ্যাকসিনসমূহ যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় না। এসব ভ্যাকসিনে পানি ছাড়া কিছুই নেই। যারা ভ্যাকসিন পুশ করছে তাদের কোন অভিজ্ঞতাও নেই। যেসব ভ্যাকসিন পুশ করা হচ্ছে তাতে কোন দেশের নামও নেই।
×