ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখল

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নিজেদের অশিক্ষিত মূর্খ, অসচেতন দাবি করে মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে লিজের শর্ত ভঙ্গ করে আমেরিকা প্রবাসী ছেলে রনজু সরদার ও তার পিতা ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সভাপতি রব সরদারের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকৃত ওই সম্পত্তিতে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল পাকা ভবন, পুকুর কেটে মাটি বিক্রি ও সরকারী খাল ভরাটেরও অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবর্দ্ধন গ্রামের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভূমি অফিস বরাবর এলাকাবাসীর দায়ের করা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, দক্ষিণ গোবর্দ্ধন গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা ওয়ার্কার্স পাটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব সরদার ও তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আমেরিকা প্রবাসী রনজু সরদার গোবর্দ্ধন গ্রামের বিভিন্ন দাগ ও খতিয়ানের তিন একর ৬১ শতক জমি সম্প্রতি লিজ নেন। সম্পত্তি লিজ নিতে গিয়ে বাবা-ছেলের দেয়া লিখিত হলফনামায় দেখা গেছে, তারা নিজেদের অশিক্ষিত, মূর্খ, কৃষিজীবী, জমাজমি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ও অসচেতন ও লিজের শর্ত সম্পর্কে জ্ঞান নেই বলে দাবি করেন। তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুর রব সরদার ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি প্রতি বছর তিনি দু’একবার আমেরিকায় যাতায়াত করে থাকেন। রনজু সরদার আমেরিকা প্রবাসী। সরেজমিন দেখা গেছে, লিজ নেয়া সরকারী সম্পত্তিতে লিজের শর্ত ভঙ্গ করে তারা পাকা দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন। লিজের প্রায় এক একর জমির মাটি বিক্রি করে সেখানে একটি পুকুর খনন করেছেন। এছাড়া এক একর ৬৫ শতক সরকারী খাল ভরাট করেছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রায় শত বছর ধরে এলাকাবাসী ওই খালের পানি দিয়ে বোরো জমিতে সেচ সুবিধাসহ পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। প্রভাব খাটিয়ে সেই খালটি ভরাট করায় গ্রামবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী আব্দুর রব সরদার ও তার ছেলে রনজু সরদার ২০০৭ সালে ওই সম্পত্তি লিজ নিয়ে মালিকানা সম্পত্তি হিসেবে দাবি করে ভোগ-দখল করেন। এছাড়াও ইতোমধ্যে তারা সরকারী সম্পত্তির প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও লিজের শর্ত ভঙ্গ করে গত বছর সরকারী সম্পত্তিতে অনুমোদবিহীন নক্সায় পাঁচতলা বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই সম্পত্তির আরএস রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন সুভাষিণী দেবী। ১৯৬৫ সালে সুভাষিণী ভারতে চলে যান। উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান জানান, ১৯৭০ সালে এক আদেশে ওই সম্পত্তি ভিপিভুক্ত হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইলিয়াছুর রহমান বলেন, লিজকৃত ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তন কিংবা পাকা ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব আলম জানান, অভিযোগের পর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×