ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নের মধ্যে ব্যবধান কমানোর তাগিদ

আরও বড় আকারের বাজেট চায় সিপিডি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

আরও বড় আকারের বাজেট চায় সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে বাজেট কাঠামোর সংস্কার, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বাজেট প্রণয়নের সুপারিশ করেছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রবিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব সুপারিশ তুলে ধরে সিপিডি। সংস্থার রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান অনুষ্ঠানে মূল প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন শেষে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে সরকারী হিসাব অনুযায়ী আমরা ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি যাতে ধরে রাখা যায় ও টেকসই হয়- এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এবারের বাজেট প্রস্তাবনা করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় ৫টি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো কী হবে; রাজস্ব আদায় বাড়াতে কী কী পদক্ষেপের সুযোগ আছে; সরকারী ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও কী কী প্রাধিকার দিতে হবে; প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও বৈশিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে কী কী রক্ষাকবচ রাখা দরকার ইত্যাদি। বাজেট কাঠামোর সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বাজেটের প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নের মধ্যে পার্থক্য ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। সব থেকে বড় পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে অর্থায়নের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বড় পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছেÑ রাজস্ব আদায়ের এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) ক্ষেত্রে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই পার্থক্য বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। এতে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এ কারণে আগামী বাজেটে গুণগত মানের বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আর্থিক আকার বাড়ছে সাড়ে ১৬ শতাংশের মতো, অন্যদিকে বাজেট বাস্তবায়নের আকার বাড়ছে ১৪ শতাংশ। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আগের বছরের প্রাক্কলিত বাজেটের পরিবর্তে সংশোধিত বাজেটকে ভিত্তি ধরে নতুন বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। সব থেকে ভাল হয় যদি বাজেট বাস্তবায়নের আকারের ওপর ভিত্তি করে বাজেটের আর্থিক আকার নির্ধারণ করা যায়। দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের যে আকার এটা জিডিপির ১৭ শতাংশ, এটা মোটেও উচ্চাভিলাষী বাজেট নয়। এটা বাড়িয়ে ২২-২৩ শতাংশ করা গেলে ভাল। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট কাঠামো সংস্কারে স্থানীয় সরকার বাজেট ঘোষণা তথা বাজেটে স্থানীয় সরকার খাতে বরাদ্দের বিষয়টি পৃথকভাবে উল্লেখ করার প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও যথাযথ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। দেবপ্রিয় বলেন, এ বছর আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ হলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেমে গেছে অনেক নিচে। কর্মস্থানের পরিমাণও কম। এডিপি বাস্তবায়নের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদানই সবচেয়ে বেশি। চলতি বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। জিডিপির বাড়তি যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রীয় খাত থেকে এসেছে। তবে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়াতে হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়ে এমন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে দেবপ্রিয় বলেন, আয়করের আওতায় পড়ে এমন সম্ভাব্য ৫০ শতাংশ লোক এখনও আয়কর দেয় না। আয়কর বাড়ানোর চেয়ে নতুন আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো দরকার। দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট বড় হলে তা গুণগত মান সম্পন্ন হতে হবে। আগামী বাজেট হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, দরিদ্র ও দুস্থবান্ধব, উৎপাদনমূলক, সংস্কারমূলক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিকবান্ধব। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে কঠিন অবস্থার দিকে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দা যেন আমাদের অর্থনীতি ধাক্কা দিতে না পারে তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি থাকতে হবে আগামী বাজেটে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।
×