ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেলে পদোন্নতি ও বদলি প্রক্রিয়া নিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের নীলনক্সা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

রেলে পদোন্নতি ও বদলি প্রক্রিয়া নিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের নীলনক্সা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলে পদোন্নতি ও বদলি প্রক্রিয়া কলঙ্কিত হচ্ছে কিছু অসাধু কর্মকর্তার নীলনক্সায়। কর্মকর্তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও চলমান প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তাকে মূল্যায়ন না করে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে রেলওয়ের উন্নয়নকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এই শ্রেণী। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনভিজ্ঞদের অনুপ্রবেশ প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করাসহ দীর্ঘায়িত করছে। তবে কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ দুষছেন রেল মন্ত্রণালয়ের অশুভ হস্তক্ষেপ ও সিদ্ধান্তকে। কারণ, ডিজির দফতর থেকে প্রস্তাবনা দেয়ার পরই এ ধরনের বদলি বা পদোন্নতি কার্যকর করে মন্ত্রণালয়। এদিকে, রেল ভবনে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চীফ (ইএনসি) প্রকৌশলী আব্দুল হাই, জেনারেল ম্যানেজার (রিফর্ম) ও পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মকবুল আহম্মদের পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে সম্প্রতি কারসাজি করা হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রেল ভবনে কর্মরত প্রকৌশলী আবদুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু প্রকল্প চলমান ছিল। পাশাপাশি তিনি খুলনা-মংলা সিঙ্গেল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক সমীক্ষা চালিয়ে ব্যাপক ধারণা অর্জন করেছেন। যা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি প্রকল্পই অত্যধিক গুরুত্ব বহন করে ওই অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য। কিন্তু আকস্মিকভাবে পদোন্নতি দিয়ে এ কর্মকর্তাকে পূর্বাঞ্চলীয় জিএম পদে বদলি করায় চলমান প্রকল্পগুলো কিছুদিনের জন্য স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে ওই প্রকল্পে স্থলাভিষিক্ত করা হলে বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদী এসব প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞ এ প্রকৌশলীকে সরিয়ে ফেলায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে প্রকল্পের উন্নয়ন পরিকল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, গত বছর পূর্বাঞ্চলীয় জিএম মোজাম্মেল হককে বদলি করে রেল ভবনে জিএম (রিফর্ম) করা হয়েছে। সে পদ থেকে কয়েক মাস না যেতেই আবার চট্টগ্রামে জিএম (প্রজেক্ট) পদে বদলি করা হয়েছে। কি কারণে সমপর্যায়ের পদে বদলির মধ্য দিয়ে প্রকল্পের হাল ধরার আগেই ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি রেলের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অপরদিকে, ইএনসি আবদুল হাইকে তিনটি প্রকল্প থেকে তুলে নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জিএম পদে স্থলাভিষিক্ত করার পেছনে কোন ধরনের চক্রান্ত কাজ করছে তা নিয়ে রয়েছে কৌতূহল। দ্বিতীয় ভৈরব সেতু, দ্বিতীয় তিতাস সেতু বাস্তবায়ন ও খুলনা-মংলা সিঙ্গেল লাইন প্রকল্পের প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন করা এই কর্মকর্তাকে আকস্মিকভাবে পদোন্নতি দিয়ে বদলি করার পেছনে রয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ডিজির দফতর থেকে প্রেরিত প্রস্তাবনায় নীলনক্সা। আরও অভিযোগ রয়েছে, রেল ভবনে কর্মরত উপ-পরিচালক প্রকিউরমেন্ট জনৈক মামুনুলকে দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক প্রকিউরমেন্ট করা হয়েছিল। আবার এক বছর না যেতেই এই কর্মকর্তাকে পরিচালক প্রকৌশল পদে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিতে কোন ধরনের মানদ- বা তালিকা মানা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ কোন কোন কর্মকর্তা একই অবস্থানে তিন চার বছর অতিবাহিতের পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। আবার কোন কর্মকর্তা ডিজির আত্মীয়তার কারণে বছর না ঘুরতেই পদোন্নতি ও সুবিধাজনক স্থানে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। এদিকে, রেল ভবনে কর্মরত জেনারেল ম্যানেজার (রিফর্ম) মোজাম্মেল হককেও একই আদেশে বদলি করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজারের দফতর আওতায় জিএম (প্রজেক্ট) হিসেবে এ কর্মকর্তাকে ওই পদে যোগদান করবেন। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ কর্মকর্তাকে। এর কয়েক মাস আগে ঈশা-ই-খলিল এ প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত জিএম হিসেবে পূর্বাঞ্চলে কর্মরত আছেন। অপরদিকে, চাকরি সময়সীমার মাত্র ২ মাস হাতে থাকতেই রেল ভবনে বদলি করা হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মকবুল আহম্মদকে। বিষয়টি অমানবিক বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রেলের একাধিক কর্মকর্তা। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল রেলের সিআরবি কার্যালয়ে রেল ভবন থেকে প্রেরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়েছে ডিজির দফতর থেকে। এই ফ্যাক্স বার্তায় উক্ত কর্মকর্তাদের নামও রয়েছে। এ দফতর আদেশে পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার মকবুল আহম্মদকে রেলের এডিশনাল ডিরেক্টর মার্কেটিং এ্যান্ড কর্পোরেট প্লানিং পদে বদলি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় জিএম মকবুল আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, আরমাত্র দু’মাস পরই অর্থাৎ আগামী ১৫ জুন আমি অবসরে যাচ্ছি। স্বল্প এ সময়টুকু পূর্বাঞ্চলে কর্মরত থেকে চাকরি জীবন শেষ করার আশা ছিল। কিন্তু গত বুধবার আমাকে বদলি করা হয়েছে রেল ভবনে। তবে এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সুতরাং ওই পদে যোগদান করাটাই আমার কাজ।
×