ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শেখ আফজালের ক্যানভাসে শাশ্বত জীবনের বয়ান

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

শেখ আফজালের ক্যানভাসে শাশ্বত জীবনের বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। জমিনজুড়ে শষ্যের চারা বিছানো কচি পাতায় সবুজের সমারোহ। ধানক্ষেতের ঠিক পাশেই দৃশ্যমান জলাভূমি। ভর দুপুরে জলের তৃষ্ণায় সেথায় মুখ ডুবিয়েছে এক জোড়া মহিষ। একটি মহিষেরর উপর আবার বসে আছে এক রাখাল বালক। পাশের ছবিতে কলসি কাঁখে নদীর তীর ঘেঁষে হেঁটে চলেছে একঝাঁক নারী। একটু চোখ ফেরালেই চোখে পড়ে মা ও শিুশুর মমতাময় সম্পর্কের দৃশ্যকাব্য। ঘোমটা মাথায় দেয়া পল্লীবধূর শাড়ির আঁচলে আশ্রয় খুঁজছে কোলের সন্তানটি। আর মায়ের ঠিক সামনেই হাঁটি হাঁটি পা করে এগিয়ে যাচ্ছে অপর শিশু সন্তানটি। বাবা ও ছেলে মিলে জোড়া গরুর পেছনে মই বেঁধে মাটি নিংড়ে বীজ রোপণের উপযোগী করার দৃশ্যটি বলে যায় কৃষিজীবী জীবনের কথা। বনের ভেতর দিয়ে বহমান খালের উপর নুয়ে পড়া গাছের ডালে প্রকাশিত হয়েছে সুন্দরবনের সৌন্দর্য। ঘরের দরজায় দাঁড়ানো প্রতীক্ষারত নারীর ছবিতে উপস্থাপিত হয়েছে অনাদিকালের ভালবাসার চিরন্তন দৃশ্যকল্প। রংয়ের বৈভবে আঁকা এমন সব ছবি এখন ঝুলছে রাজধানীর প্রগতি সরণির এ্যাথেনা গ্যালারিতে। চলছে শেখ আফজালের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শাশ্বত জীবনের বয়ান ও প্রকৃতির অনুভবে তাড়িত হয়ে আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো প্রদর্শনীর শিরোনাম ইটারনাল এ্যাফেকশন। শনিবার বৈশাখী বিকেলে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুই বরেণ্য চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক রফিকুন নবী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ্যাথেনা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারম্যান নিলু রওশন মোরশেদ। শেখ আফালের চিত্রপটে নেই নগর। কুসুমিত প্রকৃতিতে আচ্ছন্ন তাঁর চিত্রতল। সবচেয়ে বেশি আছে মানুষের সম্পর্কের প্রগাঢ় উপস্থিতি। শিল্পীর ক্যানভাসে মানুষ কখনও কর্মে চঞ্চল, কখনও বা প্রকৃতির নিবিড় ঘেরাটোপে বিমোহিত কিংবা আত্মমগ্ন। সেই ছবিতে মানুষগুলো লীন হয়ে যায় নিসর্গের সঙ্গে। বিষয়ের সাথে প্রকৃতি এমনভাবে মিশেছে যেন সেখান থেকে নিসর্গের রংটি মুছে দিলে ঘটে যাবে জীবনের ছন্দপতন। সব মিলিয়ে ৪৫টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। এ্যাক্রেলিক ও মিশ্র মাধ্যমে চিত্রিত চিত্রকর্মের সঙ্গে ঠঁাঁই পেয়েছে ড্রইং। আবহমান বাংলার যাপিত জীবনের সঙ্গে চলমান সময়ের নিরিখে আঁকা রূপক শিল্পকর্ম জায়গা করে নিয়েছে এই শিল্প আয়োজনে। ২২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ৭ মে। প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আব্দুল জব্বার খান জন্মশতবর্ষ উৎসব ॥ দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সবাক চলচ্চিত্রের সফল নির্মাতা আব্দুল জব্বার খান। তাঁর হাত ধরেই ষাট বছর আগে মুখ ও মুখোশ ছবির মাধ্যমে এই ভূখ-ের যাত্রা করেছিল চলচ্চিত্রশিল্প। শনিবার ছিল প্রয়াত এই কীর্তিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের জন্মশতবর্ষ। এ উপলক্ষে ‘তুমি মৃš§য়, তুমি চিš§য়, তুমি অজর অমর অক্ষয়’ সেøাগানে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শুরু হলো আবদুল জব্বার খান জš§ শতবর্ষ উৎসব। উৎসবের আয়োজক আবদুল জব্বার খান জন্ম শতবর্ষ উৎসব উদযাপন কমিটি। শনিবার সন্ধ্যায় ছয় দিনের অনুষ্ঠান এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উ™ে^াধন করেন নায়করাজ রাজ্জাক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ, উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ইসমত হায়াত খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু, সোহানুর রহমান সোহান প্রমুখ। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে দেখানো হয় আবদুল জব্বার খানকে নিয়ে শাহীন মাহমুদ নির্মিত ১০ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘সেলুলয়েডের অশ^ারোহী’। উৎসব চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। উৎসবের অংশ হিসেবে আজ রবিবার সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে দেখানো হবে চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। কাল সোমবার একই ভেন্যুতে প্রদর্শিত হবে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জোয়ার এলো’। সমাপনী দিন বৃহস্পতিবার দেখানো হবে ‘খেলাঘর’। প্রদর্শনী সবার জন্য উš§ুক্ত। উ™ে^াধনী আলোচনায় বক্তারা বলেন, ষাট বছর আগে মুখ ও মুখোশ ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে বিশ^ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নতুন সম্ভাবনার আলো দেখান আবদুল জব্বার খান। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তেমনভাবে স্বীকৃতি ও সম্মান পাননি। কেবল এফডিসিতে তাঁর নামে একটি পাঠাগার রয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা থেকে বিএফডিসি ছাড়িয়ে টঙ্গী ডাইভারশন রোড পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় আবদুল জব্বার খান সড়ক হিসেবে। এ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে যতটা আলোচনা কিংবা তার কাজের যতটা মূল্যায়ন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। গণগ্রন্থাগারে ঐতিহ্যের বই উৎসব ॥ পথচলার ১৬ বছর পূর্ণ করল সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে প্রকাশনা সংস্থাটি প্রকাশ করেছে সহস্রাধিক বই। এভাবেই দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা জগতে রেখে চলেছে ভূমিকা। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পূর্ণ করে ঐতিহ্য তার প্রকাশনার সবটুকু গৌরব ভাগ করে নিতে চায় পাঠকদের সঙ্গে। এ উপলক্ষে শুরু হলো বিশেষ মূল্যছাড়ের ‘ঐতিহ্য বই উৎসব’। শনিবার থেকে রাজধানীর সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উš§ুক্ত এই উৎসবের সূচনা হয়। উৎসবে পাঠক ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত সহস্রাধিক বই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ে কিনতে পারবেন। এছাড়া উৎসবে পাঠক ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত কিছু বই মাত্র ৩০ টাকায় ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। কোন বিরতি ছাড়াই উৎসব চলবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে উৎসব। উৎসব প্রসঙ্গে ঐতিহ্যেরর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমার নাইম বলেন, যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রকাশনা জগতে ঐতিহ্য সব সময়ই বিষয়-বৈচিত্র্যপূর্ণ সুনির্বাচিত বই প্রকাশ করে চলেছে। বর্তমানে ঐতিহ্যের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সহস্রাধিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশের রচনাবলি প্রকাশ করে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে ঐতিহ্য। এছাড়াও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল ‘জয়বাংলা’, ‘বাংলাদেশ’, ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’, ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী : ইতিহাসের পুনর্পাঠ’ ও ‘দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা’সহ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসগ্রন্থ প্রকাশ করেও পাঠকের নজর কেড়েছে। চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্র উৎসব ॥ শুধুমাত্র নির্বাক চলচ্চিত্র দিয়ে সারা দুনিয়াকে হাসিয়েছিলেন তিনি। একটি কথাও না বলে শুধুই অভিব্যক্তিতে বিশ্ব সেলুলয়েডে ছড়িয়েছেন মোহাবিষ্টতা। তিনি হলেন স্যার চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন জুনিয়র। গোটা বিশ্ব যাঁকে চিনেছিল চার্লি চ্যাপলিন নামে। শনিবার ছিল কিংবদন্তি সুপার কমেডিয়ানের জন্মদিন। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের আয়োজনে শুরু হলো চার্লি চ্যাপলিন উৎসব। চার্লি চ্যাপলিন অভিনীত একগুচ্ছ ছবি নিয়ে সাজানো উৎসবে প্রতিদিন সাড়ে ৬টায় থাকবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল আর্কাইভে দেখানো হবে ছবিগুলো। শনিবার প্রদর্শিত হয় চ্যাপলিন ইউ টার্ন। আজ রবিবার দেখানো হবে মডার্ন টাইম। সোমবার প্রদর্শিত হবে ইন দ্যা গোল্ড রাশ। ১৯ এপ্রিল দেখানো হবে চারলট এটলি ম্যানি কুইন, লাফিং গ্যাস, ফেইস অন দ্য বাররুম ফ্লোর রিঅ্যাকশন, দ্য ম্যাস কুয়ারাদার, গুড ফর নাথিং ও দ্যা রাউন্ডারস। ২০ এপ্রিল দেখানো দ্য ফায়ার ম্যান, দ্য এ্যাডভেনচারার ও এ ডগস লাইফ। ২১ এপ্রিল প্রদর্শিত হবে এ উইম্যান, দ্য ব্যাংক ও দ্য রিংক। ২২ এপ্রিল দেখানো হবে দ্য পনশপ, বাই দ্য সি এবং দ্য ইমিগ্রান্ট। প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×