ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের এক শ’ জরাজীর্ণ যাত্রীবাহী বগি পুনর্বাসন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

রেলের এক শ’ জরাজীর্ণ যাত্রীবাহী বগি পুনর্বাসন করা হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ রেলের ১০০ মেয়াদোত্তীর্ণ যাত্রীবাহী মিটারগেজ (এমজি) ক্যারেজ (বগি) সচলের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব ওয়ার্কশপে ২০১৯ সালের মধ্যে এগুলো পুনর্বাসন করা হবে। অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে আরও ১০০টি বগি পুনর্বাসনের প্রস্তাব করা হলেও পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির কারণে প্রকল্প থেকে এ অংশটি বাদ দেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি পুরাতন ও জরাজীর্ণ যাত্রীবাহী মিটারগেজ বগি পুনর্বাসনের মাধ্যমে রেলের যাত্রী পরিচালন সামর্থ্য বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৯৩০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৫০টি মিটারগেজ বগি সিডিউল ওভারডিউ অবস্থায় চলাচল করছে। তার মধ্যে ৩৮৬টি বগির ওজনারেল ওভারহোলিং (জিওএইচ) মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। মেরামতের অপেক্ষায় থাকা সিডিউল ওভারভিউ বগির সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ওভারভিউ বগির অবস্থা এত জরাজীর্ণ যে, এগুলো সার্ভিস হতে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। কিন্তু বগির স্বল্পতা এবং বর্তমান চাহিদার কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ এই বগিগুলো শীঘ্রই বাতিল বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব বগির মধ্যে অতিজরাজীর্ণ এবং ট্রেন সার্ভিসে ব্যবহারযোগ্য নয় এমন কোচগুলো প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় পুনর্বাসন জরুরী হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০০টি পুরাতন ও জারজীর্ণ মিটারগেজ বগি পুনর্বাসনের জন্য ১২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা ১০০টি বগি পুনর্বাসনের কাজ বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে ১০০টি কোচ পুনর্বাসনের জন্য ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রকল্পটি পুনর্গঠিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীন ৬২৪টি বগি পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি মিটারগেজ বগির পুনর্বাসন হবে, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একনেকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রধান যে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে তা হচ্ছে ১০০টি মিটারগেজ বগি পুর্নবাসনের জন্য দেশী ও বিদেশী কাঁচামাল এবং স্পেয়ার পার্টস সংগ্রহ করা। সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছরভিত্তিক অর্থ চাহিদা ধরা হয়েছেÑ চলতি অর্থবছরে ১৯ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া ১০০টি বগি বাদ দেয়ার বিষয়ে সূত্র জানায়, প্রাথমিক অবস্থায় এ প্রস্তাব দেয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় সুপারিশ দিয়ে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তাবিত ১০০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজের বডি সাইড সুপার স্ট্রাকচারের জন্য সংগৃহীত মালামাল ও যন্ত্রপাতির তালিকা বা বিবরণী পৃথকভাবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে পুনর্বাসন কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে হবে। পরবর্তীতে গত ২ মার্চ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হবে। সে অনুযায়ী শুধু সরকারী সংস্থার মাধ্যমে ১০০টি বগি পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
×