ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি নেই আন্দোলনকারীদের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

বাঁশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি নেই আন্দোলনকারীদের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ গ-ামারা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ‘গ-ামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আপনাদের হৃদয়ের কথা শুনেছি। ওই দিন সেখানে অবস্থা এত খারাপ ছিল, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। কারণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার ওসি বিষয়টি তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন। বিষয়টি এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি। কথা দিচ্ছি পুলিশ আপনাদের আর হয়রানি করবে না। জেলা প্রশাসক বলেন, পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার করবে না। এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এ ছাড়া যারা গ্রেফতার আছে তাদের জামিন চাইলে জামিনের ব্যবস্থাও আমরা করে দেব। সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। বৈঠকে গ-ামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামান ও ওসি স্বপন কুমারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে হয়রানি করার অভিযোগ তোলেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা মাত্র ১টাকা মূল্যে ১ হাজার ৫০ একর খাস জমি লিজ দেয়ার প্রস্তাব করলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিনি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে চেষ্টা না করে উল্টো তাদের সমাবেশে আগে থেকে কোন ঘোষণা ছাড়াই ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মামলার আসামি করে হয়রানি করেন ওসি স্বপন কুমার। থানায় লাশ রেখে আহতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের। আন্দোলনকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ সময় জেলা প্রশাসক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসির মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল। এলাকাবাসীর সঙ্গে আগে মতবিনিময় করলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটত না। আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের ভূমিকা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, গ-ামারায় যে বিদ্যুতকেন্দ্রটি হচ্ছে সেটি বেসরকারী অর্থায়নে হচ্ছে। তারা জায়গাও নিজেদের মতো করে কিনেছে। সরকারের সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা নেই। এটি উন্নয়ন প্রকল্প বলেই সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হোক সেটি চাইছে। আশা করছি আপনারা সরকারকে উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করবেন। সভায় গ-ামারা বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি নিহত মর্তুজা আলী ও মোঃ আনোয়ারের বড় ভাই বদি আহমেদ বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই। আমার দুই ভাই নিহত হলো অথচ আমার ছেলেকে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। আমি এর সুবিচার চাই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জমি লিজ নিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। এদিকে এক ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আরেক দফায় মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে গ-ামারায় সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ ও বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. আহমেদ কায়কাউস, মহাপরিচালক পাওয়ার সেল মোহাম্মদ হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার, জিআইজি শফিকুল ইসলাম, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চেম্বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, বিদ্যুত ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আজ রবিবার বেলা ১১টায় একই বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরেক দফায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. আহমেদ কায়কাউসসহ জেলা ও উপজেলা বিদ্যুত ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
×