ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি না দিলে বিএনপি কঠোর কর্মসূচী দেবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর শফিক রেহমানের গ্রেফতারের বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রিটিশ হাইকমিশনসহ ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন। সকাল ৮টায় শফিক রেহমান গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেন। সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শফিক রেহমানকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচী দেবে বিএনপি। আর বিকেলে বিবৃতি দিয়ে শফিক রেহমানের গ্রেফতার সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শফিক রেহমানের গ্রেফতার সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতা- খালেদা ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এখন যুদ্ধ শুরু করেছে। সরকারের অপকীর্তি ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে দেশকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে এক ভয়ঙ্কর অতল গভীর খাদে। মানুষের ভোটাধিকার হরণের পর বাকস্বাধীনতাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে তাদের ওপর চলছে দলন-পীড়ন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাজানো মামলায় জড়িয়ে দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক ও সম্পাদকদেরও গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এখন দেশের স্পষ্টভাষী ও সত্য উচ্চারণে অকুণ্ঠ ব্যক্তিদের নির্মূলের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তাঁর পছন্দের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্যদের মাধ্যমে। তাদের সেই দুরভিসন্ধি ও নির্মম আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটল অশীতিপর, দুর্জয় সাহসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে এজন্য যে, তিনি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার, ব্যর্থতা ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লিখে যান। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করার আরেকটি কারণ হলো বর্তমান সরকার প্রধানের গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী নীতি শফিক রেহমান তাঁর শাণিত লেখনির দ্বারা ফুটিয়ে তোলেন। শফিক রেহমান সত্য উচ্চারণে অবিচল ও সাহসী এক কলমযোদ্ধা। সে কারণে তাঁকে কব্জা করতে না পেরে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটি সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহির্প্রকাশ। দেশে আজ সম্মানী ব্যক্তি ও সুধীজনদের মানহানী, গ্রেফতার করে কণ্ঠরোধ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁদের নির্বাক করার হীন অপচেষ্টার কোন অন্ত নেই। এটাই বর্তমান সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। খালেদা জিয়া বলেন, আমি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই মামলা, হামলা, খুন, জখম, গুম, অপহরণসহ নানাবিধ বীভৎস অনাচার ঢাকতেই আপনারা শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করেছেন। এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। আমি আরও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই বাক, ব্যক্তি, লেখনি, ভাষণ, মুদ্রণের স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করবেন না। কখনই শফিক রেহমানের মতো ঋজু ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান কলমযোদ্ধাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে পর্যুদস্ত করতে পারবেন না। কারণ সরকার আজ গণবিচ্ছিন্ন ও জনগণের শত্রুপক্ষ। আমি অবিলম্বে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আরেকটি বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছেন। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পছন্দ নয়। তাই সম্পূর্ণ রাজনেতিক প্রতিহিংসায় তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে। একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা মেয়র মান্নানকে সাজানো মামলায় আবারও গ্রেফতার করা হয়েছে। শফিক রেহমানকে গ্রেফতারই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই : ফখরুল ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়ায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্তপরিবারের বাড়ি পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, শফিক রেহমানকে গ্রেফতারই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিকভাবে কোন দেশ চলতে পারে না। দেশের মানুষের জন্য যদি প্রাণও দেয়া লাগে তবু বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষা করবে। এর আগে মির্জা ফখরুল শহরের সেনুয়াপাড়া পুরাতন গোরস্থানে গিয়ে বাবার কবর জিয়ারত করেন। উল্লেখ্য, বিএনপির মহাসচিব হওয়ার পর এটাই তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম সফর। বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, শফিক রেহমানের মতো একজন নির্ভীক সাংবাদিক ও কলামিস্টকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী প্রমাণ করল যে, দেশের মানুষের আজ কোন বাকস্বাধীনতা নেই। নিজেদের অপশাসন, কুকীর্তি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার এখন আইনের বদলে বেআইনের শরণাপন্ন হয়েছে। জনগণের প্রতি তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই বলেই বেপরোয়া উন্মাদনায় কা-জ্ঞানহীন আচরণ করছে। ফখরুল বলেন, দেশের গুণীজনরা আজ অপমানিত ও লাঞ্ছিত। বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান আধুনিকতা, প্রগতি ও অগ্রগতির মুখপাত্র। যে ব্যক্তি মানুষকে লাল গোলাপ দিয়ে ভালবাসার কথা প্রচার করেন, তিনি কখনও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করতে পারেন তা এদেশের মানুষ কখনই বিশ্বাস করে না। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা সরকারের গভীর চক্রান্তেরই অংশ। তবে এ সরকার ভুলে গেছে যে ব্যক্তি শত নির্যাতন, নিপীড়ন ও হুমকির মুখেও সত্য উচ্চারণ করেন, তাঁকে কোনভাবেই বিপর্যস্ত করা যাবে না। ভয় পেত না বলেই শফিক রেহমানকে গ্রেফতার- রিজভী ॥ অবিলম্বে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচী দেবে বিএনপি। শনিবার সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। তিনি আরও বলেন, ভয় পেত না বলেই শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিজভী বলেন, শফিক রেহমান সরকারের সকল অন্যায়, অপকর্ম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লিখতেন। তাই তার লেখনি বন্ধ করতে এবং সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নÑ তার বাবা আপনার বাবার শিক্ষক ছিলেন তারপরও শফিক রেহমানকে কেন এই পরিণতি ভোগ করতে হবে? রিজভী অভিযোগ করেন, দুর্বল, হৃদয়হীন ও দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যভাষী গুণীজনদের নির্মূলের মহাপরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ মহাপরিকল্পনার নির্মম শিকার হলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। সরকার দেশকে চরম বিপর্যয়কর অবস্থার দিকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, চারদিকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোথাও কোন স্বাভাবিক অবস্থা নেই। মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের বিষয়টি ব্রিটিশ হাইকমিশনকে জানিয়েছি। শনিবার সকালেই ব্রিটিশ হাইকমিশনকে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। জাতীয়তাবাদী বিএফইউজে-ডিইউজের নিন্দা ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) জাতীয়তাবাদী অংশ। শনিবার এক বিবৃতিতে বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুদ্দিন হারুন ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজে সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে সাক্ষাতকার নেয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে অভিনব ও নাটকীয় কায়দায় যেভাবে একজন অশীতিপর সাংবাদিককে গ্রেফার করা হয়েছে তা কেবল নিন্দনীয়ই নয়, ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক। সাংবাদিকের ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভিন্নমত দলনে আরেকটি নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় শুধু সাংবাদিক সমাজই নয়, দেশের বিবেকবান মানুষ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।
×