ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সহযোগী সংগঠনের দাবিদার ‘ওলামা লীগ’কে নিয়ে বিব্রত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। হেফাজত-জামায়াত স্টাইলে চলা এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনটির সাম্প্রতিক কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ শাসক দলটির হাইকমান্ড। ওলামা লীগের একটি অংশের বক্তৃতা-বিবৃতি ও কার্যক্রমে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ওলামা লীগের এ অংশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহযোগী কিংবা ভাতৃপ্রতিম সংগঠন নয় ওলামা লীগ। আর এ সংগঠনটির অস্তিত্বও স্বীকার করে না শাসক দলের কোন নেতাও। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার ও শাসক দলের সহযোগী সংগঠনের দাবি করে বিভিন্ন তদ্বির-বাণিজ্য করতে গিয়ে ওলামা লীগ এখন একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। সকল গ্রুপের নেতারাই নিজেদের ওলামা লীগের শীর্ষনেতা দাবি করলেও এদের মধ্যে আসল সংগঠন কোনটি এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে শাসক দলের নেতারা এখন মুখ খুললেও দীর্ঘদিন ধরেই ওলামা লীগের দু’গ্রুপই বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে তাদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করছে। ক্ষমতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে ওলামা লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাজধানীতে প্রকাশ্য কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিবদমান দু’গ্রুপই একে অপরকে জামায়াত-হেফাজতের চর হিসেবে আখ্যায়িত করলেও আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনটির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাদের বৈধতা দিতেও দেখা গেছে। সম্প্রতি ওলামা লীগের একটি অংশ হেফাজত-জামায়াত স্টাইলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিষিদ্ধ করার দাবি জানালে শাসক দলটির টনক নড়ে। এ ঘটনার পর গত শনিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী কিংবা ভাতৃপ্রতিম সংগঠন নয়। আওয়ামী লীগে এ সংগঠনটির কোন অস্তিত্বও নেই। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে গত বুধবার আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাফ জানিয়ে দেন, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী-অঙ্গ কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নয়। আর ওলামা লীগের নেতাদের কর্মকা-, বক্তৃতা-বিবৃতি আওয়ামী লীগের নীতির সঙ্গে যায় না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলও তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ওলামা লীগ! এটা কি খায় না মাথায় দেয়? পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, দায়িত্ব নিয়ে বলছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’গ্রুপে বিভক্ত ওলামা লীগের একাংশের সভাপতি মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী। মূলত এই গ্রুপের পহেলা বৈশাখ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে ওলামা লীগ। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ওলামা লীগের বুখারী ও শরীয়তপুরী গ্রুপ পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী রচনা ও পাঠ্যক্রম আছে দাবি করে তা বাদ দেয়ার কথা বলেছিল। বর্তমান শিক্ষানীতিকেও তারা ইসলামবিরোধী আখ্যা দেন। তারা মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণের বিরোধিতা করেন। এদিকে, ওলামা লীগের অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী। তিনি এই অংশের সভাপতি পদে আছেন এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোঃ দেলোয়ার হোসেন। উভয় গ্রুপ নিজ নিজ অংশকে আসল ওলামা লীগ বলে দাবি করছে। তাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্র নেই বলে দুই গ্রুপই জানায়। তবে আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ তারা মেনে চলার কথা দাবি করে। বেশ কয়েক দফা রাজধানীতে বিবদমান এ দুটি গ্রুপ প্রকাশ্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং একে অপরকে জামায়াত-হেফাজতের চর হিসেবে আখ্যায়িতও করে। কোন্দলের কারণে ওলামা লীগ দুই অংশে বিভক্ত হলেও শাসক দলের বিরাগভাজন হওয়ার পর দু’গ্রুই এখন অভীন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে ওলামা লীগকে অস্বীকার করায় দু’গ্রুপই হতাশা প্রকাশ করে এখন বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছে। এখন দু’গ্রুপই আওয়ামী লীগের আদর্শ মেনে চলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নেত্রী বলে দাবি করছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে তার কোন মিলই দেখা যায় না। কারণ যেসব কথা কোণঠাসা হয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দলগুলোও এখন বলার সাহস পায় না, সেসব কথাই বলছে ভুঁইফোঁড় এই সংগঠনটির কথিত নেতারা। ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেয়া, শাঁখ বাজানো, মঙ্গল কলস সাজানো, ঢাক-ঢোলের ব্যবহার, মুখোশ পরে শোভাযাত্রা, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতে সিদুর দেয়া বিধর্মীদের কাজ। এগুলো করলে আওয়ামী লীগের ভোট কমবে, এজন্য বলেছি। কিন্তু এই কথাকে ধরে আজ যারা ওলামা লীগ নিয়ে সমালোচনা করছেন তারা আগে কোথায় ছিলেন? তারা কি দেখেন নাই আমরা তাদের সঙ্গে মিলে রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি? তিনি আরও দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই এ কথা বলে আমাদের অপমান করা হচ্ছে। আমরা জয় বাংলা সেøাগান দেই। নেত্রী আমাদের সম্পর্কে জানেন এবং চেনেন। আমরা আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানাব। সবার সঙ্গে আলাপ হয়েছে, সবাই একসঙ্গে নেত্রীর কাছে যাব। তাঁর সঙ্গে কথা বলব এবং আমাদের বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেব। ওলামা লীগের অপর অংশের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন বিন হেলালী বলেন, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই এমন মন্তব্য শুনে সারাদেশের আলেম-ওলামারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ওলামা লীগ নিয়ে যারা মন্তব্য করেছেন তারা কি জানেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দল আমাদের অফিস দিয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। এটি সামনে আসায় বেকায়দায় পড়েই এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। যেহেতু সংগঠনটির সঙ্গে মূল দলের কোন সম্পর্কই নেই, তাই ওলামা লীগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কোন সম্ভাবনাই নেই।
×