ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হলমার্কের জমি খণ্ড খণ্ড করে বিক্রির পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

হলমার্কের জমি খণ্ড খণ্ড করে বিক্রির পরামর্শ সংসদীয় কমিটির

নাজনীন আখতার ॥ হলমার্ক গ্রুপের বিশাল পরিমাণ জমি ও মেশিনপত্র একসঙ্গে বিক্রির জন্য চারবার নিলাম ডেকেও সাড়া না মেলায় জমি খ- খ- করে এবং মেশিনপত্র আলাদাভাবে বিক্রি করার পরার্মশ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির ২নং সাব-কমিটি হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলাম করে অর্থ আদায়ে ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার সময় এ সুপারিশ করে। কমিটির সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ সাব-কমিটির সদস্য হলেনÑ আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, এ বি তাজুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস। উল্লেখ্য, ব্যাংকিং ইতিহাসে নজিরবিহীন এ জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে ২০১২ সালে। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভির মাহমুদ সোনালী ব্যাংকের হোটেল রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে। একই শাখা থেকে আরও ২৬টি বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া এলসি করে অস্তিত্বহীন আরও ৪০টি কোম্পানি হাতিয়ে নেয় আরও ১ হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক গ্রুপ ১৮৫ দশমিক ৩৭ বিঘা জমি সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখায় বন্ধক দিয়ে ওই বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়। সাব-কমিটির কাছে দেয়া ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা উদ্ঘাটনের আগে হলমার্ক গ্রুপের আত্মসাত করা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিপরীতে মাত্র ২ হাজার ৬০১ শতাংশ সম্পত্তি এবং টিএ্যান্ডটি ব্রাদার্স গ্রুপসহ অন্যান্য ৪টি প্রতিষ্ঠানের ২৭৩ দশমিক ৪১৫ শতাংশ সম্পত্তি বন্ধক ছিল। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২৮ মে ব্যাংক প্রয়োজনীয় কিছু মূল দলিল, মিউটেশন, হালনাগাদ খাজনা রসিদ ও সিটি জরিপসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঘাটতি রেখে বিভিন্ন তারিখে হলমার্ক গ্রুপের ৩ হাজার ৫১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং টিএ্যান্ডটি ব্রাদার্স গ্রুপসহ অন্যান্য ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৫৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ সম্পত্তি বন্ধক নিয়ে নেয়। বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির জন্য ২০১৪ সালের ১০ মার্চ এবং ১৬ মার্চ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নির্ধারিত তারিখে নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও কোন দরপত্র পাওয়া যায়নি। হলমার্ক গ্রুপ নিলাম প্রক্রিয়া ও দায়েককৃত অর্থ আদায় মোকদ্দমার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে। হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৫ জুন এবং ২৪ জুলাই দায়ের করা অর্থঋণ আদালতে চলমান মোকদ্দমার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। রিট পিটিশন শুনানির পর ২০১৫ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট পুনরায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলাগুলো চলমান থাকবে শর্তে হলমার্ক গ্রুপের রিট পিটিশন ডিসপোজড অফ করেন। এরপর ঋণগ্রহীতাদের বন্ধকী ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য ২০১৫ সালের ২৬ নবেম্বর ও ৩০ নবেম্বর আবারও নিলাম আহ্বান করা হয়। তবে ওই নিলামেও কোন বিডার অংশ নেননি। এদিকে সংসদীয় সাব-কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপের শত শত বিঘা জমি রয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ জমি কেউ একবারে কিনতে চায় না। এজন্য নিলাম আহ্বান করলেও কোন সাড়া মেলেনি। গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজও রয়েছে অনেক। এ কারণে সংসদীয় সাব-কমিটি মনে করছে এই জমি যদি খ- খ- করে নিলাম আহ্বান করা হয় তাতে বিক্রি হবে। এছাড়া মেশিনারিজও আলাদা বিক্রির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবে যতটুকু টাকা উদ্ধার করা যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলেছে কমিটি। কমিটির আরেক সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জড়িত বলে কমিটি অনুমান করেছিল হলমার্ক গ্রুপের এমডি বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন কি-না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এমডি তানভির মাহমুদ সিঙ্গাপুর ছাড়া কোন দেশ সফর করেননি। তিনি জমি কিনতেই অর্থ লগ্নি করেছেন। একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে না বলে কমিটি জমি ও মেশিনারিজ আলাদাভাবে নিলামের মাধ্যমে বিক্রির সুপারিশ করেছে। এভাবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ঋণের তুলনায় জমি বিক্রি করে যথেষ্ট অর্থ আদায় করা সম্ভব হবে না। এরপরও অর্থ আদায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি। এ বি তাজুল ইসলাম জানান, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কয়েকজন কারারুদ্ধ আছেন এবং কয়েকজন পলাতক। একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বলেন, তারা যে অপরাধ করেছেন তাতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রচলিত আইনে যদি যথেষ্ট পরিমাণে শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়া যায় তাহলে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে কমিটি। তিনি বলেন, কমিটি যত দ্রুত সম্ভব ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াসহ অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে।
×