ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষস্থানীয় এক নেতা এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে খুঁজছে পুলিশ

জয় হত্যা চেষ্টা মামলা ॥ শফিক রেহমান গ্রেফতার ও ৫ দিনের রিমান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

জয় হত্যা চেষ্টা মামলা ॥ শফিক রেহমান গ্রেফতার ও ৫ দিনের রিমান্ড

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা চেষ্টার মামলায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে তার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের ১৫নং বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়াও ডিবি পুলিশ বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বিএনপিপন্থী একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে। ২০১৩ সালে শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়। শফিক রেহমান জামায়াত-বিএনপিপন্থী সাংবাদিক। ব্রিটিশ নাগরিক তিনি। তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের দূতাবাসে জানানো হয়েছে। ডিবি পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গ্রেফতার বিষয়ে শফিক রেহমানের পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার সকাল সোয়া ৮টায় রাজধানীর রমনা থানাধীন ইস্কাটনের ১৫নং নিজবাড়ি থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের আগে সকাল ৬টার দিকে বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয়ে সাক্ষাতকার নেয়ার কথা বলে তার বাড়িতে যায় দুইজন ডিবি পুলিশ সদস্য। এর আধাঘণ্টা পর আরও একজন একই পরিচয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। সকাল ৬টার দিকে বাসার মূল গেটে প্রথমে ধাক্কা দেন দু’জন। বাড়ির কেয়ারটেকার জানান, তাদের বলি এখনও তো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। তারা বলে গেট খোল। এরপর তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে বসতে দিয়ে স্যারের বাসায় খবর পাঠাই। ইস্কাটনের বাড়ির কম্পাউন্ডে সামনের দোতলা বাড়িতে ডেমোক্রেসিওয়াচের কার্যালয়, সেখানেই তিন পুলিশ সদস্যকে বসিয়ে চা-নাশতা দেয়া হয়। পেছনে তিনতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় সপরিবারে থাকেন শফিক রেহমান। ওই তিনজন একটি কার্ড তার হাতে দিয়ে তা তিন তলায় শফিক রেহমানকে পৌঁছে দিতে বলেন। ডিবি পরিচয়ে আগন্তুকরা বলেন, ওই টিভিতে শফিক রেহমানের অনুষ্ঠান আছে। তাকে নিয়ে যেতে এসেছেন। বাসার কেয়ারটেকার আবদুল মতিন মোল্লা বাসার পেছনে তিন তলা ভবনের নিচতলায় বসান তাদের। তিন তলায় থাকা শফিক রেহমানকে বিষয়টি জানানো হয়। তাদের নাশতা দিতে বলেন তিনি। তারা তিনজন নাশতা খান। নাশতা খাওয়ার পরও শফিক রেহমান আসছেন না, তিন তলায় থেকে নামতে দেরি হয়। তারা সকাল ৮টার দিকে বাবুর্চি আলীকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে উপরে যেতে বলেন। বাবুর্চি আলী উপরে উঠতে শুরু করেন। তারা তিনজনও তার পেছনে পেছনে দোতলা পর্যন্ত উঠে যান। এ সময় শফিক রেহমান নিচে নামতে থাকেন। বাসার কেয়ারটেকার আবদুল মতিন বলেন, শফিক রেহমান দোতলায় নামার পর ওই তিনজন পরিচয় দেন তারা ডিবির লোক। এরপর তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। এ সময় বাবুর্চি আলী ও তিনি বাধা দেন। তারা ডিবি পরিচয় দিয়ে বলেন, তুই আসবি না। বাসার সামনে দাঁড়ানো ছিল মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসযোগে সকাল আটটার দিকে শফিক রেহমানকে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার ভোর পাঁচটা থেকে শফিক রেহমানের বাড়ির সামনে মাইক্রোবাসটির অবস্থান ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তারপরই সকাল ছয়টার দিকে তিন ব্যক্তিকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তারপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের পরিচয় দিয়ে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কাছে ফোন যায়। তালেয়া রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, শফিক রেহমানের জন্য নাশতা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়। তারপর ডিবি কার্যালয়ে তা পাঠানো হয়। তিনি কোলেস্টরেল ও ডায়বেটিসে আক্রান্ত। দুপুর ১২টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান স্ত্রী তালেয়া রেহমান। গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকেও একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী পরিচয় দিয়ে দুইজন ব্যক্তি এসে শফিক রেহমানের খোঁজ নিয়েছিলেন। তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। শনিবারও বেসরকারী বৈশাখী টেলিভিশনের পরিচয় দিয়ে ডিবির সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। স্ত্রী তালেয়া রেহমান যা বলেন ॥ শফিক রেহমানের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। তাকে ডিবি গ্রেফতার করার বিষয়টি ব্রিটিশ দূতাবাসে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাকে। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ওই বাড়ি থেকে শফিক রেহমানকে তুলে নিতে ডিবির তিন সদস্য বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসেছিলেন বলে জানান ডেমোক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া। তিনি বলেন, টিভির বদনাম হয়ে গেল; আর (বাসায়) আসতে দেব না। তালেয়া রেহমান বলেন, স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা তিনি জানানোর পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেছিলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তার আধাঘণ্টা পর তাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে পুলিশ। কোন প্রকার এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই এত সকালে সাংবাদিকদের বাসায় আসার খবর শুনে সন্দেহ হলেও এ নিয়ে তখন কাউকে কিছু বলেননি বলে জানান তিনি। তালেয়া রেহমান বলেন, বৈশাখী টিভির কথা বললেও তাদের হাতে ছোট একটি ক্যামেরা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। অবাক হলাম, একটু সন্দেহও হয়েছিল। পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ॥ শনিবার বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলামের আদালত। পল্টন থানায় গত বছরের আগস্টে দায়ের হওয়া ওই মামলায় সকাল ৮টায় ডিবি পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে শফিক রেহমানকে। গ্রেফতারের পর রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ২টার দিকে তাকে নিয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতের উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয় শফিক রেহমানকে। বিকেল ৩টায় আদালতের এজলাসকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। আদালতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এএসপি হাসান আরাফাত। শফিক রেহমান বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো দেখতেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। জামিনের আবেদন ॥ সাংবাদিক শফিক রেহমানের জামিনের আবেদন করেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা সানাউল্লাহ মিয়াসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। জামিন আবেদনের শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, এজাহারে তার নাম নেই। ষড়যন্ত্রেও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মামলার কাগজপত্রে নেই। আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে আর মামলা হলো এখানে। এফআইআর (প্রাথমিক তথ্যবিবরণী) এ কলামে ঘটনা দেখানো হয়েছে বিএনপি কার্যালয়ে। এ মামলায় শফিক রেহমানকে আটক রাখা অনুচিত বলেন তিনি। ২০১৫ সালে করা ওই মামলায় শফিক রেহমানকে সাত দিন হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত। ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম জামিনের আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের আবেদনে সায় দিয়ে ৫ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। যা বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা ॥ ডিবির উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার দাবি করেন, শফিক রেহমান ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। ডিবির অপর উপকমিশনার (ডিসি) মাসরুকুর রহমান খালেদ জানান, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা চেষ্টার প্রেক্ষিতে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটিতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাদের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছিল ওই মামলায়। এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পল্টন থানার এসআই মোজাম্মেল হক। পরে মামলার তদন্ত ভার পায় ডিবি পুলিশ। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলার ঘটনায় শফিক রেহমানের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পান তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে আসামির তালিকাভুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন বলে জানান ডিবির ডিসি মাসরুকুর রহমান খালেদ। শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পরিকল্পনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও উপস্থাপক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মোঃ মারুফ হোসেন সরদার। বর্তমানে তাকে রাজধানীর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ডিবির কর্মকর্তারা। ডিবির ডিসি মোঃ মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, ২০১৫ সালে পল্টন থানায় দায়ের করা জয়কে অপহরণের পরিকল্পনার একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শফিক রেহমানকে আটকের পরপরই আটকের খবর স্বীকার করে পুলিশ। তার গ্রেফতারের আধাঘণ্টা পর ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে পল্টন থানায় করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। শফিক রেহমানের সংক্ষিপ্ত কর্মজীবন ॥ শফিক রেহমানকে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তালেয়া রেহমান বলেন, সাড়ে ৮টার দিকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক বাসায় ঢোকে। তারা জানান, আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। শফিক রহমানকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। ওই কার্যালয়ের সামনের সড়কটিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। শফিক রেহমান বর্তমানে নানা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করছেন। তবে গত শতকের ৮০ এর দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন সম্পাদনার মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। শফিক রেহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘মৌচাকে ঢিল প্রকাশিত হয়। বিএনপিন্থী সাংবাদিক হিসেবে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় যায়যায়দিন পত্রিকা বের করার জন্য বিশাল জমির প্লট দেয় তাকে বিএনপি। বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকার ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এর মধ্যে দৈনিক যায়যায়দিন বের করলেও বেশি দিন চালাতে না পেরে তা বিরাট অঙ্কের টাকায় যায়যায়দিনের স্বত্ব বিক্রি করে দেন তিনি। সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের রোষানলে পড়ে তাকে বাংলাদেশ ছাড়তেও হয়েছিল। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে কাজের সুবাদে শফিক রেহমান ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এরশাদের পতনের পর ফের বাংলাদেশে ফেরেন। এর দেশ ছাড়ার পর বিবিসিতে কাজ করে আসা এই সাংবাদিক। ‘লাল গোলাপ’ নামে একটি অনুষ্ঠান নিয়ে এখন সম্প্রচার মাধ্যমে সক্রিয় তিনি। খালেদা জিয়ার নানা কর্মসূচীতে তাকে দেখা যায় তাকে। বিএনপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা এত বেশি গড়ে উঠতে দেখা যায় যে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিভিন্ন সময়ের ভাষণ তার লেখা বলে বিভিন্ন মহলে প্রচার করে দেয়া হয়। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার মালিক ॥ শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক। প্রখ্যাত অধ্যাপক সাইদুর রহমানের ছেলে তিনি। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচ বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষাবলম্বন করে আসছে। ডেমোক্রেসি ওয়াচ নামক নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি মূলত একটি এনজিও হিসেবে কাজ করে আসছে। শফিক রেহমানকে ইস্কাটনের যেই বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই বাড়ির গেটের সামনেও সাইনবোর্ড টাঙানো আছে ডেমোক্রেসি ওয়াচ। মামলার বিবরণ ॥ রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের পরিদর্শক ফজলুর রহমান পিপিএম, বিপিএম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১। তারিখ- ৩ আগস্ট ২০১৫ইং। মামলায় বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এমন ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশেও সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়। তবে মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপি এবং জোটের শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতার যোগসূত্র থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতরা দেশ-বিদেশে অবস্থান করে অর্থের যোগান দিয়েছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনকে গ্রেফতার করতে প্রয়োজনে সে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি ও ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাজা ॥ যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের করা মামলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারের সাড়ে ৩ বছর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) প্রাক্তন স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায় লাস্টিকের বন্ধু জোহান্স থ্যালারের আড়াই বছর সাজা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন। দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন। ২০১১ সালের আগ থেকেই সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র চলছিল। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। বাংলাদেশে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতারা সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত। যদিও মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার ঘটনায় মামলা হয় দুটি। প্রথম মামলাটি দায়ের হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে মামলা হওয়ার পর তদন্ত করে মামলা করা হয় ঢাকার পল্টন থানায়। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞপ্তি ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে পুলিশ সদর দফতর বলছে, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য রিজভী আহমেদ সিজারের কাছ থেকে এফবিআইয়ের প্রাক্তন স্পেশাল এজেন্ট লাস্টিক ও তার বন্ধু থ্যালার কমপক্ষে এক হাজার ইউএস ডলার গ্রহণ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় এবং বাংলাদেশের পল্টন থানাধীন জাসাস অফিসে বসে জয়কে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা হয়। পল্টনের জাসাস অফিসে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতা জড়িত। যারা বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। এমনকি পরিকল্পনার সময়ও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করেই জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। বাংলাদেশের পরিকল্পনাকারীরা জয়কে অপহরণের পর হত্যা করতে মোটা অঙ্কের টাকারও যোগান দিয়েছেন। গত ২৭ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে জানানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য ও অভ্যন্তরীণ দলিল সংগ্রহের চেষ্টা চলার তথ্য প্রকাশ পায়। জয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) একজন প্রাক্তন বিশেষ এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক (৫২) ও তার বন্ধু জোহান্স থ্যালার (৫১) এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার (৩৬) জড়িত। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ফেসবুকের স্ট্যাটাসে ॥ গত ৯ মার্চ সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লেখেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেই আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, ‘যে আদালতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের সাজা ঘোষণা হয়। সজীব ওয়াজেদ জয় আরও উল্লেখ করেন, তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার করার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব জড়িত। তথ্য সংগ্রহ করতে সাজাপ্রাপ্ত সিজার মাসে ৪০ হাজার ইউএস ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রথম দফায় তথ্য ফাঁসকারীদের ৩০ হাজার মার্কিন ডলার নগদ প্রদান করেন সাজাপ্রাপ্ত সিজার। মামলাটির তদন্ত চলায় নৈতিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করতে পারেন না বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বিএনপি তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পূত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পুলিশ সদর দফতরের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি অবহিত করেন। এমনকি সজীব ওয়াজেদ জয় বিএনপি হাই কমান্ড তার ক্ষতি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ মে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় পুলিশের তরফ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি হয়। যার নম্বর ২২৭২। প্রায় দুই মাস ধরে সাধারণ ডায়েরির তদন্ত চলে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়। পাশাপাশি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আদালতের কাছে মামলা দায়েরের অনুমতি চাওয়া হয়। আদালত মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়। সেই অনুমতির ভিত্তিতেই পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র ॥ মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোন সময় থেকে তদন্তকালীন সময় পর্যন্ত বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ঢাকার পল্টনের জাসাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আসামিরা একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করে। ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির জোটভুক্ত অন্যান্য দলের কতিপয় শীর্ষ নেতা রিজভী আহমেদ সিজারকে দায়িত্ব দেয়। পাশাপাশি দেশে ও বিদেশী অবস্থানকারী পরিকল্পনাকারীরা রিজভী আহমেদ সিজারকে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দেশ-বিদেশী থেকে অর্থের যোগান দেন।
×