ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমেছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ মন্দার কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের চিরচেনা সেই সরগরম নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ছাড়া বেশিরভাগেরই বিনিয়োগকারীদের চেয়ার থাকে শূন্য। এর আগে বড় ধরনের উর্ধগতির পর ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বড় ধরনের দরপতন ঘটে পুুঁজিবাজারে। সরকারের নানা উদ্যোগেও বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। উল্টো আস্তে আস্তে বিনিয়োগকারীদের পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে। এক কথায় গত সাড়ে ৫ বছর ধরে মন্দার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাজার। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজি খুইয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারীরা। মতিঝিলের কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাউসগুলো প্রায় ফাঁকা। বেশিরভাগ চেয়ারই তুলে রাখা হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটা চেয়ার থাকলেও বিনিয়োগকারী নেই বললেই চলে। এটি মাত্র একটি দিনে চিত্র নয়। পাঁচ বছর ধরেই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে। মাঝে মধ্যে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও আবারও শূন্য হয়ে পড়ছে। নতুন কোম্পানি বাজারে নতুন করে আসলে কিছু বিনিয়োগকারী বাজারে আসে আবার তারা ফিরে যায়। অথচ ২০০৯ ও ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে গমগম করত হাউসগুলো। ধস শুরু হওয়ার আগে বসার জায়গা পেতে রীতিমতো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত। লেনদেন শুরুর অনেক আগেই হাজির থাকতেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের। নতুন নতুন শাখা খোলা শুরু হয়। ইলেক্ট্রনিক শেয়ার সংরক্ষণ ও লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপেজটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ। গত ৫ বছরে এ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ লাখ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখে। ৩২ লাখ বিও এ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী থাকলেও বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। আর আগ্রহ না থাকার কারণে তারা বাজারমুখীও হচ্ছেন না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজার ভাল হবে এমন আশাবাদ নিয়ে অপেক্ষা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বার বার তারা আশাহত হয়েছেন। এ কারণে বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ একেবারে কমে গেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের হাউসে আসাও কমে গেছে। তবে পুরোনো বিনিয়োগকারীদের অনেকেই মোবাইলে লেনদেন করছেন বলে জানান তিনি। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর সাধারণ সূচক ছিল ৮৯১৮ পয়েন্ট। আর ওইদিন লেনদেন হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। সাড়ে ৫ বছর পর এখন লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। বৃহস্পতিবারে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪১২ কোটি টাকা। আর বুধবারে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৮৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালের তুলনায় লেনদেন নেমে এসেছে এক-দশমাংশে। অথচ গত সাড়ে ৫ বছরে বাজারে নতুন নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। অথচ সেই হারে সেখানে লেনদেন বাড়েনি। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের সেই আস্থাটি এখনও ফেরেনি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই নাহরীন বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নতির কোন লক্ষণ নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা তাদের লোকসান মেনে নিয়ে বাজার থেকে চলে যাচ্ছে। অথচ নতুন বিনিয়োগকারী আনার ব্যবস্থা না করে একের পর এক নতুন কোম্পানি বাজারে আনা হচ্ছে। এতে চাহিদার অভাবে সেকেন্ডারি মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়টা বুঝতে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। তাই নতুন কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে সবার আগে পুঁজিবাজারে অবাধ অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলেন নতুন শেয়ার নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করে। অথচ ২০১০ সালের পরে ৭৭টা কোম্পানি আনা হলেও লেনদেন আগের জায়গায় তো নেই বরং আরও কমেছে। তাহলে নতুন বিনিয়োগকারী আসল কী ভাবে?’ তিনি বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয়-ব্যয় সমান হতে ডিএসইতে দৈনিক ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হওয়া দরকার। অথচ এখন হয় ৩০০ কোটি টাকা। যাতে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউস লোকসান গুনছে। ছাঁটাই করতে হচ্ছে কর্মী। আনোয়ার সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আজম খান বলেন, ২০১০ সালে যে ধস হয়েছে তা থেকে পুনরুদ্ধার হয়নি। বাজারে এখনও মন্দা বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ কমে গেছে। যাতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে গেছে। বর্তমানে যে পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে তাতে হাউসগুলোর পক্ষে মুনাফা করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
×