ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বারকাতের বই প্রকাশনা

‘আগামী প্রজন্ম যাতে অর্থলুটেরা, চাটুকার না হয় এমন বিপ্লব চাই’

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

‘আগামী প্রজন্ম যাতে অর্থলুটেরা, চাটুকার না হয় এমন বিপ্লব চাই’

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ দারিদ্র্য। এছাড়া সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের বেকার থাকার কারণও এই দারিদ্র্য। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ সুপেয় নিরাপদ পানির অভাবে প্রায় আট কোটি মানুষ মারাত্মকভাবে আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবছরই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যে নয় লাখ মানুষ মারা যান, তার মধ্যে সংখ্যার হিসেবে সব থেকে বেশি রয়েছে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু। অধ্যাপক আবুল বারকাত গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। এই পরিচিতি অত্যন্ত দুর্লভ এক সম্মানের বিষয়। রেন্ট সিকারদের বিষয়ে অধ্যাপক বারকাত এই গবেষণাগ্রন্থে বিদগ্ধ এক আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। সংবিধানকে সামনে রেখে বারকাত যেসব বিশ্লেষণ করেছেন তা ভিন্নধর্মী। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতার কারণ-পরিণাম ও উত্তরণ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসবে গ্রন্থ পর্যালোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অজয় রায়। গ্রন্থটির রচয়িতা গণমানুষের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই-মাহবুব, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ঢাবি) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাপানের রিক্কো বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাবির জাপান স্টাডি সেন্টারের অতিথি অধ্যাপক সাই কুরাসাওয়া এবং নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অধ্যাপক আবুল বারকাত তার গ্রন্থে একটি শ্রেণীর কথা বলেছেন। যারা তার মতে রেন্ট সিকার। এই রেন্ট সিকার অর্থ হলো সমাজের অর্থলুটকারী, চাটুকার, দালাল প্রভৃতি। এখন আমাদের ভেবে দেখা উচিত, আমরা কে কোন্ অর্থের সঙ্গে মিলে যাই। সুতরাং, আমাদের আত্মশুদ্ধির জন্য একটি বিপ্লব সৃষ্টি করতে হবে। যে বিপ্লব হবে, যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান সময়ের শিশুদের আবুল বারকাতের মতো মানুষের জীবনদর্শনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া। যাতে আগামী প্রজন্ম রেন্ট সিকার না হয়। পিকেএসএফ-এর অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, পৃথিবী এখন চরম উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। সেটা প্রযুক্তির দিক থেকে যেমন তেমনি সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও। কিন্তু এর মাঝে কিছু অসহনশীল মানুষ আছে যারা উন্নতিকে নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো, এমন অবস্থায় টেকসই উন্নয়নের যে কথা আজকাল বলা হচ্ছে সেটি কি সম্ভব? প্রশ্ন করেন তিনি সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন এই উন্নয়ন শুরু হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে থেকে। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণমানুষের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত বরাবরই প্রথাগত অর্থনীতিচর্চার বাইরে বেরিয়ে নির্মোহ গবেষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক-অর্থনীতির অউন্মোচিত দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরছেন। দেশে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা কেন বাড়ছে তার কারণ-পরিণাম বিশ্লেষিত হয়েছে। এতে লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে এবং দুর্বৃত্তায়নের সুযোগে গুটিকয়েক সমস্বার্থগোষ্ঠীর ‘রেন্ট সিকার’রা অঢেল বিত্তসম্পদের মালিক হয়েছেন। নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, আবুল বারকাত সাহসী লেখক। তার প্রতিটি বই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত। যে সমস্যগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সেই মৌলবাদের অর্থনীতি নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন, লিখেছেন। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা বিশ্লেষণী গবেষণা গ্রন্থটি ভিন্নধর্মী। বারকাতের গ্রন্থ আমাদের সবার চিন্তাচেতনার জগতকে আলোড়িত করবে। এর মাধ্যমে আমরা জীবনের এক ভিন্ন মাত্রার সঙ্গে পরিচিত হই।
×