ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ব্যতিক্রমী বৈশাখী আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

বগুড়ায় ব্যতিক্রমী বৈশাখী আয়োজন

সমুদ্র হক ॥ বর ও কনে পথে নেমে এসেছে। একেবারে বিয়ের আসরের সাজগোজে। কেউ হেঁটে কেউ পালকিতেও চড়েছে। ড্রাম ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গীতে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। তাও একজোড়া দুই জোড়া নয় অনেক। শহরের মানুষ ও পথচারীরা অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। প্রবীণ ও মধ্যবয়সীদের কেউ বলাবলি করছেন- ‘কলি কাল, একেবারে ঘোর কলি...’। কিছুক্ষণ পরই যখন বিষয়টি পরিষ্কার হয় তখন তারাই আবার অট্টহাসিতে মেতে ওঠেন। কেউ এ ধারণাকে প্রশংসিত করেন। প্রধান সড়কে বর-কনেদের পরই ছিল মাছধরার জাল, পলো-খলই ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে জেলে ও জেলেনীরা(!)। কারও হাতে ছিল কলসি। ভাবখানা ওই গানের মতো- ‘মেরো না কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেবো না!’ সবচেয়ে মজার ছিল বর ও কনেদের প্রধান সড়ক পরিভ্রমণ। এ যুগের বর-কনেরা ফুলে সাজানো মোটর গাড়িতেই চড়ে যায়। এরা যখন হেঁটে ও সেদিনের পালকি নিয়ে পথ চলছে তখন অনেকেই বলেছে বাঙালীর সে-ই চিরচেনা ঐতিহ্য ফিরে এসেছে। বাঙালীর চিরন্তন ঐতিহ্য দিয়ে টিকে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে বগুড়ায় বর্ষবরণের এমন আয়োজন সকলকেই মুগ্ধ করে। একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা বর-কনের পোশাক পরে নববর্ষের ব্যতিক্রমী র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করে। এরা যখন পথ প্রদক্ষিণ করে তখন বাজছিল সাঁনাইয়ের সুর। কোন বর মুখে রুমাল দিয়ে কনেরা ঘোমটা টেনে লাজুকতার ভানও করে। কৌতুহলী পথচারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে কেউ কাছে গিয়ে বলে- ও বর ও বউ কথা কওনা ক্য! কেউ বলে ডাক্তারি পড়তেই কি সুন্দর বর-বউ সেজেছে। মধ্যবয়সীদের কেউ নস্টালজিক হয়ে স্মৃতিতে অতীতকে ফিরে পেয়ে একটু বেশি শ্বাস নিয়ে বলে ‘ছেলেবেলায় আমরাও কত বর-বউ খেলেছি...’। বাঙালীর গভীরের সংস্কৃতির চিরন্তন রূপটি নানাভাবে এই দিনে ধরা দিয়েছিল বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে। এবারের র‌্যালিতে ছিল সাজগোজের কতই না বাহার। বর-কনেদের বিয়ের আসরের এমন সাজ দেখে কৌতুহলীরা বলেন, আজ ওরা বর-বধূ খেলছে সত্যিকারের বিয়ের অনুষ্ঠান যদি গ্রীষ্মে হয় সেই গরম সয়ে নেয়ার রিহার্সালও হয়ে গেল। কথার কি শেষ আছে... কেউ বলে বর-বধূর ছদ্মবেশের র‌্যালি যখন বাস্তব জীবনের র‌্যালি হবে তখন হানিমুন হবে কম্পাউন্ড ফ্রাকচার। একেবারে ডাক্তারি উপমা।
×