ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রীর টিভি কাভারেজের জন্য জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

নেত্রীর টিভি কাভারেজের জন্য জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে টেলিভিশনে দেখা যাবে না। ভাল হবে না ম্যাডামের টেলিভিশন কাভারেজ। নেত্রীর কাভারেজের আকাক্সক্ষা পূরণে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তাই দাঁড়িয়ে নয়, বসে বসে গাওয়া হলো জাতীয় সঙ্গীত! পহেলা বৈশাখে দেশ-বিদেশে যখন বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয়া হচ্ছিল নানা আয়োজনে, তখন বিএনপির বদৌলতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনেকটা সংবাদ মাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিয়েই ঘটে গেল দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক আরেকটি ঘটনা। যার ভিডিও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে অবমাননা করা হলো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীতকে। কেবল খালেদা জিয়ার ক্যমেরা কাভারাজের সুবিধার্থে একদল নারী নেত্রীকে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে মাটিতে বসে থাকতে বাধ্য করা হলো। রাজপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই দিনে-দুপুরে রচিত হয়েছে এই স্ক্যান্ডাল। যেখানে এ কাজ করতে নির্দেশ দেন দলের শীর্ষ নেতারা। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার ভিডিওতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি নেতাদের কয়েকজনের কর্মকা-। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ অপকর্মের জন্য বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে কয়েক নেতার চাটুকারিতায় ভরপুর মনোভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময় প্রথমে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য নেতারা যখন দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করছিলেন, সামনে বসে থাকা নারীরাও একই সময় দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে সবাইকে অবাক করে দিয়ে শীর্ষ কয়েক নেতা ধমক দিয়ে তাদের বসে থাকার নির্দেশ দেন। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদার চেয়ে ক্যামেরা কাভারেজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিংবা ম্যাডামের বাড়তি সুনজরের আশায় নেতারা এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ। ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হলেও নেত্রীকে খুশি করাতেই ব্যস্ত ছিলেন মঈন খানসহ অন্যান্য নেতা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অবশ্য লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছিলেন। বর্ষবরণে বিগত দিনে এই ঢাকাতেই নারীর শ্লীলতাহানির দায় সরকারকে নিতে হয়েছে। এবার সে রকম কিছু না হলেও জাতীয় সঙ্গীতের চরম মর্যাদাহানি ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাস আয়োজিত বৈশাখী অনুষ্ঠানে। এদিকে, এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাসেল আকতার তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা রক্ষা যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব, তাই বাংলা বছরের প্রথম দিনে নয়াপল্টনে ঘটে যাওয়া এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য বেগম খালেদা জিয়াসহ জাসাস ও বিএনপিকে অবশ্যই দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অবশ্য এই নেতা-নেত্রীদের কাছে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকার কোন মূল্য আছে বলেও মনে হয় না।’ ইমরাম লিখেছেন, ‘এ অপকর্মের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কারণ তিনি চাইলেই মওদুদ বা অন্যান্য নেতাকে একবাক্যেই থামাতে পারতেন। আসলে ওই নেত্রীই নিজেকে টেলিভিশনে দেখানোর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তার মাথায় ছিল কেবল টেলিভিশন কাভারেজ।’ অনেকে নেত্রীর পাশে থাকা নেতা ও জাসাসের সদস্যদের সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বিএনপির নেতা-নেত্রীরা যেমন তাদের শিল্পীরা আর কী হবে। রোকসানা হাসান ঘটনার সমালোচনা করে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘নেত্রী তো তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতেই বলতে পারতেন এই মেয়েরা চুপ করো! তোমরা বসে আছো কেন বেয়াদব!’ সুকুমার লিখেছেন, ‘জাতীয় সঙ্গীত যে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে গাইতে হয় তা তো ওনাদের জানতে হবে ভাই। এসব করার সময় কই তাদের। ওনারা ব্যস্ত ছিলেন টেলিভিশনে কাভারেজ নিয়ে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার প্রেক্ষপটে দু-একজন নেত্রী অবশ্য ঘটনার জন্য শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন। ঘটনার সময় সামনে বসতে বাধ্য হওয়া এক নেত্রীকে শুক্রবার দুপুরে ফোন করা হলে তিনি বলছিলেন, ভাই ঘটনাটা নিয়ে যা হচ্ছে তাতে আমরা লজ্জিত। আমরা তো ইচ্ছা করে সেখানে বসে পড়িনি। আমরা দাঁড়িয়েই জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলাম। কিন্তু নেতাদের বকাঝকায় আমাদের কী করার ছিল? ছাত্রদলের সাবেক এ নেত্রী অবশ্য স্বীকার করেন, এটা করা আমাদের দলের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। এদিকে, জাসাসের অনুষ্ঠানে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। মঞ্চে সুদৃশ্য চেয়ারে বসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। পরনে লাল পাড়ের শাড়ি, বৈশাখী সাজে রঙিন হয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন গান। ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ শীর্ষ নেতারা। জাসাসের সদস্যদের মধ্যে বেবী নাজনীনের পাশাপাশি ছিলেন হাসান চৌধুরী, পিয়াল হাসান, মনির খান, পলি শারমীন, শুভ্র আসাদ, শাহজাদী কোহিনুর পাপড়ি, মুন, রেখাসহ সংগঠনের শিল্পীরা। শুভেচ্ছা বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, জাসাসের বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
×