ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসবে পুণ্যার্থীদের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসবে পুণ্যার্থীদের ঢল

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী পুণ্য স্নান উৎসব বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪৭ মিনিট ৫ সেকেন্ডে শেষ হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বুধবার রাত ৩টা ৩৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে স্নানোৎসব শুরু হয়। স্নানোৎসবে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এবার স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৭-৮ লাখ পুণ্যার্র্থী স্নান সম্পন্ন করেছে বলে স্নান উদযাপন কমিটির নেতৃত্বরা জানান। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, ডিবি ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ১২শ’ সদস্য। কাঠফাটা রোদ ও ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে বুধবার গভীর রাত থেকে পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দে আসতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের দিনভর পুণ্যার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন হওয়ায় স্নান উদযাপন কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র হে লোহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ এই মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরতকী, ডাব, আম্রপল্লব সহযোগে প্রতিবারের মতো এবারও পুণ্যার্থীরা স্নান সম্পন্ন করেছেন। লগ্ন শুরু হয়েছিল বুধবার রাত ৩টা ৩৪ মিনিটে ৩২ সেকেন্ডে। শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪৭ মিনিট ৫ সেকেন্ডে। পাপ মোচনের আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পুণ্যার্থী নর-নারীদের স্নানোৎসবে যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ব্রক্ষপুত্র নদ এলাকায়। পাপ মোচন ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের আশায়ও এসেছেন পুণ্যার্থীরা। গত বছরের ২৭ মার্চ স্নানোৎসবে বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে পদদলিত হয়ে ১০ পুণ্যার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর সরকারসহ বিভিন্ন মহল তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশক্রমে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যদিও ইতোমধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়, নদের কুচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়াও প্রায় দু’ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ছিল। বসানো হয়েছিল পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার। স্নান উদযাপন কমিটি নেতৃবৃন্দরা জানান, এবার ললিত সাধুর ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজ ঘাট, কালীগঞ্জ ঘাট, মা কুঁড়ি সাধুর ঘাট, মহাত্মা গান্ধী ঘাট, বড় দেশ্বরী ঘাট, জয়কালী ঘাট, রক্ষাকালী ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, চর শ্রীরাম ঘাট, সাবদি ঘাট, বাসনকালী ও জগৎবন্ধু ঘাটসহ ১৬টি ঘাটে স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সরোজ সাহা জানায়, এবার শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীসহ বাসিন্দাদের প্রচেষ্টায় নির্বিঘেœ পুণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এজন্য তিনি সরকারসহ সকলকে ধন্যবান জানান। তিনি আরও জানান, পহেলা বৈশাখের দিনে স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কিছুটা পুণ্যার্থীর আগমন কম হয়েছে। তারপরও এবার দেশ-বিদেশ থেকে ৭-৮ লাখ পুণ্যার্থীর স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছে। যশোর থেকে স্নানোৎসবে ছুটে আসা শ্রী উজ্জল চন্দ্র প্রধান জানান, তিনি বোন, বোন জামাই, ভাগ্নেদের নিয়ে স্নান করতে এসেছেন। এবারই সে প্রথম এসেছে। শান্তিপূর্ণভাবেই স্নান সম্পন্ন করতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। পুণ্যার্থী শ্রী ধীরেন্দ্র নাথ জানান, তিনি বি-বাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছেন। এবার কোন সমস্যা হয়নি। নির্বিঘেœ ও নির্ভয়ে স্নান করতে পেরেছেন। পাপ মোচন ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের আশায়ও তিনি স্নান করতে এসেছেন। পুণ্যার্থী প্রকৌশলী সমীর চন্দ্র ভৌমিক জানান, এবার স্নান স্থানে ছিল সুশৃঙ্খল। নদের পানিতে কুচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার খুবই ভাল পরিবেশ সৃষ্টি ছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নানের নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল ৯৭৫ জন পুলিশ, ২৮০ জন আনসার, ১৫০ স্বেচ্ছাসেবক ও র‌্যাবসহ ১২শ’ সদস্য। আল্লাহর রহমতে কোন অঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে স্নানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। এবারের স্নানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে একজন নারীসহ ৫ পকেটমারকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পুরো লাঙ্গলবন্দ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। পুরো দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছিল সিসি ক্যামেরা। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য ছিল ওয়াচ টাওয়ার। মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে খোলা হয়েছিল পুলিশের কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে সব কিছু মনিটরিং করা হয়েছে। যানজট এড়াতে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোন যানজটের সৃষ্টি হয়নি।
×