ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালী বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে সরকারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

বাঁশখালী বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে সরকারের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে বাঁশখালী যাচ্ছেন বিদ্যুত বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। এস আলম গ্রুপের বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশের বিরোধে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকার এই ঘটনার পর সরাসরি আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। আজ শনিবার চট্টগ্রাম এবং আগামীকাল রবিবার বাঁশখালিতে পৃথক দুটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ড. আহমেদ কায়কাউস এবং মহাপরিচালক পাওয়ার সেল মোহাম্মদ হোসাইনকে গত বুধবার চট্টগ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে তাদের একটি প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়। অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা শুনছি সেখানে একটি পক্ষ কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কেউ কেউ অপপ্রচার করছে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র হলে ‘মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায়’। সাধারণ মানুষকে এ ধরনের বিভ্রান্তি থেকে দূর করতে আমরা কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করব। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভূমি সংক্রান্ত কোন জটিলতা হলে তা দেখার দায়িত্ব ভূমি প্রশাসনের। এরপরও সাধারণ মানুষ তেমন কোন অভিযোগ করলে আমরা তা ভূমি প্রশাসনকে অবহিত করব। তবে এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ জমি কেনা-বেচা নিয়ে অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম-এর সম্মেলন কক্ষে এবং রবিবার সকাল ১১টায় বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা দু’টি অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা বিদ্যুত ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এস আলম গ্রুপ পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উল্লেখ করলেও স্থানীয়রা আন্দোলনের মধ্যে থাকার কথা জানিয়েছে। তবে এর আগে কর্মসূচী ঘোষণা করেও তা স্থাগিত করে স্থানীয়রা। এস আলম গ্রুপ অবশ্য ঘটনার জন্য তাদের কোন দায় নেই উল্লেখ করেছে। তারা নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নিয়ে স্থানীয় জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে। একটি গ্রুপ বাঁশখালীতে গিয়ে বলছে, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে এই এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তারা বলছে, নাইট্রোজেন অক্সাইড (নক্সস), সালফার অক্সাইডের (সক্সস) এবং ফ্লাই এ্যাশ (ছাই) পরিবেশকে দূষিত করে তুলবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়লার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেয়া মানদ- অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইড (নক্সস) ৫১০ মিলিগ্রাম থাকার কথা সেখানে দেশের প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্রে তা ৩৫০ মিলিগ্রামের নিচে রাখা হবে। একইভাবে সালফার অক্সাইডের (সক্সস) অনুমোদিত মাত্রা ঘনমিটার প্রতি ২০০ থেকে ৮০০ মিলিগ্রাম তা ২০০ এর নিচে রাখা হবে। আর বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর পর ছাই এর ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ধরে ফেলা হবে। এদিকে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের অপপ্রচারে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। মহল বিশেষ সবখানেই অপপ্রচার চালিয়ে উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এখানে বেসরকারী খাত আড়াই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা আমাদের সক্ষমতার বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
×