ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছরে দশ ব্লগার খুন, বিচার শেষ হয়নি একটিরও

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

তিন বছরে দশ ব্লগার খুন, বিচার শেষ হয়নি একটিরও

আরাফাত মুন্না ॥ তিন বছরে দশ ব্লগার খুন হওয়ার মামলার একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে একমাত্র আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় হওয়ার পর উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে কোনটি রয়েছে বিচারিক আদালতে শুনানির পর্যায়ে আবার কোনটির চার্জশীটও দাখিল হয়নি এখনও। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি সংশ্লিষ্টদের। সূত্রমতে, ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলাটি বিচারের প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে। বগুড়ায় জিয়া উদ্দিন জাকারিয়া বাবু হত্যার ঘটনায় তিন শিবিরকর্মী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এই মামলার চার্জশীট শীঘ্র দেয়া হবে। খিলগাঁওয়ে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যা মামলায় ডিবি দাবি করেছে, চারজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যা সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত তারা আদালতে এ সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়নি। এছাড়া লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনসহ সাত ব্লগার হত্যা মামলার তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। মামলাগুলোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উগ্র ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠী ‘সিøপার সেল’ গঠন করে এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার আগ পর্যন্ত সেলের সদস্যরা একে অপরের কাছে অচেনা থাকে। এ কারণে একজন সদস্য অপর সদস্যের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্যই জানে না। ফলে একটি হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অপর হত্যার কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল বুধবার রাতে রাজধানীতে খুন হয়েছেন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদ। গত বছরের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীতে ঢুকে প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে লালমাটিয়ায় ড. অভিজিত রায়ের বইয়ের প্রকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে কুপিয়ে জখম করে। এই দুটি ঘটনায় শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। ঘটনার তদন্তে পুলিশ ও র‌্যাব শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ যাচাই করেও কোন ঘাতককে শনাক্ত করতে পারেনি। একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফুটপাথে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়কে (৪০) একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত এ হত্যার তদন্ত ফলও ‘শূন্য’। সিøপার সেল ॥ উইকিপিডিয়াতে ‘সিøপার সেল’ সম্পর্কে বলা আছে, এরা এমন একদল মানুষ, যারা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কোন সন্ত্রাসী বা সহিংস কর্মকা- করে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যে সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীতে ‘সিøপার সেল’ গঠন করে অপারেশন চালানোর ঘটনা রয়েছে। সর্বপ্রথম ভিয়েতনামে সরকারের বিরুদ্ধে ‘সিøপার সেল’ অপারেশন চালানো হয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামের ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট অব লিবারেশন (এনএফএল)’ নামে একটি সংগঠন এই সেল গঠন করে অপারেশন চালিয়েছিল। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদা মধ্যপ্রাচ্যে এভাবে হামলা চালিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ধরনের ‘সিøপার সেল’ গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের সেলে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাতজন সদস্য থাকে। এদের মধ্যে একজন দলনেতা থাকে। মিশনের শুরুতে তাদের প্রত্যেককে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় মূল পরিকল্পনাকারী। দলনেতাই প্রত্যেক সদস্যকে মিশনের পরিকল্পনা এবং কাকে কিভাবে খুন করতে হবে সে সম্পর্কে জানিয়ে দেন। পরিকল্পনাকারী নিজেই সেলের সদস্যদের অস্ত্র সরবরাহ করে। তারা বেশিরভাগ সময় ধারালো চাপাতিসহ ছোরাজাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। কুপিয়ে বা গলা কেটে হত্যার পাশাপাশি বিশেষ ধরনের ইনজেকশনও ব্যবহার করে তারা। ‘সিøপার সেল’র কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশের ক্ষেত্রে জেএমবি সদস্যরা গোপন আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা ব্যবহার করছে। ব্লগার হত্যার বিচারের বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমার মনে হয় এই মামলাগুলোর দ্রুত বিচার না করলে যারা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তাদের নিরাপত্তা আরও বিঘিœত হবে। বাকি মামলাগুলোর অগ্রগতি দ্রুতই দেখা যাবে আশা করে তিনি বলেন, মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাউকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলে এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
×