ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা নববর্ষ উদযাপন

অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার শপথ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার শপথ

সিলেট সকালে নগরীতে সিটি কর্পোরেশন ও সংস্কৃতিকর্মীদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয় নারী-পুরুষ। অদম্য হাজারো মানুষের সব রাস্তা যেন এসে মিলিত হয় সিলেটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থলে। শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে প্রতিবছরের মতো এবারও আনন্দলোক সিলেটের আয়োজনে সমবেত হয়েছেন হাজারো দর্শক। এসো হে বৈশাখ গানের মাধ্যমে শুরু হয় আনন্দলোকের অনুষ্ঠান। এর পর একে একে মঞ্চে আসে গীত বিতান বাংলাদেশ, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, সুরাঞ্জলী, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, দ্বৈতস্বর, তারুণ্য, সিলেট আর্ট এ্যান্ড কালচার একাডেমি, নৃত্যশৈলী। একক পরিবেশনায় ছিলেন শিল্পী লাভলী দেব ও শামীম আহমদ। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে নগরীর ব্লু বার্ড স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে জমজমাট আয়োজন করে শ্রুতি সিলেট। মঙ্গল ঢাকের আহবানে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় সংগঠনটি। এ সময় সপ্ত সুরের আহবানে বিদায় জানানো হয় গেল বছরটিকে। শত শত কণ্ঠে গাওয়া হয় নতুন বছরের আবাহন বার্তা। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিজন ভবতোষ বর্মণ রানা। মুন্সীগঞ্জ জমকালো লোকজ নানা আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ হয়েছে। সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পকলায় বসে পটচিত্র প্রদর্শনী। এসব আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল। এর আগে নববর্ষের প্রথম প্রহরে পালাগান করে শিল্পী শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগমের দল। এছাড়া দৈনিক মুন্সীগঞ্জের কাগজ কার্যালয়ে, প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহাম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সরকারী হরগঙ্গা কলেজ এবং মুন্সীগঞ্জ কলেজে ব্যতিক্রম নানাসব আয়োজন বসে। বরিশাল সকালে সূর্যোদয়ের সাথে প্রভাতি অনুষ্ঠানে এসো হে বৈশাখ এসো এসো, গান পরিবেশনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের উৎসব শুরু হয়। সকাল আটটার পর থেকে আলাদা আলাদাভাবে চারুকলা বরিশাল, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বরিশাল নাটক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন, খেলাঘর, প্রান্তিক সংগীত বিদ্যালয়, চাঁদের হাটসহ বিভিন্ন সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা, বিএম স্কুল মাঠ এবং আমানতগঞ্জ টিবি হাসপাতাল মাঠে তিনদিনের বৈশাখী মেলাসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। যশোর নববর্ষের প্রথম প্রহরে যশোরের পৌরপার্কে বসেছিল মিলনমেলা। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীপেশার মানুষ সমাবেত হয়েছিল সেখানে। মানবস্রোতের মিলনে জনজোয়ার বয়ে যায় পৌর উদ্যানে। সব বয়সের নারী, পুরুষ, শিশুর এ মিলনমেলার আয়োজন করেছিল উদীচী, যশোর। ৪১ বছর ধরে বর্ণিল বর্ষবরণ উৎসব আয়োজনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষগুলোকে মিলনমেলায় হাজির করেছিল তারা। এবারের আয়োজনে ছিল বৈশাখ আবাহন, দেশ বন্দনা ও বিশ্ব শান্তি প্রার্থনা। অনুষ্ঠানে পাঁচ গীতিকবির গান, হারানো দিনের গান, ধামাল গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, রাধারমন, লালন, হাসন রাজা, বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের গান। যশোরের ঐতিহ্যবাহী গাজী কালু-চম্পাবতী নৃত্যনাট্য, শিশুতোষ পরিবেশনা ও আবৃতি। মৌলভীবাজার সকালে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে আবাহন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে দিনটির সূচনা হয়। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি, ইসলামী ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল এবং কলেজের নানা বয়সী মানুষ রং বেরঙের পোশাক পরে বর্ণিল সাজে যোগ দেয়। টাঙ্গাইল সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় স্থানীয় এমপি ছানোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেনসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেয়। শোভাযাত্রা শেষে জেলা কালেক্টরেট মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। ঝিনাইদহ সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের উজির আলী হাইস্কুল মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে আবারও উজির আলী হাইস্কুল মাঠে ফিরে আসে। সেখানে পান্তা খেয়ে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা রং ও ঢঙে সেজে অংশগ্রহণ করে। গ্রামীণ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় শোভাযাত্রায়। পরে সরকারী কলেজ মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। এর আগে মুকুল ফৌজ ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গণসঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা আবৃতির আয়োজন করে। লক্ষ্মীপুর সকালে জেলা প্রশাসক জিল্লুর চৌধুরীর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ঢাক-ডোল বাজিয়ে রংবেরঙের ফেস্টুন হাতে বাহারি পোশাক পরে সকল শ্রেণীর নারী, পুরুষ ও শিশুর অংশগ্রহণে বিশাল শোভাযাত্রা কালেক্টরেট ভবন থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরকারী আদর্শ সামাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে পরে সেখানে আকাশে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসের উদ্বোধন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে একযোগে দর্শক-শ্রোতার কণ্ঠ মিলিয়ে বৈশাখী গানের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল, পুলিশ সুপার আ.স.ম মাহাতাব উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সহিদুল ইসলাম প্রমুখ। বাগেরহাট সকালে স্টেডিয়াম থেকে রং-বেরঙের সাজে আয়োজিত শোভাযাত্রা স্বাধীনতা উদ্যানে এসে শেষ হয়। ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে শোভাযাত্রা ও ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। এদিন ভোরে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঐতিহাসিক মসজিদ প্রাঙ্গণে নাচে-গানে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার ব্যতিক্রমধর্মী শপথ নিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। খাগড়াছড়ি সমতল থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ এবং বাংলা নব বর্ষবরণ ‘পহেলা বৈশাখ’ পালিত হয়। সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঙালীর ঐতিহ্য পান্তা-রুই’র আয়োজন করা হয়। এ সময় স্থানীয় রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স. ম. মাহবুব উল আলম, জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মজিদ আলীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই উপলক্ষে পানখাইয়াপাড়ার বটতলায় খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। গোপালগঞ্জ সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ‘এসো হে বৈশাখ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ করা হয়। শিশু একাডেমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতাসহ আয়োজন করে শিশু আনন্দ মেলার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুুষ্ঠান। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের জন্য পান্তাভাত, মাছ ও ভর্তার ব্যবস্থা করা হয়। জাতীয় মহিলা সংস্থা গোপালগঞ্জ জেলা শাখায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রীতিভোজ। জগন্নাথ হল এ্যালামনাই এ্যাসোশিয়েশন, উদীচী, ত্রিবেনী গণ-সাংস্কৃতিক সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বিএমএসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করে। এছাড়া গোপালগঞ্জ শহরের মধুমতি লেকের পাড়ে শেখ রাসেল শিশু পার্কে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়। ভোলা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ভোলা অফিসার্স ক্লাব মাঠে প্রভাতি সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় দেশাত্মবোধক গান ও শিশুরা নৃত্য পরিবেশন করে। একই সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পান্তা, রুই মাছ ভাজা, ভর্তাসহ খই মুড়ি বাতাসা খাওয়ার উৎসবের আয়োজন হয়। এ উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে জেলা প্রশাসক সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে শহরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। নেত্রকোনা সূর্যোদয়ের পরপর পুরাতন কালেক্টরেট চত্বরের মুক্তমনা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সকাল সাতটায় হয় রাখিবন্ধন ও দেশজ খাবার পরিবেশন। এরপর সকাল ১০টায় বের হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, পৌর মেয়র নজরুল ইসমলাম খান প্রমুখ। এছাড়া মধুমাছি কঁচিকাচার আসরের উদ্যোগে মগড়া নদীর পাড়ে দু’দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা এবং শিশু একাডেমির উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী শিশু আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মাগুরা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরে পৃথক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে বাদ্যযন্ত্র সহকারে বিভিন্ন পোশাকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। রাজশাহী সকালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নেচে গেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে নতুন বছরের মঙ্গলযাত্রায় শামিল হয় বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সার্বজনীন এ উৎসবে সবার মধ্যেই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে রুখে দেয়ার দৃঢ়প্রত্যয়। নববর্ষকে বরণ করতে রাজশাহী মহানগরীজুড়ে বাঙালী উৎসবের আমেজ ছিল লক্ষণীয়। বৈশাখের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মেতে ওঠে সবাই। সাদা আর লাল রঙের আলোকচ্ছটায় রঙিন হয়ে উঠে যান্ত্রিক নগরজীবন। বর্ণিল আনন্দের ঘনঘটায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজশাহী মহানগরীতে এবার উদযাপিত হয় পহেলা বৈশাখ। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচী পালিত হয়। মহানগরীর পদ্মাপাড়ের ফুদকিপাড়ার উন্মুুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বাংলা বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সেখানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করে পান্তা উৎসবের। দিনব্যাপী অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সঙ্গীত পরিবেশন, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলা, গম্ভীরা ইত্যাদি। জেলা প্রশাসনেরর উদ্যোগে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এ স্কুল প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী, শিশু আনন্দ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা এবং বিনোদন স্পটকে ঘিরে নারী, শিশুসহ নানা বয়সের অগণিত মানুষ আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল সাতটায় নগরীর শিববাড়ী মোড় হতে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অফিসার্স ক্লাবে এসে শেষ হয়। এতে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ, জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ও জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা উৎসব। বিকেল ৩টায় নগরীর শান্তিধাম মোড় জাতিসংঘ শিশু পার্কে ‘বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ শিশু পার্কে আয়োজন করা হয় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, বর্ষবরণ পর্ষদ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা, পান্তাপর্ব, আলোচনাসভাসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বগুড়া ছেলেরা পাঞ্জাবি-ফতুয়া ও মেয়েরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে নতুন বছর বরণের সকল আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। সকালে শহরের এ্যাডওয়ার্ড পার্কে বাদ্যের তালে বেলুন উড়িয়ে বগুড়া থিয়েটারের উদ্যোগে পাঁচ দিনের বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। এরপর সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা শহর পরিভ্রমণ করে। একই সময়ে বগুড়া সেনানিবাসে তিন দিনের বৈশাখী মেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হয়। দিনভর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেলে শিশু একাডেমির আয়োজনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাতমাথায় দিন বদলের মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বর্ষবরণের গান পরিবেশন করে। ইরানী আর্ট গালারি শিশু চিত্রাঙ্কনের আয়োজন করে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন পৃথকভাবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও র‌্যালি বের করে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ বৃহস্পতিবারের শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে উদ্বোধন করা হয় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। নোয়াখালী মঙ্গল শোভাযাত্রায় পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহস্র্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। দিনাজপুর দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান থেকে বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। রংবেঙের ফেস্টুনসহ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নিদর্শন, হাতি, গরুর গাড়ি, রাজাসহ বিভিন্ন চিত্রায়িত র‌্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, শহর আ’লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামসহ অংশগ্রহণ করেন। দিনাজপুর শিল্পকলা প্রাঙ্গণে উদীচীর আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে বড় ময়দানে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেন দেড় শতাধিক ঘুড়ি প্রেমিক। নীলফামারী বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের দিন ছাড়াও শুক্রবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা হয়। বৈশাখী চত্বরে দুই দিনব্যাপী চলেছে গ্রামীণ আনন্দমেলা। এসব অনুষ্ঠানে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পহেলা বৈশাখের দিন ঢাক, ঢোল, গরু গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, মাটির থালা বাসন শোভা পেয়েছে দিনটির নানা অনুষ্ঠানে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ চত্বর থেকে জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন ও পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে সকাল ৯টায় পহেলা বৈশাখের প্রথম বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। ঠাকুরগাঁও জজকোর্ট চত্বরে নিক্কন সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথি শিল্পীর অংশগ্রহণে বর্ষবরণ মনোজ্ঞ প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিনের কর্মসূচী শুরু হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস ও সর্বস্তরের দর্শকশ্রোতা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ দিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠ থেকে শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবী নানান সাজে সজ্জিত হয়ে অংশ নেন। পরে স্টেশন ক্লাবে জেলা প্রশাসন ও বড়মাঠ চত্বরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ভর্তা খাবার ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। নওগাঁ সকালে জেলা প্রশাসন থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরে শহরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িতে ও মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় সিদ্ধিদাতা শ্রীশ্রী গণেশ পুজো। শুভ হালখাতা মহরৎসহ দোকানে দোকানে এদিন মিষ্টি বিতরণ হয়। হবিগঞ্জ ডিসি সাবিনা আলমের নেতৃত্বে জেলা ও এসপি জয়দেব কুমার ভদ্রের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আলোড়ন সাংস্কৃতিক পরিষদ, ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ক্লাব, ঐতিহ্য ফিল্ম সোসাইটি, বি, কে, জি, সি গভঃ গালর্স হাই স্কুল, সুতাং থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। রংপুর সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে তারানা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরণ করে নেয় রংপুরবাসী। চলে সারাদিনমান নানা অনুষ্ঠান। বিকেলের পর জনস্রোত নামে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে। অনুষ্ঠান যখন জমজমাট তখনই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ আসে অনুষ্ঠান শেষ করার। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি উৎসবপ্রিয় বাঙালী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠান শেষ করা হলেও রাত ১১টা পর্যন্ত জনস্রোতে মুখর থাকে রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরী চত্বর। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের। চট্টগ্রাম জমকালো আয়োজন ও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে বাঙালীর বর্ষবরণ উৎসব। এদিন পুরো নগরীতে সৃষ্টি হয় বর্ণিল পরিবেশ। দৃষ্টিনন্দন ডিসি হিল ও সিআরবি শিরীষতলায় হয় লাখো মানুষের সমাগম। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সের নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে এই উৎসব পরিণত হয় সর্বজনীন প্রাণের উৎসবে। কোন আশঙ্কাই ঘরে আটকে রাখতে পারেনি সংস্কৃতিমনা মানুষদের। নগরীর বিভিন্ন স্থানের অনুষ্ঠানগুলো অভিমুখে ছিল জনস্রোত। সকলের মুখেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথ। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার সর্বত্রই ছিল বৈশাখী আয়োজন। তবে প্রতিবারের মতো এবারও মূল আকর্ষণ ডিসি হিল ও সিআরবি। এছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও সদরঘাট কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকায়ও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। ডিসি হিলের অনুষ্ঠান শুরু হয় আগের দিন বুধবার বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সেখানে মঞ্চে পরিবেশিত হয় সঙ্গীত ও নৃত্য। সংবর্ধিত হন গুণী ব্যক্তিত্বগণ। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সম্মাননা প্রদান করা হয় আলো-ছায়ার সৃজক শিল্পী তপন ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শীলা মোমেন এবং কথা সাহিত্যিক হরিশঙ্কর জলদাশকে। কুড়িগ্রাম মঙ্গল শোভা যাত্রা, ঘোড় দৌড়, বানর ও সাপের খেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপন করা হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্বাধীনতার বিজয় স্তম্ভ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভা যাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অংশ নেয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চাষাঢ়া শহীদ জিয়া হলের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। উপস্থিত ছিলেন-জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুল হাই, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক ইসরাত হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গাউছুল আজম, কল্যাণী সেবা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জব্বার চিশতি ও গ্রীন ফর পিসের নির্বাহী পরিচালক আরিফ মিহির প্রমুখ। এছাড়া ঈশ্বরদী, নেত্রকোনার দুর্গাপুর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা অনুষ্ঠানের আসর বসে।
×