ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে হাঁসফাঁস

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

গরমে হাঁসফাঁস

প্রচণ্ড গরমে দেশবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এর মধ্যেই ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠেছে। সারাদেশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপ প্রবাহ। সেই সঙ্গে লু হাওয়া, যাকে বলে আগুনের হলকা। আর দিনব্যাপী গনগনে রোদ। যে বা যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস-আদালত ও বাসাবাড়িতে বসবাস করতে অভ্যস্ত, তাদের হয়ত অতটা অসহনীয় উত্তাপ অনুভূত হয় না। তবে যারা দিনমজুর, শ্রমিক শ্রেণী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, তাদের ‘প্রাণ’ যায় যায় অবস্থা। তাদের গ্রীষ্মের প্রচ- ও তীব্র দাবদাহের সম্মুখীন হতে হয়। একদিকে নিত্যদিন যাপনের গ্লানি, অন্যদিকে দুর্বিষহ যানজট। যাত্রীভর্তি বাস-মিনিবাসগুলো একেবারে তপ্ত কড়াই বা উনুনের মতো হয়ে থাকে। আর তাতে মানুষের অবস্থা হয় অনেকটা জ্বলন্ত উনুনে বা তন্দুরিতে রুটি সেঁকার মতো। রাজধানীতে এমনিতেই গাছপালা অনেক কম। মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক ও উদ্যানগুলোর অবস্থাও বড়ই করুণ। এর পাশাপাশি ধুলায় ধূসরিত, গগনচুম্বী সারি সারি অট্টালিকা ও ফ্ল্যাট বাড়িতে চিড়িয়াখানার খাঁচা সদৃশ। বেশ কিছু দিন আকাশে মেঘ ও বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। সুতরাং মানুষ একটু সুখ ও প্রশান্তি অর্জনের জন্য দম ফেলবে কোথায়? ইতোমধ্যে খাল-বিল-লেক প্রায় সব চলে গেছে বেদখলে। তবে সার্বিকভাবে বিদ্যুতের জোগান ও সরবরাহ ব্যবস্থার আশাব্যঞ্জক উন্নতি হওয়ায় মানুষ অন্তত এতটুকু আশ্রয় পাচ্ছে ঘরে ফিরে। অন্যদিকে গ্রাম-গঞ্জে ইতোমধ্যে মাঠ-ঘাট-ক্ষেত-প্রান্তর ফেটে চৌচির। নদ-নদী-খাল-বিল অনেকস্থানে শুকনো অথবা আধা শুকনো। ফারাক্কাসহ বিভিন্ন স্থানে নানা অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ অবরুদ্ধ প্রায়। নদী শাসনের নামে সেগুলোকে প্রায় মেরে ফেলার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রকারান্তরে এসবই অবশ্য আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য আবাস। কিছুদিন আগে প্যারিসে জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, ধুলোবালি, ওজোন গ্যাস, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদির পরিমাণ বাড়ছে ক্রমাগত। এর ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাপমাত্রা। মহাসাগরীয় স্রোতে পরিবর্তন হচ্ছে। যার ফল এল নিনো, লা নিনো ইত্যাদি। মূলত এল নিনোর প্রভাবে এবার বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলে প্রলম্বিত হচ্ছে খরা ও অনাবৃষ্টি। সেইসঙ্গে অসহনীয় গরম। পানির হাহাকার। সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব হলে বিরূপ পরিস্থিতিও মোকাবেলা করা সহজ হয়ে ওঠে। সুতরাং চৈত্র-বৈশাখের তাপপ্রবাহ, দাবদাহ মেনে নিয়েই প্রতীক্ষা করতে হবে অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুমের।
×