ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাশেম খানের কাজ;###;বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

৭৫ -এ হাশেম খান

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

৭৫ -এ হাশেম খান

হাশেম খানের কথা যখন ভাবি তখন মনে হয়, তিনি তাঁর স্টুডিওতে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রাশ হাতে, তাঁর চোখ খোলা, তিনি কিছু দেখছেন কিংবা ভাবছেন। তাঁর চেনা কিংবা ভাবা তাঁকে বদলে দেয়, তাঁকে মনে হয় অনেকটা সেইন্টের মতো, তাঁকে মনে হয় খুবই মডেস্ট ব্যক্তি। হাশেম খানের কাজ শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজের মতো, নিশ্চিত। বিষয় প্রায় একই। প্রতিটি কাজ, প্রতিটি ক্যানভাস, রঙের ক্ষেত্র, আর রঙের আলোক ভিন্ন, এই ভিন্নতাই বিশাল ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করে। এই ল্যান্ডস্কেপ কোথাকার? বাংলাদেশের, চাঁদপুরের, মেঘনা-ডাকাতিয়ার সঙ্গমস্থলের। শুধু একটা ল্যান্ডস্কেপ ছড়ানো, হয়ত চাঁদপুরের, হয়ত ঢাকার, হয়ত সিলেটের। যেখানে নদী আছে, সার সার নৌকা আছে, নৌকা দুলছে ঢেউয়ে, নৌকা ও নদীর ওপর ছায়া পড়েছে আকাশের। যত আমি দেখি তত আমার চোখ নিবদ্ধ হয়ে আসে, চোখ ভাবনামগ্ন হয়ে আসে। নদী আকাশ নৌকা গাছপালা থেকে ভাবনা আসে, পাখির ওড়াউড়ির মতো। হাশেম খান তাকিয়ে আছেন বাইরে, সেইন্টের মতো, যে সেইন্টের চোখে ঈশ্বর ছাড়া কিছু নেই, তেমনি হাশেম খানের চোখে নিসর্গ ছাড়া কিছু নেই। তিনি দেখছেন এবং ভাবছেন। দেখাটাই ভাবনা তাঁর কাছে। দেখা থেকে প্রতিভাস তৈরি হয়। প্রতিভাসকে উদ্ধার করতে চান হাশেম খান। ল্যান্ডস্কেপ হাশেম খানকে আকুল করে রাখে। তাঁর জমি এবং নদী সম্বন্ধে আকুলতা উত্তাল হয়ে ওঠে ল্যান্ডস্কেপের বিভিন্ন দৃশ্যে। ল্যান্ডস্কেপে তিনি মিলিয়েছেন ফিগর (মানুষ কিংবা নদী কিংবা নৌকা কিংবা পাখি) এবং দৃশ্যের সুন্দরের পর সুন্দর। মানুষ নদী নৌকা পাখি হয়ে ওঠে কাছের এবং দূরের রঙের ছোপ। এসব থেকে তিনি তৈরি করেন দূরের কিংবা কাছের ফিগর। ল্যান্ডস্কেপের পটভূমিতে মানুষ নদী নৌকা পাখি তার মায়াবী পোর্ট্রেট। এরা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌরাণিক ফিগর নয় কিংবা জয়নুল আবেদিনের কর্কশ রুক্ষ পেশল ফিগর নয়। এরা হাশেম খানের লাবণ্যময় ফিগর, তিনি এসব ফিগর দিয়ে প্রকৃতি কিংবা নিসর্গ জড়িয়ে ধরেন। এই জড়িয়ে ধরাটা নাটকীয়, যেখানে তিনি উজাড় করেন তাঁর সকল প্যাশন। তাঁর কাজের মধ্যে দূরের আভাস সব সময় থাকে। নিসর্গের বৈশিষ্ট্য দূরত্বে হারায় না, হারায় বরং কাছের উপস্থিতিতে। এটা একটা অপটিক্যাল প্রশ্ন নয়। চোখের ফোকাস নিয়ে প্রশ্নটা। আবার, কাছের বিষয় পরিমাপ করতে হবে কোমলতা ও অন্তরঙ্গতার আবেগের ভিত্তিতে। সেজন্য কোনো কিছু হারায় না কিংবা নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয় না। হাশেম খান সমস্ত শরীর ও বোধ দিয়ে দেখেন এবং দেখাটা একটা কেন্দ্র পেয়ে যায়। হাশেম খানের কাজ আমাদের সরল করে, তেমনি সাহসী করে। সাহসী করার অর্থ : তাঁর কাজের ইমপ্রেশন বুঝতে পারি কিংবা ধরতে পারি। ইমপ্রেশন বেঁচে থাকে, একা এবং একাকী হয়ে। তাঁর ইমপ্রেশনের দিকে যত তাকাই কিংবা তাকিয়ে থাকি, ইমপ্রেশনপরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে স্মৃতি। এই স্মৃতির কাছে তিনি আমাদের হাত ধরে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত রং জ্বলতে থাকে, রঙের মধ্যে নিজেদের চোখ ফোকাস করি। আমরা দেখি। (সংক্ষেপিত)
×