ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘গোপন শেল কোম্পানি ও ট্রাস্টের প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করা হবে’

কর ফাঁকি রোধে কড়া ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

কর ফাঁকি রোধে কড়া ব্যবস্থা

ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্র পানামা পেপার্সে গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার প্রেক্ষাপটে করা ফাঁকি দেয়ার বিরুদ্ধে নতুন ‘কঠোর’ নিয়মকানুন ঘোষণা করেছে। বিশ্বের ধনী ও খুবই শক্তিশালী ব্যক্তিরা কর আদায়কারীদের কাছ থেকে কিভাবে তাদের সম্পদ গোপন করে থাকেন, তা ওই পেপার্সে ফাঁস করা হয়। খবর গার্ডিয়ানের। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও ইতালির অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জর্জ ওসবোর্ন বৃহস্পতিবার নতুন নিয়মকানুন ঘোষণা করেন। এগুলোর আওতায় জটিল শেল কোম্পানি ও বিদেশের ট্রাস্টগুলোর আসল মালিকদের বিষয়ে তথ্য আপনা-আপনিতেই বিনিময় করা হবে। চ্যান্সেলর বলেন, নতুন নিয়মকানুন হবে অবৈধভাবে কর ফাঁকি দেবে এবং অর্থ মজুদের অন্ধকার কোণে তাদের সম্পদ লুকিয়ে রাখবে এমন ব্যক্তিদের প্রতি এক শক্ত আঘাত। তিনি বলেন, গোপন শেল কোম্পানি ও ট্রাস্টগুলোর আসল মালিক কারা, তা খুঁজে বের করতে ব্রিটেন বড় বড় ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। কর ফাঁকি দিতে, অর্থপাচার করতে এবং দুর্নীতি থেকে উপকৃত হতে এসব কোম্পানি ও ট্রাস্টকে কাজে লাগানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠকে ওসবোর্ন বলেন, কড়া নিন্দাই যথেষ্ট নয়, কেবল মানুষের ক্ষোভই কর হিসেবে একটি মাত্র বাড়তি পাউন্ড বা ডলারও আদায় করে না বা একটি মাত্র অপরাধীকেও কারাগারে পাঠায় না। এখন আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নেয়াই প্রয়োজন এবং কর ফাঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা এখন বাস্তব পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তা-ই করছি। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে, স্বচ্ছতার নিয়মকানুন অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা হবে। এগুলো ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কার্যকর হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাঞ্জেল গুরিয়া বলেন, কর ফাঁকি দমনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে আত্মসন্তুষ্টির কোন সুযোগ নেই বলে পানামা পেপার্স থেকে দেখা যায়। তিনি বলেন, ধনী ও ক্ষমতাবানরা কর ফাঁকি দিতে পানামাকে যে কাজে লাগাছে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ কর ও মালিকানা স্বচ্ছতার উন্নতি ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গৃহীত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাওয়ার এখতিয়ার যে সামান্য কয়েকটি দেশের রয়েছে, পানামা তাদের অন্যতম। তিনি বলেন, আইনজীবী, হিসাবরক্ষক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো যেসব পেশাদার ব্যক্তি বা সংস্থা গোপনীয়তার ছদ্মাবরণ বজায় রাখতে বড় ভূমিকা পালন করেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দমনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা গেছে, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের অর্থমন্ত্রীরা কেবল করের আওতায় পড়ে এমন ট্রাস্টগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, সব ট্রাস্টের ক্ষেত্রেও নতুন নিয়মকানুুনের এখতিয়ার প্রসারিত করতে ব্রিটেনকে চাপ দেয়। ব্রিটেন ট্রাস্ট সম্পর্কিত কর ফাঁকি ও অন্যান্য অন্যায় কাজ নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগকে বারবার খাটো করে দেখিয়েছে। ব্লুমবার্গ জানায়, ব্রিটেন সংস্কারের চাপ প্রতিহত করে যাবে বলে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ফ্রান্স এ চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওসবোর্নের এক মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্রান্সের বা অন্য কোন উইরোপীয় অংশীদারের কোন মতবিরোধ নেই। তবে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি ও ব্রিটেন আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা করে এক যুক্ত চিটি প্রকাশ করলে ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনকে নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সেই উত্তেজনাকে চাপা দেয়া হয়। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য জি-২০ দেশ সই করেনি। রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রীদের চিঠি সমর্থন করবে বলে মনে করা হয় না। পানামা পেপার্সে উভয় দেশের নামই বিশিষ্ট স্থান পেয়েছে।
×