ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি পালন

আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা বন্দর ছাড়ছে, কমছে রাজস্ব আদায়

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা বন্দর ছাড়ছে, কমছে রাজস্ব আদায়

স্টাফ রিপোর্টার. সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে স্কেল পয়েন্টে বিজিবির অবস্থান ও পণ্য পরীক্ষার নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে প্রতিকারের দাবিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা চোরাচালান প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির সভাপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ভোমরা স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাবৃন্দ জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিনের কাছে দাবি সম্বলিত এই স্মারকলিপি পেশ করেন। এদিকে দাবি আদায়ের কর্মসূচী হিসেবে মঙ্গলবার বন্দরে বিভিন্ন সংস্থা ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন বহুলাংশে বাকি থাকলেও ভোমরা বন্দর দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কিন্তু একটি মহল বন্দরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে বন্দর দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাস্টমস ও বিজিবির নিজস্ব নীতিমালা ও আইন কানুন থাকলেও দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ভোমরা বন্দরে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পণ্য আমদানিতে জট সৃষ্টি, তল্লাশির নামে সময়ক্ষেপণ ও অযথা হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে বন্দরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমছে। ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৯ ও ১০ ধারা অনুযায়ী, ঘোষিত কোন পথ ব্যতীত অন্য কোন পথে আনীত পণ্য বা মালামাল চোরাচালানকৃত বলে চিহ্নিত হবে। বর্ণিত এই ধারার বাইরের সকল পণ্যই অননুমোদিত। অননুমোদিত পথে আনীত পণ্য আটক করার ক্ষমতা বিজিবির রয়েছে। কিন্তু বৈধপথে আনা পণ্যের দায়দায়িত্ব কাস্টমসের। অথচ এক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে। ফলে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কাস্টমস এ্যাক্টের বাইরে কোন সংস্থা কাজ করতে পারে না উল্লেখ করে বলা হয়, বিজিবি ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্য কোনক্রমেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওজন দেখা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের ক্ষমতা রাখে না। এমনটি করলে কাস্টমস এ্যাক্টের ১৯৬৯ এর ৯, ১০, ২৭, ১৯৭ ও ১৯৮ ধারার লঙ্ঘন হবে। বিজিবি উল্লিখিত ধারা লঙ্ঘন করায় ব্যবসায়ীরা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত নন, আতংকিত হয়ে পড়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে সোনামসজিদসহ অন্যান্য বন্দরের চলে যাচ্ছেন। এতে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব আয়ে ধস নেমেছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ৭ এপ্রিল বিজিবি সদস্যরা ভারত থেকে আমদানিকৃত ২টি পানের চালান আটক করে। বৈধপথে আনীত হলেও এ ব্যাপারে বিজিবি সাতক্ষীরা সদর থানায় চোরাচালান পণ্য হিসেবে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ এর খ ধারায় মামলা দায়ের করে। আদালত ওই সম্পর্কে বৈধপথে আনীত ও তার অনুকূলে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে মন্তব্য করে ৯ এপ্রিল আটক পানের চালান আমদানিকারকের অনুকূলে ফেরত দেয়ার আদেশ দেয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়া কোন পণ্য নিয়ে সন্দেহ হলে কিংবা অভিযোগ থাকলে বিজিবি তা শুঙ্ক এরিয়ার মধ্যে রেখে কাস্টমস আইনে বিচারের সুযোগ দিতে পারে। এতে যেমন আইনের লঙ্ঘন হয় না, তেমনি ব্যবসায়ীরা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পায় এবং বন্দরের কার্যক্রমও স্বাভাবিক থাকে। স্মারকলিপিতে উচ্চ আদালতের একটি রায় তুলে ধরে বলা হয়েছে, কোন পণ্য আটক হলে তা কাস্টমস এ্যাক্টের ১৬৯ ধারা অনুযায়ী অনতিবিলম্বে শুল্ক কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। অথচ ভারতীয় পান আটক করে তা বিজিবি নিজেদের দফতরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা রেখে থানায় জমা দেয়। এতে পানগুলো পচে যায়। এবং মোটা অংকের টাকার ক্ষতি হয়। ফলে কাস্টমস এ্যাক্টের ১৯৬৯ এর ১৬৩ (৩) ও ১৬৯ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বিজিবির এই ভূমিকা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, ওই পান জব্দের ঘটনায় বহনকারী ট্রাকগুলোও আটক করা হয়। এতে ট্রাক মালিকরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, যদি কোন পণ্য ধরা পড়ে, তবে গাড়ি ও এর শ্রমিকদের হয়রানি না করে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তারা কেবল অর্ডার অনুযায়ী পণ্য পরিবহন করে। স্মারকলিপিতে শুধু শুঙ্ক এরিয়া নয়, এর বাইরেও কাস্টমস ছাড়কৃত পণ্য নিয়ে সন্দেহ বা অভিযোগ থাকলে তা শুল্ক এরিয়াতে এনে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থাগ্রহণ ও বিচারের সুযোগের দাবি জানানো হয়। এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে। স্মারকলিপিতে পান আটকের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারে দাবি জানিয়ে বন্দরে বিজিবির অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে ১৬ এপ্রিল চার ঘণ্টা ও ১৭ এপ্রিল পাঁচ ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ১৮ এপ্রিল নুতন কর্মসূচী ঘোষণার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
×