ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনামন্ত্রী

দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই রয়েছে। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি যে প্রতিবেদনটি দিয়েছে সেটির কার্যক্রম গৃহীত হয়েছিল আরও ২/৩ মাস আগে। তাই আমরা যখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ ঘোষণা করেছি সে সময় তাদের প্রতিবেদনটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। তাই এটা কোনভাবেই প্রমাণ করে না যে, আমাদের ঘোষণা দেয়ার পরেই বা এর প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার ওপর প্রণীত। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য কোন আলাদা প্রতিবেদন নয়। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনের কোথাও এটা উল্লেখ করেনি যে, তারা বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত প্রবৃদ্ধি মানছেন না বা এ বিষয়ে একমত নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, সরকারের প্রক্ষেপণ এবং বর্তমানের সার্বিক অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বুধবার শেরেবাংলা নগরে তার কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তবায়নের মাধ্যমেও ব্যবসাবান্ধব উন্নয়ন তৎপরতার কারণে দিন দিন কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমে আসছে। সম্প্রতি জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) তাদের একটি জরিপে উল্লেখ করেছে যে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেকেন্ড বেস্ট ইনভেস্টমেন্ট ডেস্টিনেশন। তাছাড়া সম্প্রতি আরব নিউজ পত্রিকায় আইএমএফের একটি লিঙ্ক উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, দেশী-বিদেশী প্রাইভেট বিনিয়োগ অধিক খোলামেলা ও প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়নের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগের পরবর্তী কেন্দ্রস্থল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হবে, যা বর্তমানে ১৮ হাজার কোটি ডলারের বাজার। সম্প্রতি এইচএসবিসি ব্যাংক তাদের একটি জরিপে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসে উন্নতি করেছে। এডিপি বাস্তবায়ন বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ সরকারের সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই সন্তোষজনক। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ হাজার কোটি টাকায়। এডিপি বাস্তবায়নের হারও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল শতকরা ৮৬ ভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ হার দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হার ৪১ শতাংশ, যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। সাধারণত দেখা যায় বছরের শেষ দিকে প্রকল্পের বিভিন্ন বিল পরিশোধ হয়ে থাক। তাই সে সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়ে যায়। রাজস্ব আয় বিষয়ে বলেন, বিগত বছরের প্রথম আট মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ১৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বছর শেষে জুন মাস নাগাদ এটি আরও বাড়বে। ৭.০৫ ভাগ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত অর্জিত ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন ক্রমেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। রেমিটেন্স আয় বিষয়ে তিনি বলেন, এ সরকার বছরে ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। বিশ্ব মন্দার কারণে জনশক্তি রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও গত বছর এ খাতের আয় ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালের মার্চ মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যা ফেব্রুয়ারি ২০১৬’র চেয়ে ১৪৬.৬৬ মিলিয়ন ডলার বেশি (ফেব্রুয়ারি ২০১৬তে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার)। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলা নববর্ষ, পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে অনুমান করা যায়। বিনিয়োগ জিডিপির হার প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জিডিপিতে বিনিয়োগ পরিমাণ ২০০৮-০৯ সালে ছিল ২৩.৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫-১৬তে দাঁড়িয়েছে ৩ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ সালে বিনিয়োগ জিডিপির হার ছিল ২৮.৮৯, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ২৯.৩২ ভাগে। গত বছরের তুলনায় এ বছরে বিনিয়োগ জিডিপির হার ১৬ ভাগ বেড়েছে। তিনি জানান, ভোগ ব্যয় বর্তমান সময়ে টাকার মান স্থির আছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপির সরকারে থাকা সময়কার বছরগুলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করলে আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে, ২০০৬-০৭ সালে অর্থনীতির ভিত্তি বছর পরিবর্তিত হওয়ায় (১৯৯৫-৯৬ ভিত্তি বছরের স্থলে ২০০৫-২০০৬ ভিত্তি বছর) অর্থনীতির বিভিন্ন নির্দেশিকা কিছুটা উল্লম্ফন ঘটেছিল। ঠিক একইভাবে যদি এখন ভিত্তি বছর পুনরায় পরিবর্তন করা হয় বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতির বিভিন্ন নির্দেশকগুলোতেও বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটবে। প্রাক্তন বিরোধী দল বিএনপির শেষ বছর সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ছিল ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং আরএডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ সালে এডিপির আকার ছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা এবং আরএডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯১ শতাংশ।
×