ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বাণিজ্যমেলায় বৈশাখী আমেজ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রাম বাণিজ্যমেলায় বৈশাখী আমেজ

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শেষ হতে আর মাত্র দু’দিন বাকি। তার আগে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। বৈশাখী কেনাকাটায় গত এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত বাড়ছে ক্রেতা সমাগম। অন্যদিকে গৃহস্থালি পণ্যের স্টলেও রয়েছে প্রচুর ভিড়। শেষ মুহূর্তে নিজেদের পছন্দের পণ্য কিনতে সপরিবারে মেলায় ভিড় করছেন হাজারো নগরবাসী। বিশেষ করে বৈশাখকে কেন্দ্র করে এখন মেলায় তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা বেশি। তরুণ-তরুণী আর দর্শনার্থীর ভিড়ে এখন সেখানে ঢোকাই যেন দায়। অপরদিকে শেষ মুহূর্তে এসে প্রায় প্রতিটি স্টলে বিভিন্ন পণ্যের উপর চলছে বিশেষ ছাড়। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি পণ্য ফ্রি এমন নানা অফারে স্টলগুলোতে বেড়েছে বেচাকেনা। নিজের একটি পছন্দের পণ্যের সাথে আরও একটি পণ্য পেয়ে ক্রেতারাও অনেক খুশি। বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বাণিজ্যমেলাকে ঘিরে বাইরে যেমন ভিড়, তেমনি মেলা প্রাঙ্গণেও মানুষের প্রচ-­ভিড়। দর্শনার্থীর ভিড়ে পুরো মেলা ঘুরে দেখতে আগে যেখানে ঘণ্টা খানেক সময় লাগত এখন কয়েক ঘণ্টাতেও সম্ভব হচ্ছে না। বুধবার এটি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। বঙ্গাব্দের শেষদিন সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেক স্টল-প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। ক্রেতাদের মাঝেও ছিল পণ্য কেনার ধুম। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, দেশী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মেলায় অংশ নিয়েছে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে ছিল বাহারি পণ্যের সমাহার। স্টলগুলোর বেশির ভাগই গৃহস্থালি সামগ্রী, প্রসাধনী ও তৈরি পোশাক দিয়ে সাজানো। বিল্ডিং আইটেম, প্লাস্টিক সামগ্রী, আর্টিফিসিয়াল ফ্লাওয়ার, কার্পেট, হার্বাল, কসমেটিকস, হাউজহোল্ড আইটেম, লেদার, লেদার গুডস, পাটজাত পণ্য, খেলনা, স্পোর্টস গুডস, স্টেশনারি, স্যানিটারি, কনজ্যুমার গুডস, প্রসাধনী, তথ্য প্রযুক্তি, ওয়াটার ফিউরিফায়ার, জুয়েলারি, সিরামিকস, দেশী-বিদেশী বস্ত্র, ফুটওয়্যার, মেলামাইন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, আসবাবপত্র, হস্তশিল্প, এ্যালুমিনিয়ামসহ অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। তবে এবারের মেলায় ক্রেতাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি রয়েছে গৃহস্থালি ও প্রসাধনী পণ্যের দোকানগুলোতে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক, আসবাব ও খেলনা সামগ্রীর দোকানগুলোতেও ব্যস্ত সময় কাটছে বিক্রেতাদের। একই সঙ্গে প্লাস্টিক সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, জুয়েলারি, সিরামিকস প্রভৃতির স্টলেও দেখা গেছে জমজমাট ভাব। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় রয়েছে বৈশাখকে ঘিরে পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শাড়ির দোকানে। সেখানে তরুণ-তরুণীরা পছন্দের বৈশাখী কাপড় কিনতে ভিড় করছেন। স্টলগুলোর মধ্যে আবুল খায়ের গ্রুপ, ইউনিলিভার, বেক্সিমকো, এইচআরসি, বিআরবি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, বেস্ট বাই, সাব-জিরোর স্টলে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অন্যতম বড় আকর্ষণ থাই প্যাভেলিয়ন। আবুল খায়ের গ্রুপের স্টলে কথা হয় বিক্রয় প্রতিনিধি আমজাদের সাথে। তিনি বলেন, মেলার শুরুর দিকে বেচাকেনা কম ছিল। এখন যতই দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই দর্শানার্থীর ভিড় বাড়ছে। বেচাকেনাও খুব ভাল। এইচআরসি’র প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী ইলা আহমেদ সুইটি জানান, গত কয়েকদিনে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া উপস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাতিলের সহকারী ব্যবস্থাপক অতুল প্রসাদ সরকার জানান, মেলায় নতুন ডিজাইনের বেশকিছু পণ্য এনেছি। নতুন পণ্যে ক্রেতাদের সাড়া পেয়েছি প্রচুর। শেষ দিকে এখন অনেক বেচাকেনা বেড়েছে। এদিকে শেষ দিকে এসে অধিকাংশ স্টল ও প্যাভেলিয়নে পণ্যের উপর চলছে বিশেষ ছাড়। নানা অফার পেয়ে অনেকে পছন্দের পণ্যটি কিনে বাড়ি ফিরছেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সঙ্গে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ফ্রি দেয়া হছে। এবার ১টি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সঙ্গে ১২ থেকে ১৮টি পণ্য ফ্রি দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ১টি ব্লেন্ডার, ১টি রাইস কুকার, ৫টি স্টিলের হাঁড়ি, ১টি ইস্ত্রি, ১টি চামচ সেট ও ১টি ফ্লাস্কসহ অন্য গৃহস্থালিসামগ্রী। সানোয়ারা ড্রিংকস এন্ড বেভারেজ ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি সেলস ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান তালুকদার জানান, ১০০ টাকার আইসক্রিম কিনলে ক্রেতাকে একটি স্ক্যাচ কার্ড দেয়া হচ্ছে। এটি ঘষলেই পাওয়া যাবে স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স, ওয়াটার পট, স্কেলসহ নানা ধরনের পুরস্কার। শেষের চমক হিসেবে প্রতিটি স্ক্যাচ কার্ডের যমুনা ব্লক বাস্টার টিকিটসহ রয়েল ম্যাগনাম আইসক্রিম, কার্নিভাল ও বোলিংয়ের টিকিট রাখা হয়েছে। মেলা কমিটির কো-চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ জানান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে দেশী পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে প্রতিবছর আমরা মেলার আয়োজন করে আসছি। এবার মেলায় দর্শনার্থীদের খুব বেশি সাড়া পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। আশা করছি ভালভাবে আমরা মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারব। সার্বিক সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রায় চার লাখ বর্গফুটের এই মাঠে আয়োজিত মেলায় এবার ৩টি মেগা প্যাভিলিয়ন, ১২টি প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, ৮টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নসহ তিনটি আলাদা জোনে বিভক্ত হয়ে মোট ৪৫০টিরও অধিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। আগামী ১৬ এপ্রিল শেষ হবে আন্তর্জাতিক মেলার এবারের আয়োজন।
×