ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পহেলা বৈশাখেও দাবদাহ থাকবে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

পহেলা বৈশাখেও দাবদাহ থাকবে

নিখিল মানখিন ॥ তাপপ্রবাহের মধ্য দিয়েই আগমন ঘটছে গ্রীষ্মের। আজ বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখেও থাকবে দাবদাহ। গত এক সপ্তাহ ধরে খরতাপে পুড়ছে সারাদেশ। বুধবার ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা রাজধানীর ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভ্যাপসা গরম ও গুমোট আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ হয়ে পড়েছে উত্তপ্ত। বৃষ্টি ও পর্যাপ্ত ঠা-া বাতাস নেই। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও হ্রাস পেয়েছে। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাপমাত্রার কারণে রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। বুধবার জেনারেটরবিহীন অনেক হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগীদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বিদ্যুত বিভ্রাট। হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রাজধানীর মগবাজার মোড়ের কাছে ওয়াকফ ভবনের মূল গেটের সামনের ফুটপাথে ভাসমান চা দোকান চালান মোঃ বেলাল হোসেন (৩১)। নিষেধাজ্ঞা থাকায় পলিথিনের ছাউনি দিতে পারেননি তিনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়তে থাকে তার দোকানের ওপর। সূর্যের তীব্র রশ্মি ও ভ্যাপসা গরমের কারণে তার দোকানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কাস্টমাররা। কমে যায় চা-পান খাওয়ার মানুষের সংখ্যা। এক পর্যায়ে বেলা দেড়টায় কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান বন্ধ করে তিনি বাসায় চলে যান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এত বেশি গরম যে, চুলার কাছে থাকা যায় না। সারাক্ষণ চুলা জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এতে বিক্রির চেয়ে খরচ পড়ে বেশি। এমন আবহাওয়ায় গাছের ছায়ার নিচে সাজানো চা দোকানগুলো বেশি চলে বলে জানান মোঃ বেলাল হোসেন। গরমে পথচারীরা হাঁসফাঁস হলেও হাসি ফুটেছে ডাব বিক্রেতা মোঃ খলিল মিয়ার মুখে। মগবাজার রেড ক্রিসেন্ট গলির পথে রেল ক্রসিংয়ের ধারে একের পর এক ডাব বিক্রি যাচ্ছেন তিনি। একটু বেশি দামে বিক্রিতেও আপত্তি নেই ক্রেতাদের। মোঃ খলিল মিয়া (৪২) জানান, গত চার-পাঁচদিন ধরে ডাব বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। দৈনিক ৬০ থেকে ৭০টি ডাব বিক্রি হচ্ছে। ঠা-া দিনে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫টি ডাব বিক্রি হয়। কেউ কেউ বাসায় নিয়ে যায়। প্রতিটি ডাব অন্যদিনের তুলনায় ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন বলে জানান মোঃ খলিল মিয়া। মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের শ্রমিক আমজাদ হোসেন (৩৬)। বেলা দুটোর দিকে ওয়্যারলেস গলির এক দোকানে চা খাচ্ছেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে একটানা কাজ করতে পারছেন না। আধা ঘণ্টা রোদে থাকলেই শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। মাথা ঘুরতে থাকে। সকাল এগারোটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এমন অবস্থা বিরাজ করে বলে জানান আমজাদ হোসেন। এদিকে রাজধানীর বেশিরভাগ হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটলে রোগীসহ সকলকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালেও কয়েক দফা বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, বেলা তিনটার মধ্যে দু’বার বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। এক ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুত চলে আসে। অসহনীয় গরম সহ্য করে বিছানায় থাকতে হয় পঙ্গু রোগীদের। পাখা দিয়ে তেমন কাজ হয়নি। কেউ কেউ চার্জার ফ্যান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে জানান পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। প্রথম শ্রেণীর গুটিকয়েক বেসরকারী হাসপাতাল ছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের রোগীদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানা গেছে। রাজধানীতে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ॥ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বেড়েছে নতুন নতুন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। বুধবার আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ নতুন রোগী ভর্তি হয়। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে সাড়ে চার শ’ থেকে ৫শ’ নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইসিডিডিআরবির বৈজ্ঞানিক ডাঃ শাহাদত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, প্রতি বছরই এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। নতুন করে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা ও জীবাণুযুক্ত পানি পান করার কারণে এমনটি হতে পারে। তাপমাত্রা না কমলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান ডাঃ শাহাদত হোসেন। হিটস্ট্রোক ॥ বিশেষজ্ঞরা জানান, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই এ দেশের মানুষের হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের তাপমাত্রা এদেশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর ওপরে চলে গেলে তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যা সহ্য করতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় বিশেষ করে ‘ওর স্যালাইন’ খেতে হবে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। এতে আক্রান্তের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের আগে শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার বেশি থাকবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দেবে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তের চাপও কমে যাবে। এ সব লক্ষণ দেখা দিলেই ছায়াচ্ছন্ন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস ॥ আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এই বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী /বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু /মাঝারি সেঃ তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকায় ১৪৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১৪৩ মিমি, সিলেটে ২৯৬ মিমি, রাজশাহীতে ৮০ মিমি, রংপুরে ৮৮ মিমি, খুলনায় ৭২ মিমি ও বরিশালে ১৩২ মিলিমিটার হতে পারে। আর আগামী মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/ বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/ বজ্রঝড় হতে পারে। আর দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২-৩টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু/মাঝারি (৩৮-৪০)ক্ক সেঃ তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
×