ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর নয় পান্তা ইলিশ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

আর নয় পান্তা ইলিশ

এম শাহজাহান ॥ শেষ মুহূর্তে মাছের রাজা ইলিশের ওপর থেকে ক্রেতাদের চাপ কিছুটা কমেছে। সর্বজনীন পহেলা বৈশাখ উৎসবের খাবারের ম্যানু থেকেও অনেকে বাদ দিয়েছেন পান্তা-ইলিশ। বরং পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে অনেক পরিবার আজ বৃহস্পতিবার বৈশাখী খাবার তালিকায় সাদা ভাত, ডাল, ভর্তা-শাকসবজি, ডিম এবং গরু-মুরগির মাংস রেখেছেন। বাড়তি আয়োজনে থাকবে পিঠা-পায়েশ ও মুড়ি-মুড়কি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষে যে খাবার খাবেন, তাতে ইলিশ না রাখায় দেশের সাধারণ মানুষও পহেলা বৈশাখে এই মাছটি খেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ম্যানুতে ইলিশ না থাকার অর্থ হচ্ছে-জাতীয় সম্পদ এই মাছ রক্ষা ও জাটকা নিধন বন্ধে সরকারপ্রধান খুবই আন্তরিক। শুধু ব্যবসায়ীদের সৃষ্টি পান্তা-ইলিশের এই রেওয়াজে বর্তমান সরকারের কোন আগ্রহ নেই। তাই পহেলা বৈশাখে আর ইলিশ নয়। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ম্যানুতে ইলিশ না থাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পহেলা বৈশাখ উৎসবের ম্যানুতে পান্তা-ইলিশ আর রাখা হচ্ছে না। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলোতে ইলিশ মাছ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া ইলিশ মাছ রক্ষায় সোচ্চার হয়েছেন দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও। ইলিশ মাছ রক্ষায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যে নববর্ষে পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে ভর্তা-শাকসবিজসহ দেশীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে শেষ মূহূর্তে ইলিশের সরবরাহ বেশ বেড়েছে। তবে কমেছে এসব ইলিশের ক্রেতা। ক্রেতা কমার কথা স্বীকার করলেন, কাপ্তান বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রাশেদ মিয়া। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বরফচাপা সব ইলিশ আসছে বরিশাল, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে। মাছের সরবরাহ বাড়লেও শেষ মূহূর্তে ইলিশের ক্রেতার চাপ সেভাবে বাজারে নেই। বরং ক্রেতারা দেশীয় পুঁটি, টেংরা, চিংড়ি এবং টাকি মাছ কিনছেন। কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে রুই, কাতলা ও মৃগেল। এসব মাছের চাহিদাও বেড়েছে। তিনি বলেন, ইলিশ এমন এক মাছ যার, সারা বছর চাহিদা রয়েছে। দামও অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি। সেই বেশি দামের মাছ বৈশাখে আরও কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এখন এই মাছ। এদিকে, ফকিরাপুল বাজারে কথা হয় ইলিশের ক্রেতা শাহজাহানপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পান্তা-ইলিশ খাওয়ার জন্যই এই মাছটি কেনা। তবে ইলিশের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ আর থাকবে না। ওই বাজারের দেশীয় মাছের ক্রেতা জামাল মিয়া জানালেন, ইলিশ নয়, বৈশাখী ম্যানুতে থাকবে কৈ ও পুঁটি মাছ। এছাড়া মুরগির মাংস রান্না হবে। তিনি বলেন, গত বছর পান্তা-ইলিশের আয়োজন ছিল কিন্তু এবার বাদ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নববর্ষের খাবার ম্যানুতে ইলিশ রাখেননি। সরকারপ্রধান ইলিশ রক্ষায় এই উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশবাসীকে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন যে, ‘আসুন সবাই মিলে ইলিশ রক্ষা করি ও জাটকা নিধন বন্ধ করি’। তিনি তো আর সরাসরি নববর্ষে ইলিশ খাওয়ার পর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন না। তাই এটিই বার্তা। জাতীয় সম্পদ ও দেশের ঐতিহ্য ইলিশ মাছ রক্ষায় নববর্ষের পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। এদিকে, ইলিশ উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও দাম কিন্তু সেভাবে কমেনি। মালিবাগ বাজারে সাত শ’ থেকে আট শ’ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে পনের থেকে ১৬শ’ টাকা। এককেজি ওজন হলেই সেটি পেতে ক্রেতাকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। আর দুইকেজি ওজনের প্রতিপিস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। যেন দামের শেষ নেই!
×