ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈসাবি উৎসব

শুধু পাহাড় নয়, আনন্দের রং সমতলেও

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

শুধু পাহাড় নয়, আনন্দের রং সমতলেও

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ বৈসাবী এক সময় পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর জন্য হলেও এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বুধবার শুধু পার্বত্যাঞ্চলে নয়, আনন্দের রং ছড়িয়ে পড়ে সমতলেও। মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিচিকাতাল ও চাকমা সম্প্রদায়ের মূলবিজু এদিন উদযাপিত হয়। মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে রঙিন হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি। এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বর্ণাঢ্য সাংগ্রাইং র‌্যালি ও জলকেলি বা জলোৎসব। সকালে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ক্যং ফুল পূজার মধ্য দিয়ে সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা হয়। পানখাইয়া পাড়ায় মারমা উন্নয়ন সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত সাংগ্রাইং উৎসবের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স.ম. মাহবুব-উল-আলম। পরে শহরে বের হয় বর্ণ্যাঢ্য র‌্যালি। ঐতিহ্যবাহী জলকেলি বা জলোৎসবে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের দিকে পানি নিক্ষেপ করে উল্লাস প্রকাশ করে। মার্মা জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস এই পানি উৎসবের মধ্য দিয়ে অতীতের সকল দুঃখ-গ্লানি ও পাপ ধুয়ে-মুছে যাবে। তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে বেছে নেয় জীবন সঙ্গীকে। এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে নানা খেলাধুলা, পিঠা উৎসব, মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করা হয়। ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করে বিচিকাতাল। অতিথি আপ্যায়নের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় চলে গড়িয়া নৃত্য। চাকমা সম্প্রদায় মূল বিঝু আর পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপজ্যা পালন পালন করছে। উৎসব উপভোগ করতে বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক বৈসাবি এ বছর খাগড়াছড়ি এসেছে। প্রস্তুত চট্টগ্রামে ডিসি হিল-শিরীষতলা ॥ নববর্ষ বরণ করে নিতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলো। অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে বন্দরনগরীর দৃষ্টিনন্দন ডিসি হিল, সিআরবি শিরীষতলা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চারুকলা সদরঘাটসহ নানা স্পট। শুধু নগরীতেই নয়, নগরীর বাইরেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বটতলা- হাটখোলায় রয়েছে বৈশাখী মেলার আয়োজন। এদিকে, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নগরীর প্রতিটি বৈশাখী আয়োজন ঘিরে থাকছে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয়। চট্টগ্রামের অসংখ্য স্থানে বৈশাখী আয়োজন থাকলেও বরাবরের মতো এবারও প্রধান আকর্ষণ ডিসি হিল। এছাড়া বলী খেলাসহ নানা আয়োজনে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে সিআরবির শিরীষতলা। বুধবার বিকেলে বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় দুদিনের অনুষ্ঠানমালা। পরদিন নতুন বর্ষকে বরণ করার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে ডিসি হিলে বুধবার বিকেলে সম্মাননা প্রদান করা হয় আলো-ছায়ার সৃজক শিল্পী তপন ভট্টাচার্য, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শীলা মোমেন এবং কথা সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাশকে। অনুষ্ঠানে ছিল সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও যন্ত্রসঙ্গীতসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। প্রথম দিনের বর্ষ বিদায় আয়োজনের পর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ভোর ৬টায় বর্ষবরণের আয়োজন শুরু হবে ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় ভৈরবী রাগের মধ্য দিয়ে। এরপর বিকেল ৫টা পযন্ত চলবে একের পর এক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা। ডিসি হিলের আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণফোন।’ নগরীর সিআরবির শিরীষতলায় বর্ষবরণে নানা আয়োজন রেখেছে ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ‘। সেখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায়। থাকছে একক নৃত্য, দলীয় নৃত্য, কবিতা পাঠ, মাইজভান্ডারি গান ও লোক সঙ্গীত। এ মঞ্চে অংশগ্রহণ করছে মোট ৪৫টি সংগঠন। তাছাড়া সেখানে এবারও থাকছে শাহাবউদ্দিনের বলীখেলা। বিকেল আড়াইটায় শুরু হবে এ বলীখেলা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বরাবরই ঢল নামে সাধারণ মানুষের। বিগত কয়েক বছর ধরে সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফের পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে থাকে নানা আয়োজন। বসে বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন ধরনের খাবারেরর স্টল। বেশ কয়েকটি স্টলে বিনে পয়সায় সাধারণ আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে প্রশাসন। চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভোর সাড়ে ৬টায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে রক্তকরবীর পরিবেশনা দিয়ে। সেখান থেকে ঢাক ঢোল সহকারে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল ১১টায় থাকছে নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনা, প্রদীপ প্রজ্ব¡লন, আতশবাজি ও বঙ্গীয় কলতানের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদরই বেশ কয়ে উঠে চালুকলার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ বর্ষবরণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন হয় ব্যাপক। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দিনব্যাপী রয়েছে অনুষ্ঠানমালা। এরমধ্যে থাকছে সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় এক নম্বর গেট এলাকা থেকে বৈশাখী শোভাযাত্রা। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় জারুলতলায় মূল মঞ্চে শুরু হবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। চবির আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বলীখেলা, পুতুল নাচ, কাবাডি, বউছি খেলা, লাঠি খেলা। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্প হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আবদুল জব্বার, মনোরঞ্জন ঘোষাল এবং বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুর। এছাড়া চট্টগ্রাম শহীদ মিনার চত্বর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাওয়া স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নববর্ষের অনুষ্ঠান রয়েছে। এবার বাড়তি যুক্ত হয়েছে নগরী ও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ আয়োজন। রাঙ্গামাটিতে মূলবিজু পালিত ॥ অত্যন্ত জাঁকজমক পূর্ণ পরিবেশে বুধবার রাঙ্গামাটিতে মূল বিজু উৎসব পালিত হয়েছে। তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় দিন নানা আনুষ্ঠানিকতা মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। মূল বিজু উৎসবের দিন ভোর থেকেই বিভিন্ন উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ তাদের নিজস্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে তাদের আত্মীয়স্বজন ও মুরুব্বিদের প্রণাম করে। একের ঘরে অন্য গিয়ে নানা সুস্বাদুু নাস্তা ও ফলফলাদি খেয়ে আনন্দ করে। যত পারেন তত খান ॥ এবার বৈশাখের মেন্যু থেকে ইলিশ বাদ পড়ায় প্রাধান্য পাচ্ছে পান্তা আর চিংড়ি সেইসঙ্গে থাকছে বেগুন ভর্তা। ১৪২৩ সালকে বরণ করতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের হোটেল, মোটেল আর রেস্তরাঁ। যেখানে এতদিন থাই বাংলা আর চাইনিজের ছড়াছড়ি ছিল মাত্র একদিনের জন্যে হলেও পহেলা বৈশাখের দুপুরের আর রাতের খাবার চলবে বাংলা খাবারের পরিপূর্ণ। রেস্তরাঁগুলো প্রস্তুত থাকবে বাংলা খাবারের পরিপূর্ণতা নিয়ে। ‘মেতে উঠি উৎসবে আর বৈশাখে আনন্দে’ এমন আনন্দের বাণী নিয়ে বাংলা খাবারের তালিকা নিয়ে চট্টগ্রামের কয়েকটি রেস্তরাঁয় পহেলা বৈশাখের দুপুর আর রাতের খাবারের মেন্যু করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন বুফে রেস্তরাঁগুলোতে ‘যত পারেন তত খান’ এমন আয়োজন সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলবে পান্তা আর গলদা চিংড়ির আয়োজন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলবে বাংলা খাবারের চমকপ্রদ আয়োজন।
×