ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোট সরকারের ৩ সাবেক মন্ত্রীসহ ৮ জনের আবেদন খারিজ ও নিষ্পত্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

জোট সরকারের ৩ সাবেক মন্ত্রীসহ ৮ জনের আবেদন খারিজ ও নিষ্পত্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির পৃথক মামলায় খালাসের রায় বাতিল ও হাইকোর্টে পুনঃশুনানির রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক তিন মন্ত্রীসহ আটজনের করা আবেদন খারিজ ও নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এই আটজনের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা, ওই সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমান, তখনকার বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরউদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জরুল আহসান মুন্সীর রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। আর সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর রিভিউ আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণসহ আপীল বিভাগ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন। রিভিউ আবেদন খারিজের পর এখন এ আটজনের দুর্নীতির মামলা হাইকোর্টে পুনরায় শুনানি করতে হবে। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোঃ খুরশিদ আলম খান। নাজমুল হুদা দম্পতি ॥ ২০০৭ সালের ২১ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মোঃ শরিফুল ইসলাম ধানম-ি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘খবরের অন্তরালে’র জন্য মীর জাহের হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদা। ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট বিশেষ জজ আদালত দুর্নীতির অভিযোগে নাজমুল হুদাকে সাত বছরের কারাদ- এবং আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে তিন বছরের কারাদ- দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদা ও সিগমা হুদা আপীল করলে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন। পরে দুদক আপীল করলে ২০১৪ সালের ০১ ডিসেম্বর খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন আপীল বিভাগ। আমানউল্লাহ দম্পত্তি ॥ সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। ওই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানকে ১৩ বছরের কারাদ- ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদ- দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপীল করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপীল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেন। পরে দুদক আপীল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল ঘোষণা করে আপীল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেয়া হয়। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ॥ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক শাহরিয়ার চৌধুরী ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী টুকুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। কমিশনের উপ-পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছরের ২৮ জুন মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ে টুকুকে নয় বছরের কারাদ- দেন। তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৫ জুন তাকে খালাস দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপীল করলে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন আপীল বিভাগ। মীর নাসির ও ছেলে ॥ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ২০০৭ সালের ৪ জুলাই মীর নাসিরকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন বিশেষ আদালত। এ কাজে বাবাকে সহযোগিতা করার দায়ে ছেলে মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। পরে ২০১০ সালের আগস্টে হাইকোর্ট এই পিতা-পুত্রকে খালাস দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক পৃথক পৃথক আপীল করলে ২০১৪ সালের ৪ জুলাই খালাসের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন আপীল বিভাগ। মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী ॥ ২০০৭ সালে কুমিল্লার দেবীদ্বারের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীকে বিশেষ জজ আদালত ১৩ বছরের কারাদ-, ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদ- দেন। মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, তার স্ত্রী মাজেদা আহসান, ছেলে রিজওয়ানুল আহসান ও রিজভিউল আহসানের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৯ টাকার সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জনে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় মামলাটিতে। পরে হাইকোর্টে আপীলের পর খালাস পান মুন্সী। দুদক এ খালাসের বিরুদ্ধে আপীল করলে আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন। এ আটজনই আপীল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন। বুধবার আপীল বিভাগ টুকুর আবেদনের নিষ্পত্তি এবং বাকিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তাদের মামলা নতুন করে হাইকোর্টে শুনানি করতে হবে।
×