ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে ১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বটমূলে বোমা হামলার

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে ১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বটমূলে বোমা হামলার

আরাফাত মুন্না ॥ দীর্ঘ ১৫ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার। দুই বছর আগে বিচারিক আদালতে রায় হলেও উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে হত্যা মামলাটি। অন্যদিকে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি হবে কবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। সুপ্রীমকোর্টের সূত্র অনুযায়ী, রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- ও যাবজীবনপ্রাপ্ত আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে অপেক্ষমাণ রয়েছে। আগামী মাসে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারিক আদালতের রায় ও মামলার নথিপত্র ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছার পর রায়ের পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। অন্যদিকে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটির কার্যক্রম ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে চলছে। এ মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটিতে নয়জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদ- প্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আটজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্তদেরও একই অর্থদ- দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের অতিরিক্ত এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে। এ মামলায় ১৪ জন আসামির মধ্যে পাঁচজন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। কারাগারে থাকা আসমিরা হলেন- মুফতি আবদুল হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আকবর হোসাইন। পলাতক আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আলোচিত এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বার বার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। পর্যায়ক্রমে থানা, ডিবি ও সিআইডি পুলিশে মামলার তদন্ত যায়। মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মোঃ ইউসুফ ২০০৮ সালের ৩০ নবেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথকভাবে মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়।
×