ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সারাদেশ। বুধবার রাত ৭টা ৫৬ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৯। যা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেন। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ঢাকা থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমার থেকে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি। যার মাত্রা ছিল ৭.২। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) থেকে প্রথমে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে এর মাত্রা ৬.৯ বলে নিশ্চিত করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের মাউলাইক শহরের ৭৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। স্থানটি বাংলাদেশ-ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন। এদিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ভূমিকম্পে দুলতে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ভবন, অফিস, বাসবাড়ি থেকে মানুষজন ভয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। এ সময় একে অপরের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। তবে মোবাইল নেটওয়ার্কে বিঘœ ঘটায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একে অপরকে খোঁজখবর নেয়ার জন্য মোবাইলে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্ক কাজ না করায় তারা তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজখবর নিতে পারেনি। ভূমিকম্পে দুলতে থাকায় অনেক ভবন থেকে মানুষ আতঙ্কে নেমে এলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরি কেন্দ্র পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুময়ান আকতার বলেন, ঢাকা থেকে ৪৬৫ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমার থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে। এটি মূলত ইন্ডিয়ার প্লেট বর্মা প্লেটের সংযোগ স্থল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। উৎপত্তি স্থলের উপরিভাগ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার গভীর থেকে এটি উৎপত্তি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, যে এলাকা থেকে ভূমিকম্পের বুৎপত্তি হয়েছে সেটা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা বলেই পরিচিত। তবে দূরত্ব ও উপত্তিস্থলের গভীরতার কারণে দেশে এর প্রভাব অনেক কম পড়েছে বলে উল্লেখ করেন। এদিকে ঘন ঘন ভূমিকম্পকে দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। বিশেষ করে ভারত বর্ম প্লেটের সংযোগ স্থলে এর অবস্থান থাকা দেশ বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতের মনিপুরের ইম্ফল থেকে বড় ভূমিকম্পে সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দেশে বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কে অনেকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, গত এপ্রিলের ৫ তারিখেও দেশে মৃদু ভূমিকম্পে বিভিন্ন এলাকায় কম্পন সৃষ্টি হয়। ওইদিন বেলা ১টা ৪২ মিনিটের দিকে এই কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৬। যা বিশেষজ্ঞরা মৃদু ভূমিকম্প বলে অভিহিত করেছেন। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব মতে, ওই ভূমিকম্পটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে উৎপত্তি হয়। যার অবস্থান ছিল ঢাকা থেকে ২১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাখিপুরে। কেন্দ্রস্থলের ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীর থেকে এটির উৎপত্তি। তবে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ভূমিকম্পের সময় দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে না এসে ভবনের পিলার বা এ ধরনের কোন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়া অনেক নিরাপদ। স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে সিলেটে ভূকম্পন অনুভূত হয়। কয়েক মিনিট স্থায়ী ভূকম্পনে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এ যাবতকালের মধ্যে এই ভূমিকম্পন সবচেয়ে শক্তিশালী বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গামাটি থেকে জানান, পার্বত্য জেলায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটের সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭। এর উৎপত্তিস্থল পার্শ¦বর্তী দেশ মিয়ানমারে। দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী এই ভূমিকম্পের সময় রাঙ্গামাটি শহরের লোকজন চিৎকার দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। আতঙ্কে অনেকে ঘর ছেড়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি এত বেশি মাত্রার ভূমিকম্প এখানে অনুভূত হয়নি বিধায় শহরবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিজস্ব সংবাদদাতা জয়পুরহাট থেকে জানান, জেলার সর্বত্রই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রায় ৫ সেকেন্ড স্থায়ী এই ভূমিকম্পে কোন ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া না গেলেও আতঙ্কিত মানুষজন বাড়ি থেকে খোলা জায়গায় বেরিয়ে পড়ে। হাসপাতাল, ফায়ারব্রিগেড সূত্রে জানা যায়, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
×